মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

সাজেক পরিচিতিঃ  রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিউয়ন। যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলে ও পর্যটকরা যাতায়াতের সুবিধার কারনে খাগড়াছড়ি জেলা দিয়ে যাতায়াত করে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে সাজেকের দুরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।

সাজেকের ভৌগলিক অবস্থানঃ সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সিমান্তে অবস্থিত। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিনে রাঙ্গামাটি লংগুদু উপজেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরাম পশ্চিমে খাগড়াছড়ি দীগিনালা অবস্থিত। সাজেকে একটি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে , বিজিবি ক্যাম্পটি বাংলাদেশের সর্বোচ্ছ উচুতে অবস্থিত। সাজেক রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়া এই দুটি পাড়া নিয়ে গঠিত। দুর্গম এই পাহাড়ে  লুসাই,পাংখোয়া,ত্রিপুরা রবং চাকমা আদিবাসীদের বসবাস। রুইলুই পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট  থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট। আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়ে কংলাক পাড়া অবস্থিত ।

কখন যাবেনঃ সাজেকের চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি। ফাল্গুন মাসে শিমুলের সাদা তুলোর মত মঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবে। কখনো বা খুব গরম অনুভব করবেন আবার  কখন যে হুট করে বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে যাবে কিংবা  চোখের পলকেয় মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। বছরের যেকোন সময় আপনি ভ্রমন করতে পারবেন সাজেক ভ্যালি । তবে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি।

ঢাকা থেকে কিভাবে সাজেক যাবেনঃ সাজেকের অবস্থান রাঙ্গামাটি হলেও যাথায়াতের সুবিধার জন্য ঢাকা থেকে আপনাকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছুড়ি যেথে চাইলে শ্যামলি,পাহাড়িকা,শান্তি পরিবহন  ইত্যাদি বাসে করে যেথে পারেন। নন এসি এইসব বাস ভাড়া ৫২০ টাকা এসি বাসে যেথে চাইলে বিআরটিসি,সেন্টমার্টিন পরিবহনে ৭০০ টাকা। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে এইসব বাস কাউন্টার। বাসগুলো সাধরনত রাত ১০ টার দিকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। এছাড়া ও শান্তি পরিবহন ঢাকা থেকে সরাসরি দিঘীনালা  যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা। তাই ছুটির দিনগুলোতে যাথে চাইলে অগ্রীম টিকেট কেটে রাখা ভালো, নইতো জামেলা পোহাতে হতে পারে।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দুরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে সাজেক যেথে পারবেন। যাওয়া আসা সহ ২ দিনের ভাড়া আট থেকে দশ হাজার টাকা। এক গাড়িতে ১২ থেকে ১৫ জন যাওয়া যায়। তবে দুর্গম পাহাড়ি কাচা রাস্তা হওয়ার কারনে সিনএনজি দিয়ে ভ্রমন না করা ভালো। আর অভিজ্ঞতা বিহীন ড্রাইভার না নেয়া ভালো।

চট্টগ্রাম থেকে কিভাবে যাবেনঃ  চট্টগ্রাম কদমতলি বা এক্সিজেন থেকে এসি অথবা নন এসি বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম অক্সিজেন থেকে ১ ঘন্টা পর পর শান্তি পরিবহন চলাচল করে ভারা ১৯০ টাকা । চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যেথে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেকঃ  রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক সড়ক ও পানি পথে যাওয়া যায়। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ টা ৩০ হতে ১০ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে। বাঘাইছুড়ি যেথে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। জনপ্রতি লঞ্চ ভাড়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে বাস ছাড়ে। ভাড়া ২০০ টাকা । সময় লাগে  ৬/৭ ঘন্টা

কোথায় থাকবেনঃ  সাজেকে থাকার জন্য প্রায় শতাদিক রিসোর্ট আছে। যেমন- রিসোর্ট রুংরাং, সাজেক রিসোর্ট, রুন্ময় রিসোর্ট মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট, ম্যাড ভ্যেঞ্জার রিসোর্ট ইত্যদি। এক রাতের জন্য রুম ভাড়া রিসোর্ট ভেদে ১৫০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে যারা ছুটির দিনে যেথে ইচ্ছুক তারা মাসখানেক আগে থেকে রুম বুকিং করলে ভালো, না হলে ভালো রুম পাওয়া যায় না তবে সাজেকের সব রিসোর্ট ভালো। সাজেকের সব রিসোর্টে খাবারের ব্যবস্থা আছে। তাই আগে থেকেই রিসোর্টগুলোতে বলে রাখলে পছন্দ মত খাবার রান্না করে দিবে। সেক্ষেত্রে প্রতিজন প্রতিবেলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিল দিতে হবে।

Related Posts

20 Comments

  1. সাজেক ভ্যালীতে উন্নয়নের নামে জমি দখল, পরিবেশ নষ্ট ও , পাহারীদের উপরে যে অত্যাচার চলছে তার বিরুদ্ধে দাড়াই আসুন! পাহাড়ীদের ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দেয়া ও তাদের জীবনের মান এর উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে আমাদেরই! 💞 সাজেক ঘুরতে গেলে তাদের এবং প্রকৃতির খেয়াল রেখে ঘুরবেন 💞

মন্তব্য করুন