বাল্যকালের ফেলে আসা নাবালক গল্প

প্রত্যেকেরই একটি অতীত আছে। অতীত যে শুধু মানুষের আছে তা কিন্তু নয়। প্রতিটি প্রাণের কিংবা প্রাণের অস্তিত্বের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সবকিছুই থাকে। ঠিক তেমনি আমরা যারা মানব, তারা প্রত্যেকেই বাল্যকাল অতিবাহিত করেছি। যারা সৌভাগ্যবশত বাল্যকাল অতিক্রম করে এতো দূর পর্যন্ত এসেছি, তারাই খুব ভালো বুঝবেন, ফেলে আসা বাল্যকাল, আর সেই বাল্যকালের গল্পগুলো পৃথিবীর যত গল্প আছে সবার চেয়ে ব্যতিক্রম।

আপনি এখন ফিরে যান আপনার বাল্যকালে। চিন্তার দরজাটা খুলে দিন। কি দেখতে পাচ্ছেন? আপনি অবশ্যই গভীরতায় দিবাস্বপ্নে ঢুকে পড়েছেন।ভেবে দেখুনতো ফেলে আসা সেই সোনালী অতীত গুলো কতটা মূল্যবান ছিল। আপনি, আমি, কিংবা আমরা সবাই চাইলেও আর সেই সোনালী অতীতে ফিরে যাওয়া সম্ভবপর নয়। বাল্যকাল মানুষের জীবনে একবারই আসে। বাল্যকালের না বলা কথাগুলো এখনো ভাবলে মনে মনে খুব হাসি পায়। কি সুন্দর ছিল সেই অতীত। জীবনের আসল আনন্দটা আসলে বোধহয় বাল্যকালে লুকায়িত থাকে।

বিশেষ করে আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি, তারা খুব ভালোভাবে বাল্যকালকে উপলব্ধি করার একটা সুযোগ পেয়েছি। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই সৌভাগ্যবান’। ছোটবেলার সেই কথাগুলো মনে হলে, বড় আশ্চর্য  লাগে। মনে হয় আবার সেই ছোটবেলায় ফিরে যাই। দুরন্তপনা, আরো শৃংখল জীবনযাপন আমাদের প্রকৃতির মাঝে, বন্ধুর মতো মিশে যেতে পারি। পৃথিবীতে যত সৃষ্টি আর যত আনন্দ তার সবটুকু একত্রে মেশালেও ছোটবেলার প্রতিটি আনন্দঘন মুহূর্তের ধারে কাছেও যেতে পারবেনা। ছোটবেলায় কত দুষ্টুমিতে মন মজে গেছে সেকথা ছোটবেলায় কখনো বুঝতেই পারিনি।

আসলে মানুষের বয়স কেন বাড়ে? ছোটবেলার দুষ্টুমি গুলো কথা মনে হতেই মনে হয় সৃষ্টিকে যদি অন্য রকম ভাবে পরিচালনা করা যেত/যদি কখনো সুযোগ আসতো/যদি কেউ একজন বলতো/তুমি কোন সময়ে ফিরে যেতে চাও? তবে এক কথায় আমরা সেই বাল্যকালে ফিরে যেতে চাইতাম। দুরন্তপনা আর শৈশবের সেই মন মাতানো ছুটে বেড়ানো, এখনো খুব সস্তা নয়। হাত বাড়ালেই ফুলের সৌরভ, গগনবিদারী আর্তনাদ, তারা কাকার গাছের আম গুলোকে খাওয়ার মজাই আলাদা।

নদীতে নৌকা চালানো কিংবা মাছ ধরার টা তখনো এতটা আনন্দ অনুভবে বুঝতে পারিনি। গ্রামের মেঠো মেঠো পথ। কর্দমাক্ত রাস্তা আর দু’পাশের আম জাম আর কাঁঠাল গাছের সৌন্দর্য এখন শুধু ছবিতে দেখতে পাই। অথচ যখন চোখের সামনে বিনে পয়সার এই সৌন্দর্য গুলো উপভোগ করার সময় ছিল তখন ঠিকই তা উপভোগ করেছি কিন্তু অনুভবে তা ধারণ করতে পারেনি। স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি আর মানিকলাল স্যারের বেতের পিটুনি, এখনো ছোটবেলাটা কে মনে করিয়ে দেয়। তখন রাস্তাঘাট গুলো এত চকচকে ছিলনা।

ছিলনা ল্যাম্পপোস্টের বাতি। চকচকে ঝকঝকে না হলেও, আসল মাটির গন্ধটা এখনো ভুলতে পারিনা। ধুলি মাখা পথ, আর পদ্মা মেঘনা -যমুনা আমাদের মানচিত্রের মাঝে এখন শুধু ছবিতে দেখতে পাই, । আচ্ছা এমন কেন হলো। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশ্বাসী না হয়ে যদি আত্ম উন্নয়নে বিশ্বাসী হতাম তবে বোধহয় বিনে পয়সায় কিছু সুখ লাভ করতে পারতাম। মাঝে মাঝে খুব আফসোস হয়। বারবার মন ছুটে যায় সেই শৈশবে।

<

শৈশবটা আসলেই খুব মাতানোর। অন্যের গাছের আম কিংবা জাম কিংবা রাস্তার ধারে ঢিল ছুঁড়ে খেজুর গাছে মিছেমিছি চেষ্টা, অন্তরের মধ্যে এক গভীর কষ্টদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়। এখন আর রাস্তাঘাটগুলো ধুলিমাখা নয়। অন্ধকার রাস্তা আমাদের দেশে এখন আর দেখাই যায় না। রাস্তার ধারে হয়তো আম কাঁঠাল আর তালগাছের দেখা না মিললেও, আমরা এখন অনেক ডিজিটাল হয়ে গেছি। মিথ্যে মিথ্যে এই গল্পটা আমাদের মাঝে এসে যায়।

প্রকৃতির এক অনাবিল সৌন্দর্য আমরা বিসর্জন দিয়েছি বহুদিন আগেই। সৌন্দর্যকে আমরা চিনতে বড় অপারগ। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের আত্মউন্নয়ন এখনো সেকেলে রয়ে গেছে। পাশ্চাত্য দুনিয়ার লাল নীল বাতি আমাদের দুজনকে অন্ধকার আর কালো চশমায় ঢেকে দিয়েছে। লাল নীল বাতি মাঝেই আমরা আমাদের সতীত্বকে বিসর্জন দিয়েছি। ভিন্ন সংস্কৃতি আমাদের অন্তরাত্মা কে চিনতে মরীচিকার মত ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে। আমরা কারা, আমরা কি, আমরা কোন জাতি, সে কথা ভাববার আমাদের এখন সময় নেই। আমরা এখন যৌবনের টানেই বেশি ব্যস্ত। কোন রকম ভাবে টাকা পয়সা ইনকাম করে পশু পাখির মত বেঁচে থাকার এক অনবদ্য আবিষ্কার আমরা করে ফেলেছি।

আমরা এখন খেলি কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনে। শৈশবে আমরা কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন হাতে পাইনি। তবে বিকেলবেলা অজ পাড়াগাঁয়ের কিছু কালো কালো ছেলেদের সাথে মাঠে খেলে বেরিয়েছি, কানামাছি, হাডুডু, আর বদন বদন খেলা। কিছু খেলার নাম ও আমরা তখন জানতাম না। তবুও সে খেলা গুলোই আমরা প্রচুর আনন্দ পেতাম। এখনো মনে হলে মনটা ছুটে যায় সেই অজ পাড়াগাঁয়ের ছোট্ট ছোট্ট মাটির মাঠে।

যেখানে ধুলোবালিতে ঠাসা। বাতাসে ধুলোর গন্ধ মিশে থাকে। এখন আর এসব খুব বেশি খেলা হয় না।প্রযুক্তির কল্যাণে এখন শিশু-কিশোররা স্মার্টফোন আর কম্পিউটারের মায়াজালে বন্দি। সবকিছুই এখন ডিজিটাল। ডিজিটাল জিনিসটার বিপক্ষে আমি বলছি না। তবে আমাদের প্রাণ, আমাদের সংষ্কৃতি আর ঐতিহ্য কে আমরা কখনই ভুলে যেতে পারিনা। আমি বলছি আমাদের বাল্যকালের কথা।

রূপকথার গল্পের মতো সুন্দর সুন্দর আঁকা বাঁকা মেঠো পথে রাখাল ছেলের গল্প। খুব বেশি টাকা না থাকলেও, দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়েও মানুষের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। তখনই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করলেন আমার সোনার বাংলা। আমি তোমায় ভালোবাসি। সত্যিই ভালবাসার মতই আমার বাংলা। ভালোবাসার মতোই আমার শৈশব। ভালোবাসার মতোই আমার বাল্যকাল। আমার গল্পটা শুধু নাবালকের। এই ছিল, নাবালকের মত কিছু নাবালক কথা, (ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন)

:::;;;;;;;; মমিন সাগর:::::::::

Related Posts

22 Comments

মন্তব্য করুন