বদ নজর থেকে বাচার দোয়া, উপায়

আজকের পোস্টে আমরা খারাপ নজর বা বদ নজর থেকে বাচার দোয়া নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। খারাপ নজর কি, এ থেকে বাঁচার উপায় কি, ইসলাম কি বলে, ইসলামিক দোয়া নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে। তো শুরু করা যাক।

খারাপ বা বদ নজর কি?

খারাপ বা বদ নজর কি, বদ নজর থেকে বাচার দোয়া

আমরা প্রায়ই খারাপ নজর বা বদ নজর কথাটা শুনে থাকে। তো বদনজর থেকে বাঁচার আগে এই বদনজর জিনিসটা আসলে কি সেটা আমাদের বুঝতে হবে। কোনো মানুষ, জিন বা শয়তানের দ্বারা কোনো বস্তু বা কোনো কিছুর উপর হিংসাত্মক দৃষ্টির দ্বারা উক্ত ব্যক্তির ক্ষতি বা সমস্যা হওয়াকে খারাপ নজর বলে।

এছাড়াও অনেক সময় কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহর নাম না নিয়ে প্রশংসা করা হলেও নজর লেগে যেতে পারে। খারাপ নজরকে বদ নজর, কুনজর, কুদৃষ্টি ও খারাপ দৃষ্টিও বলা হয়। বর্তমান কালে খারাপ নজর কি আসলেই সত্যি একটি জিনিস নাকি তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। খারাপ নজর সত্যিই কিছু একটা নাকি তা নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে।

খারাপ বদ নজর কি সত্য?

খারাপ নজর ও তার কুফল অনেকটাই সত্য। খারাপ নজরের উপর ভিত্তি করে কুরআন ও হাদিসে নানা ধরণের আয়াত পাওয়া যায়।

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয় | কি দোয়া পড়তে হয় ?

পবিত্র কুরআন মজিদে এক জায়গায় এই খারাপ নজরকে ইঙ্গিত করে একটি আয়াত নাজিল হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কাফেররা যখন উপদেশবাণী শোনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, এ তো এক পাগল।’ (সূরা কলম, আয়াত – ৫১)

বিভিন্ন হাদিসে অনেকবার এই খারাপ নজর নিয়ে উল্লেখ রয়েছে।

আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত : রাসুল(সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বদ নজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা নজরের প্রভাব সত্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৮)

আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত:
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন, ‘বদনজর সত্য’ (বুখারি : ১০/২১৩)

জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত:
নবি (স.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে তাকুদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে।’ (বুখারী)

অর্থাৎ একজনের কুনজরের মাধ্যমে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তো এ বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। কাউকে নজর দিবেন না ও কুনজরের শিকার হলে তাড়াতাড়ি তা প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে।

অন্য কাউকে বদ নজর না দেওয়া

অন্য কাউকে বদ নজর না দেওয়া, বদ নজর থেকে বাচার দোয়া

আমরা তো জানিই আপনি যখন কারো দিকে হিংসার সাথে তাকাবেন তখন তার বদনজর লেগে যেতে পারে। কিন্তু এছাড়াও বদনজর লাগতে পারে। আপনি যদি কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহর নাম না নিতে প্রশংসা করেন বা কারো কোনো কিছু দেখে বিস্মিত হয়ে যান তবেও বদনজর লেগে যাবে।

ধন সম্পদ বৃদ্ধির দোয়া

তাই অবশ্যই হুশ জ্ঞান রেখে কথা বলবেন। কারো সাথে হিংসা করবেন না। আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন তা নিয়েই খুশি থাকুন। আর কাউকে প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলুন। এতে করে সামনের ব্যক্তির উপর বদনজর আর পড়বে না। কাউকে বদনজর দেওয়া একটা খারাপ কাজ ও অবশ্যই অনুচিত।

খারাপ বা বদ নজরের লক্ষণ:

খারাপ নজরের শিকার হলে নানা ধরণের লক্ষণ দেখা যায় বা যেতে পারে। কেউ বদ নজর দিলে আপনার শরীর দুর্বল লাগবে ও ক্ষুধা হ্রাস পাবে অর্থাৎ কিছু আর খেতে ভালো লাগবে না। স্থায়ীভাবে জ্বর উঠে থাকবে। মাথা ব্যথা করতে থাকবে। হাত বা পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় ব্যথা করবে।

রাতে ভালো ঘুম হবে না বা মনে হবে যে ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু জাগ্রত। শরীরের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি হবে। সবসময়ই বিভিন্ন অসুখ লেগে থাকবে সেমন সর্দি, কাশি ইত্যাদি। নামাজ, পড়ালেখা করা বা অন্য কোনো কাজে মন বসবে না। চুল পড়া শুরু হতে পারে। শরীরের মধ্যে অলসতা দেখা দিবে। মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে হয়ে যাবে। পেটে প্রচুর গ্যাসের সৃষ্টি হবে। বুকে ব্যথা অনভব বা বুকের উপর একটা চাপ অনুভব হবে।

খারাপ নজর থেকে বাঁচার উপায়:

অবশ্যই সর্বদা মনে রাখবেন আপনি যে সমস্যার সম্মুখীন হন বা যে ভালো সময় উপভোগ করেন। এসব কিছুই আসে বা হয় একমাত্র আল্লাহর দ্বারা। আপনি যদি খারাপ নজরের শিকার হন তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা করুন। আল্লাহর দয়া ব্যতীত কিছুই সম্ভব নয়। তাঁর উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।

এখন একটু গভীরে গিয়ে ইসলাম সরাসরি আপনাকে খারাপ নজর থেকে বাঁচার জন্য কি কি উপদেশ ও নির্দেশ দেয় তা একটু দেখা যাক।

খারাপ বা বদ নজর থেকে বাচার দোয়া

বদ নজর থেকে বাচার দোয়া

কুরআন হাদিসে যেমন খারাপ নজর বা বদনজরের সত্যতা বা অস্তিত্ব নিয়ে লেখা রয়েছে। ঠিক তেমনি আপনি এর শিকার হলে কি করবেন তা নিয়েও বলা রয়েছে ও এ থেকে রক্ষার জন্য নানা দোয়া রয়েছে। তো চলুন এগুলো জানা যাক।

বদনজর দ্বারা কিভাবে আক্রান্ত হয় ও এ থেকে বাঁচার জন্য সাহাবি আবু সহল ইবনে হুনাইফ এর ঘটনা অত্যন্ত বিখ্যাত। নিম্নে উক্ত হাদিসের সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো।

জ্ঞান বুদ্ধি বৃদ্ধির দোয়া- ইসলামি ব্যাখ্যা

সাহাবি সহল ইবনে হুনাইফা গৌরবর্ণ ও সুঠাম দেহের অধিকারি ছিলেন। একদিন তিনি গোসল করার জন্য তাঁর পোষাক খুলেন। সেসময় তাঁর উপর চোখ পড়ে সাহাবি আমের ইবনে রাবিয়ার (রা:)। সেসময়ে আমের ইবনে রাবিয়ার মুখ ফসকে বের হয়ে যায় ‘আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ আর কারো দেখিনি।’

এরপর তৎক্ষনাৎ সহল ইবনে হুনাইফা বেহুশ হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। তাঁর জ্বর দেখা দেয় ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে এ বিষয়ে জানানো হয়। সংবাদ পেয়ে তিনি সবার কাছে জিজ্ঞাসা করল যে তাদের মতে এই কাজ করেছে (নজর দিয়েছে) এবং সবাই আমের ইবনে রাবিয়ার নাম বলেন।

তিনি বলেন, তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হয়েছিল, তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন?’ এবং এরপর আমের ইবনে রাবিয়াকে তিনি আসতে বলেন ও তাঁকে ওযু করার নির্দেশ দেন এবং ওযু করার পর অবশিষ্ট পানি সহল ইবনে হুনাইফা এর দেহে ঢেলে দিতে বলে৷ পরবর্তীতে সাহাবি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তো আপনি যদি জেনে থাকেন যে ঠিক কে আপনাকে বা আপনার আপনজন কাউকে বদনজর দিয়েছে তাহলে অযু করা পানির অবশিষ্ট দেহে ঢেলে দিলে ঠিক হয়ে যাবেন।

কিন্তু বিষয় হলো আপনি যদি কে আপনাকে বদনজর দিয়েছে তা না জেনে থাকেন সেক্ষেত্রে কি করবেন? এর জন্য আপনাকে কিছু দোয়া ও সূরা পাঠ করতে হবে।

আবু সাঈদ (রা:) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুল (রা:) কোনো রোগে আক্রান্ত হন। এসময় জিবরেল (আ.) নবিজির কাছে এসে বলেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ। পরবর্তীতে জিবরাইল (আ.) বলেন,
‘বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।’

অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুক; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি।
(মুসলিম, হাদিস – ৫৫১২)

কোন দোয়া পড়লে চেহারা উজ্জল হয়

বদনজর থেকে বাঁচার জন্য নবিজি বাচ্চাদের কোলে নিয়ে একটি দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। মুহাম্মদ (স.) হাসান ও হুসাইন (রা:) কে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন:
‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানি ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’

অর্থ: আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি- ৩৩৭১)

এছাড়াও সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস ও সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ুন। এছাড়াও দরুদ শরীফ পড়ুন।

তো পোস্টটি (বদ নজর থেকে বাচার দোয়া) কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts