বিশ্বের সকল ইন্টারনেট এখন এক গ্লাস জলের মধ্য রাখা যাবে।

বন্ধুরা আমি যদি আপনাদের বলি যে ইন্টারনেট জগতের যতো ডাটা আছে, সেটা ফটোস হোক VIDEO ভিডিওস হোক মিউজিক হোক অথবা বড় বড় ডাটা সেন্টারের ডাটা বা ছোট ছোট ডাটা সার্ভারের ডাটা হোক এ সব ডাটা গুলোকে একত্রে একদম ছোট করে একটি পানির গ্লাসের সমান জায়গায় স্টোর করা সম্ভব,

 

তো আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করবেন? জি, বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন কিন্তু এটাই সত্য। আমি আপনাদের সাথে একদমই মজা করছি না।

আজ আমি আপনাদের ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি। জি হাঁ, ডিএনএ (DNA) ডাটা স্টোরেজ। তো চলুন বিস্মিত হওয়া শুরু করা যাক!

ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ

ইন্টারনেটে এই পর্যন্ত কত ডাটা স্টোরড করা আছে তার কোন নির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও আনুমানিক ১৫ জ্যাটাবাইট INFORMATION তথ্য সমগ্র ইন্টারনেটে সংরক্ষিত রয়েছে। এখন ১৫ জ্যাটাবাইট সমান কত তা দেখুন ব্রাকেটে, কত গুলো জিরো দেখতে পাচ্ছেন! (১৫ জ্যাটাবাইট = ১৫,০০০,০০০,০০০,০০০ গিগাবাইট)। এই ডাটা গুলো সংরক্ষিত করা আছে বড় বড় ডাটা সেন্টার গুলোতে, বড় বড় সার্ভারে, ছোট সার্ভারে, এবং আপনার এবং আমার কম্পিউটারে। এবং এই সমগ্র INFORMATION তথ্য একত্রে পুরো ইন্টারনেট তৈরি করে। কিন্তু এতো ডাটা আমরা স্টোর করি কীভাবে?

আমারা এই বিশাল ডাটা গুলোকে সাধারন উপায়ে স্টোর করে থাকি। যেমনঃ ম্যাগনেটিভ টেপ, হার্ডDRIVE ড্রাইভ, সলিড স্টেট DRIVE ড্রাইভ, ফ্ল্যাশ স্টোরেজ ইত্যাদিতে আমরা সমস্ত ডাটা গুলো সেভ করে রাখি। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় জানা গেছে যে ডিএনএ (DNA) এমন একটি জিনিস যা ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষন করে রাখতে পারে। যেমনটা আপনিও জানেন যে, যদি কোন বিজ্ঞানী পুরাতন কোন প্রাণীর ফসিল খুঁজে বের করে তবে সে তার ডিএনএ থেকে জানতে পারে যে প্রাণীটি ছোট ছিল না বড় ছিল, প্রাণীটি কি খেত, কত বছর বেঁচে ছিল ইত্যাদি। কেনোনা ডিএনএ তে এসব সকল INFORMATION তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং লক্ষ কোটি বছর পরেও এই INFORMATION তথ্য গুলো নষ্ট হয়না এবং আজকের দিনেও সেই হাজার বছর পুরাতন ডিএনএ থেকে INFORMATION তথ্য রিকভার করা সম্ভব।

তো এই ধারনার উপর ভিত্তি করে অনেক বিশেষজ্ঞগন চেষ্টা করেছেন যে, ডিএনএ তে কি এভাবেই ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষন করা সম্ভব? আর যদি ডাটা স্টোর করাও যায় তবে কতটুকু ডাটা স্টোর করা যাবে কীভাবে করা যাবে? এবং সেই ডাটা কি রিকভার করা যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং এই বিষয়ের উপর পিছনের কয়েক বছর ধরে প্রচুর পরিমানে গবেষণা চলে আসছে।

সাম্প্রতিক ২০১২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্ররা এই বিষয়ের উপর গবেষণা করে এবং তারা ডিএনএ এর ভেতর ডাটা স্টোর করে দেখিয়ে দেয় যে ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ এর অস্তিত্ব সত্যিই সম্ভব। সাম্প্রতিক কিছু দিন আগে, মোটামুটি ২ সপ্তাহ আগে একটি গবেষকদল ডিএনএ এর ভেতর ডাটা স্টোর করেন এবং তা রিকভার করতেও সফল হোন। এবং তারা সম্পূর্ণ ভাবে প্রমানিত করে ফেলেন যে ডিএনএ কে অবশ্যই ডাটা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারন তারা স্টোর এবং রিকভার দুটিই করেন। নিচের ফটোটি দেখুন। এই ফটো গুলো তারা ডিএনএ তে স্টোর করেছিলেন এবং ডিএনএ থেকে সফল ভাবে রিকভার করতে সক্ষম হয়েছেন।

ছবিঃ ডিএনএ থেকে রকভার করা ফটো | Dailymail.co.uk

গবেষকগনের মোতাবেক ১ মিলিমিটার কিউব ডিএনএ তে ১ এক্সাবাইট INFORMATION তথ্য সংরক্ষন করা সম্ভব। এর মানে ১ মিলিমিটার কিউব ডিএনএ = ১০,০০০,০০০,০০০ গিগাবাইট স্টোরেজ। তো বন্ধুরা আপনি ভেবে দেখতে পারছেন? আপনারা কি ভাবছেন জানিনা তবে আমার চোখ ইতিমধ্যে ছানাবড়া হয়ে গেছে যাই হোক, ১ সেন্টিমিটার কিউব ডিএনএ তে ১ জ্যাটাবাইট ডাটা সংরক্ষন করা সম্ভব। আর সমগ্র ইন্টারনেট যেহেতু ১৫ জ্যাটাবাইট সুতরাং ১৫ সেন্টিমিটার কিউব ডিএনএ তে সমগ্র ইন্টারনেটকে বন্দী করা সম্ভব। মানে একটি পানি খাওয়া গ্লাসের সমান জায়গাতে সমস্ত ইন্টারনেট সংরক্ষিত থাকবে।

 

ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ প্রসেস কীভাবে কাজ করে?

ছবিঃ ldsmag

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক যে এই ক্রিয়াকলাপ সম্পূর্ণ কীভাবে হয় তা নিয়ে। দেখুন বন্ধুরা ডিএনএ এর ভেতর মোট চারটি আলাদা আলদা নিউক্লিওটাইড থাকে। তারা হলো আডিনিন (Adenine), থাইমিন (Thymine), গোয়ানিন (Guanine) এবং সাইটোসিন (Cytosine)। আপনারা নিশ্চয় একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণীতে এই সম্পর্কে জেনেছেন যদি আপনি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ে থাকেন।

যাই হোক, আমরা জানি যে ডিজিটাল ডাটা সমূহ ওয়ান এবং জিরো এর রূপে থাকে বিটস এর মধ্যে। এবং ডিএনএ ডাটা গুলো ATCG রূপে থাকে। এখন যদি এই জিরো এবং ওয়ানকে ATCG রূপে এনকোড করতে পারি তবে খুব সহজেই ডিএনএ তে ডিজিটাল ডাটা স্টোর করাতে পারবো। মনে করুন A এর মানে 0, T এর 1 এভাবে C,G কে আলাদা আলদা হাফম্যান কোডের মান দিয়ে এনকোড করা হয়। এবং সকল ডাটাকে ডিএনএ এর নিউক্লিওটাইড প্যাটার্ন ATCG তে আনা হয়।

এর পরে এই ATCG প্যাটার্ন ব্যবহার করে একটি নতুন ডিএনএ তৈরি করা হয়, যেখানে ডাটা এনকোড করা থাকে। তারপর ডাটাটি রিকভার করার সময় ডিকোড করে আবার ডিজিটাল ওয়ান এবং জিরোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এবং এভাবেই ডাটা রিকভার হয়ে যায়। এই প্রসেসটি অনেক জটিল এবং প্রচুর ব্যয় বহুল। ডাটা লোড এবং রিকভার করতে অনেক ধাপ অবমম্বন করতে হয়। কিন্তু এটি অসম্ভব কিছু নয়। এবং গবেষকগন আশ্বস্ত করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা ডিএনএ কে ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো।

ছবিঃ Extremetech

ডিএনএ তে ডাটা স্টোর করা অনেক সুবিধা জনক। কেনোনা এতে ডাটা স্টোর করে রাখার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন পরে না। তাছাড়া স্টোর করা ডাটা হাজার হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত রাখা সম্ভব। হার্ডDRIVE ড্রাইভ এর মতো ফেল হওয়া বা আচানক ডাটা হারিয়ে যাওয়ার একদম সম্ভবনা নেই। এবং একবার ভেবে দেখুন এক ম্যাচের বাক্সের সমান স্থানে আপনি কত ডাটা স্টোর করে রাখতে পারবেন। কারন ১ মিলিমিটার কিউব ডিএনএ যে পরিমান ডাটা সংরক্ষন করতে পারবে তা যদি আপনি সাধারন হার্ডDRIVE ড্রাইভ দিয়ে করতে চান তবে হয়তো আপনার পুরো ঘর হার্ডDRIVE ড্রাইভ দিয়ে ভর্তি করতে হতে পারে।

ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ এর দুটি অসুবিধাও আছে এই মুহূর্তে। এক তো হলো ডিএনএ থেকে ডাটা রিকভার করার প্রসেসটি এখনো পর্যন্ত অনেক স্লো। কিন্তু এই বিষয়ের উপরও অনেক কাজ করা হচ্ছে। গবেষকগন এ থেকে রান্ডোম ডাটা অ্যাক্সেস করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং দ্বিতীয় PROBLEM/ প্রোবেলেম/ সমস্যা হলো এর দাম। তো এই দুটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করার তেমন কারন নাই। কেনোনা এই প্রযুক্তি যতো উন্নতি লাভ করবে সামনের দিনে তোতোই এই অসুবিধা দুইটি কমতে থাকবে। এর সুবিধার কথা এবং এর ক্ষমতার কথা একবার ভেবে দেখুন।

বেশি দিনের কথা না এইত ১৯ শতকের কথা। তখন এমনও এক সময় গেছে যেখানে ৫ মেগাবাইট ডাটা সংরক্ষন করার জন্য হার্ডDRIVE ড্রাইভ ট্রাকে করে নিয়ে আসতে হতো। আর সেখানে আজ একটি গ্লাসে পুরো ইন্টারনেট ভরার চিন্তা করছি। তো এই তো হলো পরবর্তী প্রযুক্তি এবং পরবর্তী বিজ্ঞান। এবং আমি পুরো বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে সামনের দিনে ডিএনএ স্টোরেজ অবশ্যই সফল হতে চলেছে এবং এর ব্যবহারও আমরা দেখতে পাবো। হয়তো আপনার কম্পিউটারে ডিএনএ ডাটা স্টোরেজ থাকবে না। কিন্তু বড় বড় গবেষণা কেন্দ্র এবং ডাটা সেন্টার গুলোতে অবশ্যই ডিএনএ স্টোরেজ থাকবে।

শেষ কথা

বন্ধুরা আমার পুরা ভরসা যে আজকের এই TUNE টিউনটি আপনাদের অসাধারন লেগেছে। এবং আপনিও যদি আমার মতো নতুন আবিষ্কার প্রেমি হয়ে থাকেন তবে ইতি মধ্যে এই প্রযুক্তির প্রেমে পড়ে গেছেন হয়তো। যেহেতু এটি একেবারে সম্পূর্ণ নতুন এক প্রযুক্তি এবং সেটা নিয়ে লিখে ফেললাম তাই অবশ্যই TUNE টিউনটি বেশি বেশি শেয়ার করুন। আপনার যেকোনো প্রশ্ন এবং মতামত আমাকে টিউমেন্ট করতে একেবারেই ভুলবেন না।আর হাঁ! সকলকে আমার পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।আমার TUNE টিউন গুলো ভালো লাগলে অবশ্যই আমার TUNE টিউন বেশি বেশি জোসস করুন।আমার TUNE টিউন গুলো আপনার ‘TUNE টিউন SCREEN স্ক্রিন’ নিয়মিত পেতে অবশ্যই আমাকে ফলো করুন। আমার TUNE টিউন গুলো সবার কাছে ছড়িতে দিতে অবশ্যই আমার TUNE টিউন গুলো OTHER বিভিন্ন সৌশল মিডিয়াতে বেশি বেশি শেয়ার করুন।আমার TUNE টিউন সম্পর্কে আপনার যে কোন মতামত, পরামর্শ ও আলোচনা করতে অবশ্যই আমার টিউনে টিউমেন্ট করুন।

Related Posts