ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা ও এর উৎস সমূহ

ভিটামিন ‘ডি’  মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যা শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় , দাঁত, স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। একজন সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্ক  মানুষের জন্য প্রতিদিন ৬০০- ৮-০০ ইন্টার – ন্যাশনাল ইউনিট ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন হয়। যা মানুষ প্রতিদিনের আহার ও সূর্যের আলো থেকে পুরন করে থাকে। কিন্তু বিশেষ কোন কারনে ভিটামিন ডি এর ঘাড়তি দেখা দিলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।

ভিটামিন ‘ডি এর অভাব জনিত প্রধান কিছু রোগ সমূহ; ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার শরীরে সামান্য থেকে জটিলতর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। নিচে কতিপয় ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত রোগ বা সমস্যা সমূহের বর্ণনা কর হল:

১। মুড ডিসঅর্ডার: ভিটামিন ডি শুধুমাত্র আমাদের শরীর ভালো রাখতেই অবদান রাখে তা কিন্তু নই, বরং আমাদের মুড কেও নিয়ন্ত্রণ করে এই ভিটামিন ডি। কারণ ভিটামিন ডি কে বলা হয়ই ব্রেইনের নিউট্রিশন। ভিটামিন ডি এর অভাব শরীরে দেখা দিলে আমাদের মুড ভালো থাকে না বা তা খুবি ঘন ঘন সুইং করে। তাই আমাদের মুড ঠিক রাখতে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন অনেক।

২। ঘুমের সমস্যা: ভিটামিন ডি কে যেহেতু বলা হয়ই মস্তিষ্কের পুষ্টি বা ভিটামিন তাই এটির অভাবে স্বভাবতই মানব মস্তিষ্ক কর্মক্ষমতা হারাই এবং স্লিপ প্যাটার্ন বিঘ্নিত হয় যা ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি করে।

৩। বিষণ্ণতা ঃ বিষণ্ণতা বর্তমানে প্রাই মহামারি পর্যায় পড়ে গেছে। একটি গবেষণাই জানা গেছে অ্যামেরিকাই আত্মহত্যাকারীদের ৬০ শতাংশ  এর মধ্যে বিষণ্ণতা থাকে। বিষণ্ণতার সাথে আত্ম- হত্যা একটি গভীর ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষণ্ণতার বিভিন্ন কারণ  রয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই হল ভিটামিন ডি এর অভাবে মানুষের মস্তিষ্ক ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না এর ফলে অনেক সময়ই বিষণ্ণতা দেখা দিয়ে থাকে।  তাই এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।

৪। হাড় ও মাড়ির রোগ: ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের শরীর খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে ব্যর্থ হয়ই তাই ক্যালসিয়ামের  অতিমাত্রাই অভাবে আমাদের হাড় ও দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যাই ।

৫। দুর্বলতা ও অলসতা: যেহেতু ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং এটা খাদ্য থেকে শরীরে অন্যান্য পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে তাই ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার শরীর দুর্বল এবং অলসতা চেপে বসবে। ভিটামিন ডি এর অভাবে অনেক সময়ই করম উদ্দীপনা হারিয়ে যাই। কিছুই ভালো লাগে না এবং কিছুই করতে ইচ্ছে হয়ই না।

৬। কোন কারণ ছাড়া অসুস্থ অননুভূত হওয়া; আপনি  ভীষণ অসুস্থ অনুভব করছেন, মনে হচ্ছে আপনার শরীরে অনেক জ্বর কিন্তু , থার্মোমিটারে মেপে কোন জ্বর খুঁজে পাচ্ছেন না। এদিকে মাসেল ব্যথা বা পেইন অনুভব করছেন। এবং রুগী সব সময়ই ক্লেইম করবে যে সে অসুস্থ। পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে  কোন কারণ নির্ণয়ই করা যাচ্ছে না। ঠিক এরকমটি ঘতে অনেকের ক্ষেত্রে। দেখা যাচ্ছে অনেক ভিটামিন খাচ্ছেন অনেক কিছু করছেন কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ঠিক এটাই হয়ে থাকে ভিটামিন ডি এর অভাবে। ঐ সময়ই যদি আপনার ভিটামিন ডি পরিমাণ পরিমাপ করে দেখা হয়ই তাহলে কম দেখা যাবে। অনেক ক্ষেত্রে এরকমটিই ঘটে ।

৭। ক্যান্সার: ভিভিন্ন ধরনের   ক্যান্সার প্রতিরোধে ভিটামিন ডি  বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আবার এটির অভাবে দেহে ক্যান্সার বাসা বাধতেও পারে। বিশেষ করে বন জয়েন্ট ক্যান্সার ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত কারনে হয়ে থাকে।

৮ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: জি, হা ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি একেবারেই কমে জেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অসুখ বিসুখ ভালো হয়ই না ভিটামিন ডি এর অভাবে।

৯ ঠাণ্ডা সর্দি ভালো না হওয়া: ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং ঠাণ্ডা কাশির জম। অনেক সময়ই দেখা যাই অনেকের সর্দি লেগেই থাকে। ঠাণ্ডা , সর্দি ভালো হয়ই না। এটি কিন্তু আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত কারণ হতে পারে।

১০। সিজনাল এফেকটিং ডিসঅর্ডার (এস, এ, ডি) ঃ সিজনাল এফেকটিং ডিসঅর্ডার রোগটি হল এরকম যে আপনার শরীর এবং মন এক সাথে খারাপ অননুভূত হবে প্রতি সিজন বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে। যেমন আপনার বিষণ্ণ লাগতে পারে, মাসেল পেইন, জ্বর জ্বর অনুভূত হতে পারে ইত্যাদি। জি হা এই রোগটি অনেক সময়ই ভিটামিন ডি এর অভাবে হয়ে থাকে যা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং মানব জীবন দুরবিসহকর ।

১১। ত্বক ও চুলের সমস্যা ঃ আমরা সকলেই জানি মাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে  ভিটামিন ডি অনেক প্রয়োজন। ভিটামিন ডি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে থাকে। ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগও  হয়ে থাকে এমনকি তকে সামান্য কেটে গেলে অটা সহজে ভালো হয় না । ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার চুলও  ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চুলের আগা ফেটে যাই, রুক্ষ হয়ে যাই, এমনকি চুল পড়ে গিয়ে মাথাই টাক পড়ে জেতে পারে।

১২। অটো – ইমিউন ডিজিজ ঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে অটো – ইমিউন ডিজিজ হতে পারে।

১৩। জৈবিক সমস্যা ঃ জি হা ভিটামিন ডি এর অভাবে জৈবিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ  যৌন উদ্দীপনা হারান, যৌন বাসনা কমে যাওয়া, ইরেক্টা্ল  ডিস্ফাংশন ইত্যাদি।

১৪। বহুমূত্র রোগীদের জন্য জটিলতার সৃষ্টি করেঃ বহু মুত্র বা ডায়াবেটিস রোগীদের স্বভাবত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম থাকে তাই ভিটামিন ডি এর ঘাড়তি হলে এ সমস্ত রোগীদের যে কোন সমস্যা আরও জটিল হবার সম্ভাবনা থেকেই যাই।

কেন ভিটামিন ডি এর অভাব হয় ঃ   বাংলাদেশে ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত রুগীর সংখ্যা অনেক। সাধারণত পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ না করা। সূর্যের আলোতে না গিয়ে  বাসার ভিতরে বেশির ভাগ সমই কাটানো , পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না কড়াই  শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হবার মুল কারণ।

কিভাবে বুঝবো ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে ঃ   বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগে থাকেন। এর মধ্যে অনেকেই জানেন না যে উনার ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। আবার এ দেশে ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত সমস্যার মধ্যে দিয়ে জীবনাপাত করছেন অসংখ্য রুগী। যারা যথাযথ নিউট্রিশন পাই না। ভিটামিন ডি আপনার শরীরে কেমন আছে এটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাই।  এছাড়া কিছু মৌলিক লক্ষণ দেখেও অনুমান করা সম্ভব যে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে কিনা। যেমন; মাসাল পেইন করা, হাতের নখ ভঙ্গুর হয়ে জাওয়া, কোন কারণ ছাড়া ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা বা চর্ম রোগ হওয়া,ঘন ঘন অসুখ – বিসুখ লেগে থাকা,হজমে সমস্যা, পাতলা পাইখানা, ত্বক ও চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া,  যৌন ইচ্ছা কমে  যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত কারণ।

ভিটামিন ডি এর ঘাড়তি হলে করনিয় ঃ  পরীক্ষা – নিরীক্ষা বা লক্ষণ দেখে যদি বোঝা সম্ভব হয়  যে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে  তাহলে সর্ব প্রথম আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ডি এর যোগান দেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। যেসমস্ত খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে সে সব খাবার খাওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখতে হবে।  প্রাকৃতিক উপায়ে ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সি বা স্বল্পতা  দূর করার জন্য নিচে ভিটামিন ডি এর কিছু প্রাকৃতিক উৎস সমূহ তুলে ধরা হলঃ

 

ভিটামিন ডি এর উৎস সমূহ:

১। সূর্যের আলো ঃ ভিটামিন ডি এর প্রধান ও অন্যতম উৎস হল সূর্যের আলো। আমরা দৈনিক সূর্যের আলো থেকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি। আমরা যদি নিয়মিত ৩০ মিন করে সকাল ১০ তা থেকে দুপুর ৩ তা পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে শরীরকে যতটা সম্ভব এক্সপোজ করে সূর্যের তাপ নিতে পারি তাহলে তা আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পুরন করে।

২। গাঁড়ো সবুজ শাক সব্জিঃ গাড় সবুজ শাক-সবজী তে ভিটামিন ডি রয়েছে। যেমন ঃ ব্রকলি, পালং শাক ইত্যাদি।

৩। দুধ ও ডিমঃ গরুর দুধ ও মুরগির ডিমে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম থাকে। একটি মাঝারি আকারের ডিমের কুসুমে প্রাই ২০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ভিটামিন ডি থাকে ।

৪। লাল মাংস: যে কোন  লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে । যেমন , গরুর মাংস এ প্রচুর ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি পাওয়া যাই।

৫। সামুদ্রিক মাছ:  বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, তেল যুক্ত মাছ বা মাছের তেলে এবং ইলিশ মাছে ব্যাপক পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে।

 

ধন্যবাদ।

Related Posts

18 Comments

মন্তব্য করুন