ব্যক্তিজীবন যেন পড়ে আছে বিজ্ঞানের ছায়াতলে

 সুচনা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ।  আজ বিজ্ঞান আমাদের কাছে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই অপরিহার্য আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা মুহূর্ত বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না। এখন যেকোন ধরনের  জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষ এই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সকল কাজ কর্মে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান লক্ষনীয়।বলা যায়, এখন বিজ্ঞানই মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নিয়ন্ত্রক।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান কে বাদ দিয়ে মানুষের একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এখন প্রতিমুহূর্তে প্রতি পদক্ষেপে সভ্য মানুষ বিজ্ঞান এর সাহায্য নিয়ে জীবন ধারণ করছে।সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া অব্দি প্রতিটি কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লক্ষণীয়। আমাদের ঘুম ভাঙ্গে এলার্মের শব্দে। ঘুম থেকে উঠে দিনের শুরু করি টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে। এরপর আছে সংবাদপত্র তারপর গ্যাস অথবা হিটারে রান্না করে খাই।এরপর  কর্মস্থলে পৌঁছাই বাস,ট্রেন বা মোটরসাইকেলে।সিড়ির বদলে লিফটে করে যাই অফিসকক্ষে। দূর-দূরান্তে খবর পাঠানোর জন্য ব্যবহার করি ইন্টারনেট মোবাইল ল্যাপটপ কম্পিউটার ক্লান্ত দেহটাক আরাম দেওয়ার জন্য এসি বা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসি-এভাবেই সারাদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য আমরা আমাদের জীবন চালিয়ে নিয়ে যাছি।

যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারঃ আজ পৃথিবী কে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয় মানুষ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারছে কোন ঝামেলা ছাড়াই মানুষ গড়েছে প্রতিবেশী। বিজ্ঞান দূরত্ব কে দূর করেছে। এটা মানুষের মূল্যবান সময়কে বাঁচিয়েছে। এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা দেখতে পাই যাতায়াতের ক্ষেত্রে। কার এবং বাস খুবই সাধারণ বিষয়, কিন্তু ইলেকট্রিক ট্রেন আমাদের বহন করছে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তার দুরন্ত গতির সাহায্যে। আকাশ পথে পাড়ি দিচ্ছে জেট প্লেন। বিজ্ঞানের পাড়ি জমিয়েছে চাঁদে বিজ্ঞানের বিভিন্ন গ্রহে পাড়ি জমাবে।

আমারা বিজ্ঞানের যুগে বসবাস করি।এটা পুরো পৃথিবীর অবস্থা কে পরিবর্তন করেছে আমরা। আমাদের চারপাশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখতে পাই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ঈর্ষণীয় সাফল্য গুলোর মধ্যে অন্যতম গুলো হল:

কম্পিউটার :

বিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কার গুলোর মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম।এটি একটি তথ্য বিশ্লেষক ইলেকট্রনিক ডিভাইস এটি বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত  একটি প্রযুক্তি। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি কেননা এটি বহুল কাজে ব্যবহৃত হয়। জীবনে একটি ভালো চাকরি পেতে হলে বা জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে কম্পিউটার এ  দক্ষ হওয়া আবশ্যক। তাই মানব জীবনে কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের এই প্রযুক্তিটি ছাড়া মানুষের প্রাত্যহিক কাজকর্ম যেন চলছে না।

সংবাদপত্র :

বর্তমান সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।সময়। এই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যে কোন জিনিসকে মুহুর্তের মধ্যে হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়। আগে মানুষ সকালে অপেক্ষা করত সংবাদপত্রের জন্য কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ আর সংবাদপত্রের জন্য অপেক্ষা করে না। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের সাহায্যে মানুষ যেকোন সময় যেকোন প্রান্ত থেকে তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি থেকে কিংবা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ দ্বারা যেকোনো সংবাদ সংগ্রহ করতে পারে। তাই এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে খবরের কাগজ এর জন্য কাউকে অপেক্ষা করে থাকতে হয় না। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেন মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

<

মোবাইল ফোন:

মানুষ বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে আবিষ্কারটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সেটি হল মোবাইল ফোন। বর্তমান সময়ে এমন কোন মানুষকে পাওয়া যাবেনা, যে মোবাইল ফোন সম্পর্কে জানেনা  বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। মানুষ তার ব্যক্তি জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। মোবাইলের সাহায্যে ঘরে বসে বর্তমানে সব কাজ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় -যে কোন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থী চাইলেই তার হাতে থাকা মোবাইল থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারে। তাকে আর কষ্ট করে স্কুলে যেতে হয় না। সে ঘরে বসে মোবাইল ফোনের সাহায্যে তার ফলাফল সংগ্রহ করতে পারে। শিক্ষাথী চাইলেই তার যেকোনো পরীক্ষা বা আবেদনের ফ্রম ঘরে বসেই মোবাইল ফোন দ্বারা পূরণ করতে পারে। এজন্য তাঁকে আর কষ্ট করে কম্পিউটারের দোকান যেতে হয় না। মোবাইল ফোনের সাহায্যে যেকোনো ধরনের ই-সেবা গ্রহণ করা যায়। মোবাইল ফোনের সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যেই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যোগাযোগ করা যায়। এখন ঘরে বসেই মোবাইলের সাহায্যে যেকোনো ধরনের লেনদেন করা সম্ভব। এভাবে আরো নানা কাজে ব্যক্তিজীবনে মোবাইলফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আর বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনে হচ্ছে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি। আর বিজ্ঞানের এই প্রযুক্তিটি আমাদের ব্যক্তি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

যেসব ক্ষেএে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে:

শিক্ষা ক্ষেএে :

কোন একটি কাহিনী পড়া বাশোনার চেয়ে ওই কাহিনী নিয়ে তৈরি সিনেমা বা চলচ্চিত্র মনে অনেক বেশি রেখাপাত করে। কম্পিউটারের সাহায্যে শিক্ষাদান বা গ্রহণের ক্ষেত্রে এর সবকটি সুযোগ কাজে লাগানো যায়। ছোট্ট সোনামণিদের জন্য বর্ণপরিচয়, গল্প, ইতিহাস ইত্যাদি কার্টুনের মাধ্যমে তাদের সামনে তুলে ধরলে তারা খুব সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিক্ষার্থীরা যে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাহায্যে সমাধান বের করতে পারে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এনেছে আধুনিকতা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ বহু দুরারোগ্য রোগে প্রায় নির্মূল করেছে। রঞ্জন রশ্মি এবং আরো বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে শল্য চিকিৎসা এসেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। এখন মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার সম্ভব। কিডনি প্রতিস্থাপন হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে নিশ্চিত মানুষের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো হচ্ছে। প্রাণ রহস্যের জটিলতা ষোল আনা নাহক, বারো আনাই ভেদ করা সম্ভবপর হয়েছে

এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ ওতপ্রোতভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। মানুষের ব্যক্তিজীবন যেন এক মুহূর্তের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া কল্পনা করা যাচ্ছে না। ব্যক্তি জীবনের নানা প্রয়োজনীয় বস্তু একদম হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত যা কিছু আমাদের প্রয়োজনীয় তার সবই বিজ্ঞানের আর প্রযুক্তির অবদান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ যেন আমাদের সহচর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করেছে সহজ-সরল ও সচ্ছল। তবে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব শুধু যে কল্যাণ সাধন করেছে তা নয়, অনেক ক্ষতিও করছে। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপব্যবহার না করে আমাদের আরও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।

Related Posts

36 Comments

মন্তব্য করুন