ফ্রীল্যান্সিং কি এবং কিভাবে করবো। আপনি কি ফ্রীল্যান্সিং করতে চান তাহলে আজকের এই পোস্ট টি পড়া আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের বর্তমান সময় প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে আমরা উন্নতির চরম শিখরে আসতে পারছি। আর এর প্রসারতার অন্যতম বিষয় আমরা তথ্যপ্রযুক্তির অনেক উন্নতি সাধন করেছি। বর্তমান যুগ অনলাইন যুগ, এখন বেশি ভাগ কাজই অনলাইনের উপর নির্ভরশীল। এখন অনালাইনকে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। অনলাইন ছাড়া আমাদের প্রায় অচল বলা হয়ে থাকে। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসে তথ্য আদান প্রদান সহ বিভিন্ন যাবতীয় কাজ করে আসছি। আর এই অনলাইনের বিশেষ একটি উপকার হচ্ছে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন। এখন মানুষ অনালাইনের সাহায্যে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে। আর এই ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমান সময় এই পেশাটি অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এর প্রধান কারন হয়ে থাকে আমাদের দেশে এখন অধিকাংশ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে বাংলাদেশ সরকার চাকরি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আর এখন চাকরি বাজারে প্রায় বিশেয় করে চরম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এই প্রতিযোগিতায় অনেক শিক্ষিত যুবক যুবতী চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তাদের বেশিভাগই ঘরে বসে অনলাইনে সাহায্যে অর্থ উপার্জন করার পথ বেছে নিয়েছে। তারা অনেকেই  ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে বেছে নিচ্ছে। এদের অনেকেই আছে এখনো জানে না  ফ্রিল্যান্সিং কি ও কিভাবে করবো এই ফ্রিল্যান্সিং। আর তাদের জন্য আজকের আমারা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ফ্রিল্যান্সিং কি তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল:

ফ্রিল্যান্সিং কি:

ফ্রিল্যান্সিং হলো স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। কোন একটি প্রতিষ্ঠানের উপর না থেকে স্বাধীন ভাবে কাজ করা-কে ফ্রিল্যান্সিং বলে। ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসে তাদের কাজ করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনলাইনে হতে টাকা উপার্জন করে থাকে। সাধারনত ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে কাজে চুক্তি করে সেই কাজ শেষ করে অনালাইনের মাধ্যমে আয় করাকে সংক্ষেপে ফ্রিল্যান্সিং বলে। আপনি হয়তো ফ্রিল্যান্সিং বিষয় টা নিয়ে এখনো পরিস্কার হতে পারছেন না। আমি এই বিষয় কে আর ও সহজ ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্ঠা করছি। সাধারনত একজন ব্যাক্তি লেখাপড়া শেষ করার পর কোন কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার জন্য তার সিভি সাবমিট করে। সিভি লেখার পর ও ইন্টারভিউ শেষে কোম্পানি তাকে যোগ্য মনে করলে চাকরি নিয়োগ ক ের। তখন সেই ব্যাক্তি কোম্পানিতে সকাল ৯ টা ঘটিকা থেকে বিকাল ৫ টা ঘটিকা পর্যন্ত নিয়মিত রুটিন কাজকর্ম করার মাধ্যমে মাসিক এক নির্দিষ্ট বেতন পায়। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ঠিক  একই ভাবে একই ভাবে একজন ব্যাক্তি যে বিষয়ে অভিঙ্গতা রয়েছে বা যে বিষয়ে সে ভালোভাবে কাজ করতে পারে,সে বিষয়ে কাজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের জন্য আবেদন করে, তখন ক্লায়েন্ট তার কাজের যোগ্যতা যাচাই করে উপযুক্ত মনে করলে তাকে কাজটি করে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করে। এই ফ্রিল্যান্সিংকে একধরনের চাকরি বলা হয়ে থাকে। তবে একটি নরমাল চাকরি আর ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নরমাল যে কোন চাকরি প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে হয়। তা না হলে আপনার চাকরি ধরে রাখতে পারবেন না। সেই সাথে কাজ ঠিকমতন করতে না পারলে মাঝে মধ্যে বসের বকুনি খেতে হয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং নিয়মের ক্ষেত্রে এ ধরনের ধরা বাধা কোন নিয়ম বেধে দেওয়া নেই। এখানে আপনি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন। আপনার যখন মন চাইবে তখন কাজ করতে পারবেন,এবং মন না চাইলে কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবেন। এর জন্য মূলত ফ্রিল্যান্সিংকে মুক্ত পেশা বলা হয় এবং ফ্রিল্যান্সিং করতে বেশি ভাগ লোক পছন্দ করে। তবে ফ্রিল্যান্সিং এর পেশায় আপনাকে সফল হতে হলে আপনি খুব বেশি মুক্ত ভাবে কাজ করতে পারবেন না। কারণ আপনি স্বাধীনভাবে বা যখন খুসি তখন কাজ করার মনোভাব নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করলে আপনি কখনও একজন ভালোমানের ফ্রিল্যান্সিং হতে পারবেন না। আপনি ফ্রিল্যান্সিং যত বেশি সময় ব্যয় করবেন এবং ক্লায়েন্টদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, আপনি তত বেশি কাজ পাবেন এবং তত বেশি আয় করতে পারবেন। সেই সাথে অতটা স্বাধীন ভাবে কাজ না করে একটি সাধারন চাকরির মতন টাইম মেনটেন করে কাজ করলে ক্লায়েন্ট আপনাকে নিয়ে তত বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। আরও সহজ করে বলতে গেলে নিজের মেধা ও অভীঙ্গতাকে কাজে লাগিয়ে অনলােইনে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে কাজ করে টাকা আয় করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে।

ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি কাজ করতে হয়:

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, সেটা নির্ভর করে কোম্পানি বা ব্যাক্তির প্রয়োজন। এবং আপনার স্কিলের উপর। বর্তমানে সবথেকে যে কাজগুলো তে অনেক চাহিদা থাকে সেই কাজগুলি হলো:

* গ্রাফিক্স ডিজাইন।
* ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট।

* অ্যাপ ডেভলপমেন্ট।

* সার্চ ইন্জিন অপনিমাইজেশন।

<

* কন্টেন্ট রাইটিং।

* ভিডিও এডিটিং।

* ওয়েব সাইট ডিজাইন।

* আর্টিকেল রাইটিং।

* ডাটা এন্ট্রি।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো:

ফ্রিল্যান্সিং এ পারর্দশী হওয়ার জন্য আপনার নির্দিষ্ট কিছু স্কিল থাকা চাই, কাজ ভালো হলে তবেই আপনি কোম্পানিগুলো আপনাকে কাজ দেবে। তবে বেশিভাগ কাজই অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে থকে। তাই আপনাকে সেই সমস্ত কাজে পারর্দশী হতে হবে যেগুলির মার্কেটে ডিমান্ড রয়েছে। যদিও আপনার সেই স্কিল না জানা থাকে সেক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই, আপনি খুব অল্পসময়ে সেগুলো শিখে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন। আপনি সাধারন গুগোল বা ইউটিউবে সার্চ করে এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন, অথবা অনলাইনে এখন ঘরে বসে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন কোর্স করা হয়ে থাকে। সেগুলো করে নিয়ে সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল রয়েছে আপনি ইচ্ছে মতন শিখে নিতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ কীভাবে পাবো:

স্কিল ডেভলপ করার পর থেকে সবথেকে প্রয়োজন কাজ পাওয়া। আপনি লোকাল বিভিন্ন কোম্পনি গুলোতে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ খুঁজে দেখতে পারবেন। কিন্তু সবথেকে ভালো অনলাইন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট রয়েছে সেগুলোতে অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিয়ে সার্ভিস প্রোভাইড করা। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে সারাবিশ্বের লোক নিজেদের প্রয়োজন মত ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ করেন, এর ফলে আপনার কাজ পাওয়ার সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে আপনি যত ভালো সার্ভিসগুলি প্রোভাইড করবেন তার উপর আপনার রেটিং বা জনপ্রিয়তা নির্ভর করবে। রেটিং ভালো থাকলে রেটিং ভালো থাকলে বেশি করে কাজ পাবেন আর খারাপ থাকলে পাবেন না। প্রতিযোগিতা সব ক্ষেত্রেই রয়েছে, তাই যেই বিষয়ে আপনি পারর্দশী সেই বিষয়ে আপনি কাজ করুন। নিজের স্কিল ঠিক মতন ডেভলপ না করে কাজ করতে গেলে খারাপ রেটিং পাবার সম্ভাবনা খুবই বেশি যা পরবর্তীতে আপনার কাজ না পাওয়ার কারন হতে পারে। আগে যেকোন বিষয়ে দক্ষ হতে হবে তারপর অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে একটু একটু করে সময় দিতে হবে। ঘাটাঘাটি করতে হবে। যারা অনেক দিন কাজ করে থাকে তাদের প্রোফাইল দেখতে হবে। তাদের প্রোফাইল দেখে তাদের প্রোফাইলের মতন নিজের প্রোফাইল সাজাতে হবে। আর একটি জিনিস আপনাকে একটু ভালোভাবে জানতে হবে সেটি হল ইংরেজি পড়তে ও বলতে পারা। হুম এটা অনেক গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস ফ্রীল্যান্সিং করতে গেলে। কেননা এই সাইটগুলোতে বেশিভাগই বিভিন্ন দেশের মানুষ থেকে থাকে তাই তাদের সাথে আপনি আন্তর্জাতিক ভাষা ব্যবহার করে কথা বলতে পারেন। সেখানে কাজের পোস্ট দেওয়া হয়ে থাকে  সেগুলো সবই ইংরেজি ভাষায় সেগুলো পড়তে হবে এবং বুঝতে হবে তারা কি  কাজ চেয়েছে। আর একটা কথা হচ্ছে মানুষ যা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে এক্সপার্ট হয় কউ কিন্তু প্রথম দিনে সফল হয় না। আপনি সফল হতে গেলে দিনের পর দিন আপনাকে লেগে থাকতে হবে। ধৈর্য ধরে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে মন মতন কাজ পাওয়ার জন্য। আপনার যদি অনেক ভালো স্কিল থাকে তাহলে আপনার কাজ পেতে সময় লাগবে না। ফ্রিল্যান্সিং এর সাইট গুলো অনেক ভালো যেগুলো বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল:

* Up work

* Guru

* Freelancer

* Truelancer

* Fiverr

* Designhill

* Toptal

* Dribble

* 99design

এ সাইট গুলো অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে থাকে। এবং ‍একজন ভালো ফ্রিল্যান্সারের এগুলো সাইটে কাজ পেতে সময় লাগে না।

ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা কিভাবে পাবো?

আশা করি আপনি কাজ পাবেন, আর যদি কাজ না পান তাহলে হতাশ হবেন না। নতুন কিছু শেখার জন্য চেষ্ঠা করুন নিয়মিত। কাজ পান নাই বলে বসে থাকে নিজের সময় নষ্ঠ করবেন না। আর কাজ পেলে কাজ কমপ্লিট করার পর আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে। সেখান থেকে আপনি ব্যাংকে ট্রান্সেফার করতে পারবেন। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনি মানিবুক বা  এমন কোন সিস্টেমে টাকা আনতে পারবেন। কিভাবে টাকা হাতে পাবেন তা নিয়ে চিন্তা করবেন না, এই সব মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনি কাজ জমা দিলে অবশ্যই টাকা পেয়ে যাবেন। কাজ কমপ্লিট করার পর ক্লায়েন্ট রিলিজ দেওয়ার পর আপনার মার্কেটপ্লেসের একাউন্টে জমা হবে সেখান থেকে খুব সহজেই অনেক গুলো পথ রয়েছে টাকা হাতে পাবার আপনি যেকোন একটি পথ অনুসরণ করে টাকা হাতে পেয়ে যাবেন। আর তাছাড়া যদি আপানার বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট ডেবিট কার্ড থাকে তাহলে আপনি সেই কার্ডের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সেফার করে এটিএম বুথের মাধ্যমে তুলে নিতে পারবেন।

Related Posts