বাংলাদেশ ও বিশ্ব সভ্যতা এ্যাসাইনমেন্ট-১ প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর (এসএসসি-২০২১)

আসসালামু আলাইকুম,

আশা করি সবাই ভালো আছেন।

আজকে এই পোস্টে আমি ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মূল্যায়ন করার জন্য এবং পরীক্ষা বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে দেওয়া বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতা এসাইনমেন্ট নং ১ এর প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর এই পোস্টে লিখে দিব।

প্রশ্ন-“মানব জীবনে ইতিহাস”শীর্ষক প্রবন্ধ
(৩০০ শব্দের মধ্য)

নমুনা উত্তর –

ভূমিকা:
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, দীর্ঘ নয় মাস
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে আমরা বিজয়ী হয়েছি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের,
গৌরবের কাহিনি। বাঙালি জাতির এমন অনেক
গৌরবের কাহিনি আছে যে সব জানতে হলে ইতিহাস
পাঠ প্রয়ােজন।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা :

ইতিহাস শব্দটির উৎপত্তি ‘ ইতিহ’ শব্দ থেকে যার অর্থ
ঐতিহ্য’। ঐতিহ্য হচ্ছে অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা,
ভাষা, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি যেটি ভবিষ্যতের
জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম
থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয় ইতিহাস। ই.এইচ.কারের ভাষায় বলা যায় যে, ইতিহাস হলাে
বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।
বর্তমানের সকল বিষয়ই অতীতের ক্রমবিবর্তন ও
অতীত ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
আর অতীতের ক্রমবিবর্তন ও ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই হল ইতিহাস। গ্রিক শব্দ হিস্টরিয়া’ (Historia)’ থেকে ইংরেজী
‘হিস্ট্রি’ (History) শব্দটির উৎপত্তি, যার বাংলা
প্রতিশব্দ হচ্ছে ইতিহাস। হিস্টরিয়া শব্দটির প্রথম
ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডটাস (খ্রিঃ পূ:পঞ্চম শতক)। তিনি ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত।তিনি সর্বপ্রথম তার গবেষণার নামকরণে এই শব্দটি ব্যবহার করেন যার আভিধানিক অর্থ হলো সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। তিনি বিশ্বাস করতেন ইতিহাস হল এমন একটি জিনিস যেটি সত্যিকার অর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা। তিনি তার গবেষণায় গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন এতে তিনি প্রাপ্ত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সমূহ এবং গ্রিসের বিজয়গাথা লিপিবদ্ধ করেছেন যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এই ঘটনা ভুলে না যায় এবং যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। হেরোডোটাস প্রথম ইতিহাস এবং অনুসন্ধান এই দুটি ধারণাকে সংযুক্ত করেন ফলে ইতিহাস পরিণত হয় বিজ্ঞানে। পরিপূর্ণভাবে হয়ে ওঠে তথ্যনির্ভর এবং গবেষণার বিষয়।সমাজ এর জীবনী ই ইতিহাস। প্রকৃতপক্ষে মানুষ ও সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহ হল ইতিহাস।

ইতিহাস রচনার উপকরণ-

যেসব তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকেও অধিষ্ঠিত করা সম্ভব তাকেই ইতিহাসের উপকরণ বলা হয়। সঠিক ইতিহাস লিখতে ঐতিহাসিক উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাসের উপাদান কে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান।

লিখিত উপাদান:- ইতিহাস রচনা লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সবসময়ই ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। যেমন পাঁচ থেকে সাত শতকে বাংলায় আগত চাইনিজ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ও ফা-হিয়েন এর বর্ণনা। তিব্বতীয় লেখক লামা তারুনাথের বর্ণনায় পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সিংহাসন আরোহন সম্পর্কে বর্ণনা আছে।

অলিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান:-
যেসব উপাদান থেকে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে পারি সেগুলোকেই সাধারণত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বা ঐতিহাসিক তথ্য বলা হয়। যেমন :মুদ্রা, শিলালিপি, তাম্রলিপি, ইমারত। উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা যায় সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি ইত্যাদি স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ এর কথা। কারণ এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকেই আমরা আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি।

ইতিহাসের গুরুত্ব:-
মানব সমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনে সত্যনির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস।
যে কারণে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অনেক।ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুজতে ও ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে সাহায্য করে।এছাড়া ইতিহাস পাঠের ফলে মানুষ নিজ দেশ ও সে দেশের সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারে। নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ওই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ আড়াই বছর আগেও নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। ইতিহাস মানুষকে সচেতন করে তোলে।বিভিন্ন মানব গোষ্ঠীর উত্থান পতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে ভালো মন্দের পার্থক্যটা সহজে বুঝতে পারে ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে। ইতিহাস পাঠ করে অতিতের ঘটনাবলীর দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারি। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যেতে পারে। মানুষ কৌতহুল প্রিয়। মানুষ তার অতীত ঘটনা জানতে চায়। ইতিহাস পাঠ করার মাধ্যমে অতীতকে জানা সম্ভব। সুতরাং দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তির প্রয়োজনে ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরী।

উপসংহার :-
ইতিহাস হল মানব সভ্যতা ও মানব সমাজের অগ্রগতিতে ধারাবাহিক সত্যনির্ভর বিবরণ। ইতিহাস পাঠ করে আমরা অতীতে অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারি। আবার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে গড়তে পারি। সর্বোপরি ইতিহাস পাঠ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম আত্মমর্যাদাবোধ ও জাতীয়তা বোধের জন্ম দেয়।তাই ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ একটি শাস্ত্র বা বিষয়।

নমুনা উত্তরটি হুবহু না লিখে দেখে ধারণা নিয়ে নিজের মত করে দেখার অনুরোধ রইলো ।

ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Related Posts