বিজ্ঞানের দারুণ মজার এক্সপেরিমেন্ট : জবা ফুল থেকে লিটমাস পেপার তৈরির আশ্চর্য কৌশল!!!

কোনো রাসায়নিক পদার্থ এসিড না ক্ষারক তা পরীক্ষা করে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য লিটমাস পেপার ব্যবহার করা হয়। লাল লিটমাস পেপারে ক্ষার বা ক্ষারক মেশালে লাল লিটমাস পেপার নীল হয়ে যায়। আবার নীল লিটমাস পেপারের সাথে এসিড মেশালে নীল লিটমাস পেপার লাল হয়ে যায়। লিটমাস পেপার পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয় সাধারণত লিচেন নামক ছত্রাক আশ্রয়ী শৈবালের লাল রঞ্জক থেকে। তবে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে লিটমাস পেপার সাধারণত পরীক্ষাগারেই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কেননা লিচেন নামক ছত্রাক আশ্রয়ী শৈবালের লাল রঞ্জক বিশ্লেষণ ব্যয়সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। তবে আমরা আমাদের অত্যন্ত পরিচিত একটি ফুল, যা প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়, সেই টুকটুকে লাল রঙের জবা ফুল দিয়ে লিটমাস পেপার তৈরি করতে পারি, যা দিয়ে খুব সহজেই কোনো রাসায়নিক পদার্থ এসিড না ক্ষারক তা পরীক্ষা করে আমরা সুনিশ্চিত হতে পারি।

জবা ফুল দিয়ে লিটমাস পেপার তৈরি করতে হলে প্রথমেই লাগবে পাঁচ ছয়টি লাল টুকটুকে জবা ফুল এবং দুইটি ধবধবে সাদা অফসেট পেপার। এরপর ধবধবে সাদা অফসেট পেপারে টুকটুকে লাল রঙের জবা ফুলের পাপড়িগুলো একটা একটা করে আলতোভাবে ঘষতে হবে। এমনভাবে ঘষতে হবে যেন জবা ফুলের পাপড়িগুলোর লাল রঙের একটি আস্তরণ ধবধবে সাদা অফসেট পেপারকে ধীরে ধীরে লাল করে তোলে।

এভাবে সাদা অফসেট পেপারের দু’দিকেই জবা ফুলের পাপড়িগুলো একটা একটা করে ঘষতে হবে। একসময় দেখা যাবে সাদা অফসেট পেপারের দু’দিকেই জবা ফুলের লাল পাপড়িগুলোর লাল রঙে পুরোপুরি লাল টুকটুকে হয়ে উঠেছে। এভাবে সাদা অফসেট পেপার দুটি জবা ফুলের পাপড়িগুলো দিয়ে পুরোপুরি লাল টুকটুকে করে নিতে হবে। এরপর লাল অফসেট পেপার দুটি রোদে ভালো করে শুকাতে হবে।

রোদে শুকিয়ে লাল অফসেট পেপার দুটি শুকনো খটখটে হয়ে যাবে, তখনই আমরা পেয়ে যাব সেই আশ্চর্য লিটমাস পেপার! এই লাল অফসেট পেপার দুটিই হচ্ছে কোনো রাসায়নিক পদার্থ এসিড না ক্ষারক তা পরীক্ষা করে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য যে লিটমাস পেপার প্রয়োজন হয়, সেই আশ্চর্য লিটমাস পেপার!! এই লিটমাস পেপার দিয়েই আমরা পরীক্ষা করতে পারবো যে, কোনো রাসায়নিক পদার্থ এসিড না ক্ষার।

তো এবার পরীক্ষার পালা! প্রথমেই আমরা খুব সহজলভ্য রাসায়নিক পদার্থ খাওয়ার চুন বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড Ca(OH)2 দিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে পারি। আমরা জানি খাওয়ার চুন বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড Ca(OH)2 হচ্ছে একটি ক্ষারীয় রাসায়নিক পদার্থ। তাই যখন আমরা এই খাওয়ার চুন বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড Ca(OH)2 এর জলীয় দ্রবণে লাল অফসেট পেপার অর্থাৎ লাল লিটমাস পেপার ভেজাবো, সাথে সাথে আমরা দেখতে পাবো যে, আমাদের লাল অফসেট পেপার অর্থাৎ লাল লিটমাস পেপারটি নীল বর্ণে পরিণত হয়েছে।

<

আবার এই নীল বর্ণে পরিণত হওয়া লিটমাস পেপারটিকে যদি আমরা লেবুর রস কিংবা ভিনেগারের মধ্যে ভেজাই, তাহলে আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখতে পাবো যে নীল বর্ণের লিটমাস পেপারটি লেবুর রস কিংবা ভিনেগারে ভিজে পুরোপুরি লাল বর্ণে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি লেবুর রস হচ্ছে সাইট্রিক এসিড। এজন্য লেবু জাতীয় সব ধরনের ফল যেমন— বাতাবিলেবু অর্থাৎ জাম্বুরা, মাল্টা ইত্যাদিকে সাইট্রাস ফলও বলা হয়। তাই সাইট্রাস ফল তথা বাতাবিলেবু অর্থাৎ জাম্বুরা, মাল্টা ইত্যাদি সাইট্রাস ফলের সাইট্রিক এসিড রসে নীল লিটমাস পেপার লাল বর্ণে পরিণত হয়।

আবার আমরা এই লাল লিটমাসটাকেই কুইক লাইম তথা শুকনো চুনের (CaO) এর সাথে পানি (H2O) মিশিয়ে খাওয়ার চুন অর্থাৎ Ca(OH)2 এর জলীয় দ্রবণে ভিজিয়ে নীল করতে পারি, আবার এই লিটমাসকেই লেবুর রসের সাইট্রিক এসিডে ভিজিয়ে লাল করতে পারি। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এরকম নানা রাসায়নিক পদার্থসমূহের মধ্যে এসিড এবং ক্ষারধর্মী পদার্থ আছে, আমরা জবা ফুল দিয়ে তৈরি করা এই লাল লিটমাস আর চুনের মাধ্যমে তৈরি নীল লিটমাস দিয়ে কোন পদার্থটি এসিডধর্মী আর কোনটি ক্ষারধর্মী, তা সহজেই বের করতে সক্ষম হবো।

সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।

লিটমাস পেপার, এসিড, ক্ষার, জবা ফুল

Related Posts

16 Comments

মন্তব্য করুন