বিজ্ঞানীরা কী পারবে ২০৩৩ সালের মধ্যে মঙ্গলে পা রাখতে?

মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে আমাদের সবার মনেই অনেক কৌতূহল কাজ করে। সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ ও আমাদের নিজ গ্রহ এই পৃথিবীর বিভিন্ন রহস্য এখনো অনেকের কাছে অজানা। তবে সে দিন হয়তোবা আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা অন্য গ্রহে পা রাখবো।

চাঁদে প্রথম পা রাখে নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অল্ড্রিন, ১৯৬৯ সালে। সেই ঘটনার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর অতিক্রম হয়েছে। পুরনো সেই মুহূর্ত ফিরিয়ে আনতে চাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেই মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসাও।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে একটি নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেন। নির্দেশিকায় বক্তব্য ছিল এ রকম, চাঁদে পুনরায় মানুষ পাঠানো হোক। এবং তার পরের গন্তব্য হবে মঙ্গল।

নাসা জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে পুনরায় চাঁদে পাড়ি দেবেন মহাকাশচারীর দল। আর মঙ্গলে পাঠানো হবে ২০৩৩ সালে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লালগ্রহে ২০৩৩ সালের মধ্যে পা ফেলা খুবই কঠিন। বলা যায় এক প্রকার অসাধ্য সাধন করতে হবে বিজ্ঞানীদের।

নাসার সম্প্রতি একটি সম্মেলনে নাসার অন্যতম কর্তা জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেন, ‘‘নতুন চন্দ্রাভিযানে আমাদের দক্ষতা, ক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। সেখানে সফল হলে পরবর্তী লক্ষ্য হবে মঙ্গল।’’ হিউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারের অন্যতম বিশেষজ্ঞ রবার্ট হাওয়ার্ডের মতে, বিষয়টি বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তিগত ভাবে যত না জটিল, তার থেকেও বেশি চিন্তার বিষয় হলো বিশাল অঙ্কের খরচ। তাছাড়া রাজনৈতিক বাধার মুখেও পড়তে হতে পারে।

সরকার এমন ধরনের অভিযানে কতটা ইচ্ছুক, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। রবার্ট হাওয়ার্ড আরও বলেন, ‘‘বহু মানুষ চান সেই ‘অ্যাপেলো মোমেন্ট’-এর স্বাদ নিতে। কিন্তু তার জন্য কেনেডির মতো প্রেসিডেন্ট-ও চাই। মানুষকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।’’

‘‘তবে ২০২৪ নয়, ২০২৭ সাল তো হয়েই যাবে,’’ বলছেন হাওয়ার্ড। কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন- মহাকাশযানের নকশা তৈরি, তার পর যান নির্মাণ, বিভিন্ন পরীক্ষা, এসব তো রয়েইছে। চাঁদে পাড়ি দেওয়ার পরে পৌঁছতে সময় লাগবে তিন দিন। কিন্তু মঙ্গলে পৌঁছতে কমপক্ষে ৬ মাস তো লাগবেই। অভিযান শেষ করতে দু’বছরেরও বেশি সময়ের প্রয়োজন। মঙ্গল ও পৃথিবী ২৬ মাস অন্তর সবচেয়ে কাছে আসে। মঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার জন্য ওই সময়টাই হলো সেরা।

বিজ্ঞানীদের একাংশ অবশ্য খরচের থেকে অন্য বিষয়ে বেশি চিন্তিত। নাসার বিজ্ঞানী জুলি রবিনসন জানান, ‘‘দ্বিতীয় চিন্তা হলো, খাবার। অত দিনের জন্য খাবার ব্যবস্থারও তো প্রয়োজন আবশ্যিক।’’ তাছাড়া কেউ অসুস্থ হলে নিজেদের দেখভাল, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রক্রিয়া জানতে হবে। মহাকাশচারীদের পোশাকও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে বাঁচার মতো পোশাক চাই। সর্বোপরি, টানা দু’বছর জনমানব-বর্জিত হয়ে থাকা। বিষয়টা বেশ চিন্তাদায়ক।

Related Posts

37 Comments

মন্তব্য করুন