মশা নিয়ে মজার তথ্য ১৫টি

মশা নিয়ে মজার তথ্য: মশার কামড় খায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দিনে বা রাতে ক্লান্তিকর দিনের পরে কোথাও হাত পা এলিয়ে দিয়ে বসা দায় মশার কারনে। গ্রীষ্মকালে এই উপদ্রব আরো বেড়ে যায় কয়েকগুন। সারাদিন মশার গুনগুন আর কামড় জীবন অতিষ্ট করে রাখে। হয়তো বা এই লিখাটি পড়ার সময় আপনাকে কয়েকটি মশা আক্রমন করার চেষ্টা করছে।

এই মশা শুধু যে বিরক্তিকর প্রানী তা কিন্তু নয়, মশা খাদ্যশৃঙ্খলের অন্যতম একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে। মশা অনেক পোকামাকড়, মাকড়সা, টিকটিকি এবং সালামান্ডারের শিকার হিসাবে কাজ করে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।

মশা নিয়ে কিছু মজার তথ্য

১। পৃথিবীতে ৩৫০০ প্রজাতিরও বেশি মশা রয়েছে

অনুমান করা হয়েছে যে মশারা 100 মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে রয়েছে, তাই এর প্রজাতির সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে। এনোফিলিস মশা একমাত্র প্রজাতি যেটা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। কিউলেক্স মশা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস এবং এডিস মশা ডেঙ্গু, ইয়েলো ফিভার, এনসেফালাইটিস ছড়ায়।

২। শুধুমাত্র স্ত্রী মশা কামড়ায়

আপনি কি জানেন? আপনার রক্ত মশার বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে? আপনার রক্তে প্রোটিন রয়েছে যা মশার ডিমের বিকাশের জন্য প্রয়োজন।

৩। মশা তাদের ওজনের তিনগুণ রক্ত পান করতে পারে

মশা তাদের চোষক নল বা প্রোবোসিসের মাধ্যমে খায়। একটি মজার ব্যাপার হলো আপনার শরীরের সব রক্ত চোষে নেয়ার জন্য ১.২ মিলিয়ন বার মশার কামড় লাগবে।

৪। প্রায় ৭৫ ফিট দূরত্ব থেকে মশা কার্বন ডাই অক্সাইড শনাক্ত করে পারে

কোন মশা শূন্য জায়গায় আরাম করে বসলেন কিন্তু কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মশা আপনার শরীরে কামড় বসিয়ে দিলো। মশার একটি অঙ্গানু অক্সিলারি পাল্প যেটা মানুষের প্রশ্বাসের সাথে বের হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড শনাক্ত করতে পারে।

৫। মশা ঘাম পছন্দ করে

মশারা ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণে আকৃষ্ট হয়,অর্থাথ শুকনো ঘাম রক্ত-তৃষ্ণার্ত পোকামাকড়ের জন্য বিশেষভাবে প্রলুব্ধকর গন্ধ। ম্যালেরিয়া বহনকারী মশা বিশেষ করে ঘামের গন্ধে আকৃষ্ট হয়।

৬। মশার লালা থেকে শরীরে চুলকানি হয়

মশা কামড়ানোর পরে আপনার শরীরে এর লালা লেগে থাকে। মশার লালাতে এন্টি কোয়াগুলেন্ট থাকে যেটা রক্ত চুষে নেয়া আরো সহজ করে দেয়। মশাকে সাথে সাথে অনুভব না করার জন্য শরীরে তার লালার সাথে মাইল্ড পেইন কিলার পুষ করে। এই লালা ত্বকে হাল্কা এলার্জির সৃষ্টি করে যার ফলে চুলকানি হয়।

৭। মশা বাতাস পছন্দ করে না

মশার ওজন ২.৫ মিলিগ্রামের মতো যার কারনে বাতাসকে অতিক্রম করে যেতে পারেনা। তাই অতিরিক্ত মশার উপদ্রব দেখা দিলে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিন।

৮। স্ত্রী মশা একসাথে প্রায় ৩০০ ডিম পাড়তে পারে

স্ত্রী মশা সাধারনত রাতে ডিম পাড়ে। ডিমগুলি স্থির পানির উপরে রাফটস নামক ক্লাস্টারে জমা হয়। মশা নিয়মিত বন্যা হয় এমন জায়গাতেও ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী মশা মৃত্যুর আগে তিন বার ডিম পাড়ে।

৯। মশা তাদের জীবনকালের প্রথম ১০ দিন পানিতে কাটায় / মশা কতদিন বাঁচে

মশা পানিতে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে লার্ভা হয় যাকে উইগ্লার বলে। এই উইগ্লার পানির উপরের জৈব পদার্থ খায় এবং অক্সিজেন নেয়। এই উইগ্লার পরে পিউপাতে পরিনত হয় যেটা কোকুনে আবদ্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন পরে এই পিউপাগুলি প্রাপ্তবয়স্ক মশাতে পরিনত হয়। মশার এই চক্রটি সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ দিন লাগে এবং এর পুরোটা সময় পানিতে কাটে।

১০। মশার গড় জীবনকাল মাত্র ২মাস

এই মারাত্মক প্রজাতি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু মশা মাত্র ২মাস বাঁচে। মিলনের পর, একটি পুরুষ মশা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন বাঁচে এবং একটি স্ত্রী মশা আদর্শ অবস্থায় এক বা দুই মাস পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এই সময়ের মধ্যে মহিলারা প্রতি তিন সপ্তাহে ডিম পাড়ে।

১১। মশা কয়েকটি পদার্থের গন্ধে বিভ্রান্ত হয়

পুদিনা এবং ক্যারামেলাইজড চকলেটের মতো কিছু ঘ্রাণ মশার পক্ষে কার্বন ডাই অক্সাইড শুঁকতে আরও কঠিন করে তোলে। চকলেট পাগল মানুষের চকলেট দিয়ে মশা তাড়ানো ব্যাপারটা খারাপ না। কি বলেন!

১২। মশার নাচ

যখন একটি স্ত্রী মশা এবং পুরুষ মশা মেটিং এর সিদ্ধান্ত নিবে তারা একধরনের নাচ প্রদর্শন করে তাদের ডানা ঝাপ্টে। মজার ব্যাপার হলো এই সময়ে তাদের ডানার বিটের গতি সমান থাকে।

১৩। মশা কেন হাত পা ঘষামাজা করে?

একটু কাছ থেকে খেয়াল করলে দেখবেন মশা সবসময় তার পা গুলো ঘষাঘষি করছে। আসলে মশা নিজেকে পরিষ্কার করে। মশার পায়ে রয়েছে ছোট ছোট লোম যেগুলো স্বাদ্গ্রহন করতে পারে এবং তার শিকারের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। তাই তার এই লোমশ পা ষষ্টক সবসময় পরিষ্কার রাখতে হয়।

১৪। মশার প্রিয় রং

একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে মশা লাল, কমলা, কালো ,সবুজে নীল ধরনের রঙ এর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। প্রধানত গাঢ় রঙের প্রতি আকর্ষন বেশি। তাই দেখা যায় কালো রঙের পোশাক পরিধান করলে মশা চারপাশে বেশি ঘুরাঘুরি করে।

১৫। কোন নিদির্ষ্ট রক্তের গ্রুপের ব্যক্তিকে কি মশা বেশি কামড়ায়?

একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে রক্তের গ্রুপ O বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অন্যান্যদের চেয়ে বেশি কামড়ায়। কারন O রক্তের গ্রুপের ব্যক্তিরা H এন্টিজেন নিসৃত করে যা কিনা মশার প্রিয়।

Related Posts

6 Comments

মন্তব্য করুন