ফুরাত নদীর বর্তমান অবস্থা

ফোরাত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী যাকে বলা হয়ে থাকে ফুরাত। এই নদীটি ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। আজকে আমরা এই ফুরাত নদীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানবো। এই নদীটি তুরস্ক থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তুরস্ক থেকে উৎপত্তি হলেও মূলত এই নদীটি সিরিয়া এবং ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ইতিহাস বলে, এই ফোরাত এবং দোজলা পানি ব্যবহার করে প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা গুলি আধুনিক বিকাশ লাভ করেছিল। মেসোপথেমিয়া শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ যার অর্থ হল দুই নদীর মধ্যবর্তী বাসভূমি।

ফুরাত নদী কোথায় অবস্থিত ও ফুরাত নদীর বর্তমান অবস্থা

ফুরাত নদীটি তুরস্ক থেকে সিরিয়ার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে ইরাকে পর্যন্ত শেষ হয়েছে। এই নদীটির দৈর্ঘ্য ২৭০০ কিলোমিটার। তুরস্কের মুরাত নদী এবং খারাসু নদী এই দুই নদীর পানি মিলিত হয়ে ফোরাত নদী উৎপত্তি হয়েছে। এই নদীটির ৯০% পানির উৎস।তুরস্কের আবু কামাল ইরাকের আল কায়েম, হাদিথা, রামাদি, ফালুজা, নাজাফ, নাসিরিয়া, কুফা,বিরেচিক ,সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশ, দেইর আজ জুর, মাদায়েন, শহর গুলো মূলত এই ফোরাত নদীর উপরেই নির্ভরশীল। এ সব শহরগুলো পানির চাহিদা যোগান দেয় ফুরাত নদী। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন, বিভিন্ন সময়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাক অপরিকল্পিত বাধ নির্মাণ করার কারনে ১৯৯৯ সালের পরে ফোরাত নদীর পানি আশংকাজনক হারে কমে যেতে শুরু করেছে। ফোরাত নদীর পানি খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে, Global water forum এর গবেষণায় এই তথ্য এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে এই নদী খুব শিঘ্রীই বিলুপ্তি হয়ে যাবে।

ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের খনি বের হবে

ভৈাগলিক রাজনীতির কারণে ফুরাত যেমন আলোচনার কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে তেমনি ধর্মীয় কারণেও ফোরাতের নাম মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসুলমানরা মনেপ্রানে বিশ্বাস করে,ইসলামের হাদীসে বলা আসে, ফুরাত নদীর পানি শুকিয়ে স্বর্নের পাহাড় আবিষ্কৃত হবে। আসলে কি তাই? ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় প্রকাশ পাওয়া সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটি আসলে আজগুরি মিথ্যা কথা। আবার বর্তমানে অনলাইনে কিছু নামদামী ইসলামী গবেষক বলতে শুরু করেছেন, স্বর্নের পাহাড় নাকি ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে? তারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্টানে এসব বিভ্রান্তি,ভুয়া কথা বলে বেড়াচ্ছে। যাদের মধ্যে শাইখ ইমরান নজর, মুফতি ইব্রাহিম,মিজানুর রহমান আজাহারী ও তার অনুসারীরা অন্যতম। বাস্তব সত্য হচ্ছে ,যদিও বিশ্বের বড় বড় ইতিহাসবিদ,প্রত্নতাত্বিকবিদরা কেউ এখন পর্যন্ত এরকম উদ্ভট ব্যাখ্যা করেননি। তারা এসব ফালতু কথাবার্থা একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মতে,ফোরাত নদীর পানি শুকিয়ে গেলেও সেখানে স্বর্ণের খনি বের হওয়ার কনো সম্ভাবনা নেই। তাদের কি নবী মোহাম্মদের ভবিষ্যৎ বানী মিথ্যা ? চলুন নবী মোহাম্মদ ফোরাত নদী নিয়ে কি বলে গেছেন হাদিসে তা জেনে নিই।

ফুরাত নদী নিয়ে হাদিস

ফুরাত নদী নিয়ে ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা.) খুবই আজব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এক হাদিসে রাসুল মোহাম্মদ (সা.) বলেন, অচিরেই (একটা সময় এমন আসবে) ফোরাত নদীতে স্বর্ণের খনি উম্মোচিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সে সময় বেঁচে থাকবে সে যেন তার থেকে কোনো অংশ গ্রহণ না করে। (বুখারি হাদিস : ৭১১৯)

                                                নীরবতা+নিয়ে+উক্তি

মুসলিম শরিফের বর্ণনায় বলা হয়েছে,যতক্ষন না ‘কিয়ামত সংঘটিত হবে না ততক্ষন ফুরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে না। এই স্বর্নের পাহাড় আবিস্কার হওয়ার পরে কেয়ামত ঘটবে। মানুষ তা নিয়ে কঠিন যুদ্ধে জড়াবে এবং প্রত্যেক দলের শতকরা ৯৯ জন মারা পড়বে। তাদের প্রত্যেকের কামনা থাকবে হায়! বেঁচে যাওয়া মানুষটি যদি আমিই হতাম! (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৭৪৫৪)
এই হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি বলেন, ‘ফোরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় উম্মোচিত হবে’—এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক. নদীটির জায়গায় একটি পাহাড় উঠবে, যার ভেতর স্বর্ণের খনি থাকবে।
দুই. নদীতে স্বর্ণের খনি থাকবে। তবে পাহাড়ের সঙ্গে তুলনার উদ্দেশ্য হলো স্বর্ণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।’ (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ২২৮) ।

ফুরাত নদীর কোথায় স্বর্নের পাহাড় ভেসে ওঠবে

ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা অনেকে বিশ্বাস করেন,এ বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ২০২৩ সালে সিরিয়ার দেইর-আজ-জুর (Deir-ez-zur) প্রদেশের কিরকিসিয়া নামক ঐতিহাসিক এলাকার নিকটবর্তী স্থানেই এই স্বর্নের পাহাড় ভেসে ওঠবে। বিগত ১ যুগ আগেই ২০১৯ সালে সিরিয়ার দেইর আজ জুর প্রাদেশিক সরকার এই এলাকার শুষ্ক মৌসুমে ঠিকমত কৃষিজমিতে ও শহরে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হালাবিয়্যাহ বাধ (Halabiya Dam) নির্মাণ করার কাজ শুরু করে, যার কাজ ২০১২ সালে এসে শেষ হয়।যার ফলে দেইর আল জুর প্রদেশে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি সাথে হাদীসের বর্ননার পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে বলে মুসুলমানরা নানা গল্পগুজব রটাচ্ছে । কিন্তু এখন তো ২০২৩ সাল প্রায় অর্ধেক চলে গিয়েছে। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে সেটা হচ্ছে,স্বর্নের পাহাড় কি াাদো ভেসে উঠবে ? তাহলে কি নবী মোহাম্মদের কথা মিথ্যা হয়ে যাবে ?

<

ফুরাত নদীর স্বর্নের পাহাড় নিয়ে যুদ্ধ

নবী মোহাম্মদ নিজের মুখে বলে গেছেন এই স্বর্নের পাহাড় নিয়ে বিশাল যুদ্ধ হবে ? কিন্তু যুদ্ধ হবে কার সাথে ? চলুন আরেকটি হাদিসের সাথে জেনে নিই,হযরত উবাই বিন কা’ব (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) কে আমি বলতে শুনেছি, “অচিরেই ফুরাত-নদীতে স্বর্ণের ভান্ডার প্রকাশ পাবে, শুনা মাত্রই সবাই সেখানে চলে যাবে। স্হানীয় লোকেরা বলবে, ব্যবস্থা না নিলে সবটুকু স্বর্ণ-ই মানুষ দখল করে নিয়ে যাবে। ফলে তারাও সেখানে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। ৯৯% যুদ্ধা-ই সেখানে নিহত হয়ে যাবে।”
(সহীহ মুসলিম : ৭৪৫৮) । অর্থাৎ নবী মোহাম্মদ বলেছিলেন,ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় কে দখল করার জন্য তুরস্ক ও আমরিকান জোটের দেইর আজ জুরের নিকটবর্তী কিরকিসিয়া নামক স্থানে আসবে, তখন প্রথম সুফিয়ানী ও তাদের মধ্যে মারাত্মক যুদ্ধ বাধবে। এই যুদ্ধে ১ লক্ষ বা, ১ লক্ষ ৬০ হাজার লোক নিহত হবে। কিন্তু কেউ এটি দখল করতে পারবে না।
দক্ষিণ সিরিয়া ওয়াদিউল ইয়াবেস (Daraa শহর থেকে) বানু কাল্ব গোত্রের প্রথম সুফিয়ানীর উত্থান ঘটবে, সে সিরিয়া থেকে কালো পতাকাবাহী আসহাব জাতি (Islamic state) এবং হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতি (Tuareg Militant) সম্প্রদায়কে পরাজিত করে তাদেরকে হত্যা করা হবে। তারপর তুরস্ক ও আমরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে সিরিয়াতে শিয়া নুসাইরী ও আলাবী সম্প্রদায় ব্যপকভাবে হামলার মুখে পরবে এবং একইসাথে ইরাক ও সিরিয়াতে পুনরায় কালো পতাকাবাহী ইসলামী জঙ্গি(Islamic state) এর ব্যপকভাবে উত্থান ঘটবে। খোরাসানের কালো পতাকাবাহী দল ইসলামিক জঙ্গি দল আই এস উত্থানের ৬ বছর পর মক্কা নগরীতে ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমন হবে।

ফুরাত নদী নিয়ে কাফেরদের বিরাট যুদ্ধ বাধুক বা স্বর্নের খনি আবিস্কার হোক এসব আজগুবি কথাবার্তা বাদ দিই। কিন্তু বাস্তব সত্য এই যে,ফুরাত নদীর বর্তমান অবস্থা খুব ভয়াবহ। এই নদীর পানি শুকিয়ে গেলে তুরস্ক,সিরিয়া ও ইরাকের অনেক শহরে বিরাট পানি সংকট দেখা দিবে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আশা করি ফুরাত নদীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত সত্য জেনে গেছেন। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা চোখে দেখবেন। যদি ফুরাত নদী সম্পর্কে কনো কিছু জানার থাকে বা ভুল চোখে পড়ে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। আজকে এ পর্যন্ত। মন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন