যেভাবে আপনার শিশুকে পড়াশোনা শেখাবেন।

বলা হয়ে থাকে একজন শিশুর শিক্ষার সূতিকাগার হলো তার পরিবার। অর্থ্যাৎ, প্রতিটি শিশুর শিক্ষা জীবনের ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষাটা অতি যত্নের সাথে শুরু হয় তার পরিবার থেকেই। আরও বেশি স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, একজন শিশুর মায়ের কাছেই শুরু হয় সেই শিশুর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। তবে কোনো পরিবারই অস্বীকার করতে পারবেনা যে শিশুর পড়তে কিংবা লিখতে শেখার শুরুতে শিশুকে নিয়ে সকল বাবা মায়েরই নানারকম ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। শেখানোর কৌশল হতে পারে একটি সহজতম উপায়। তাই একটু ধৈর্য ধরে আর কৌশল অবলম্বন করে অতি যত্নে পড়াতে হবে শিশুকে। তার মনে মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলার বীজ বুনতে হবে একদম শিশুকাল থেকেই। আসুন শিশুকে শেখানোর কিছু কৌশল জেনে নিই।

শিখনের শুরুটা হোক মায়ের ভাষা বাংলায়ঃ

আমরা বাঙালি। তাই বাংলা হলো আমাদের মাতৃভাষা। বাংলাতেই শুরু হয় আমাদের সবার অনুভূতি প্রকাশ। স্বাভাবিকভাবেই আপনার সন্তানকে শুদ্ধ বাংলাটা প্রথমে শেখানো প্রতিটি পরিবারের বা শিশু সন্তানের বাবা-মার দায়িত্ব। তবে জীবনের প্রয়োজনে কখনো ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষা শিখতে হবে এটা সত্য যে রক্ত দিয়ে কেনা এ বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের সকলের গুরুত্ব দেয়াটা অতীব জরুরি বিষয়।

মাকে হতে হবে সহনশীলতায় অনন্যঃ

একজন বাচ্চা যখন তার লেখাপড়ার শুরুর দিক অতিক্রম করবে তখন মাকে অবশ্যই সহনশীলতার অনন্য উদাহরন হতে হবে। বাচ্চা যদি পড়তে না চায়, অতিরিক্ত কান্নাকাটি বা বিরক্ত করে সেক্ষেত্রে মাকে অবশ্যই ধৈর্যের পথটি অবলম্বন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে এ রকম হয় যে শিশু পড়াশোনা বাদ দিয়ে মনের আনন্দে চঞ্চলতা নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ পড়তে বসার কথা বললে সেই শিশুর মাথায় যেন ভর করে বসে দুষ্টুমি। কখনও কখনও ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে আবার কখনওবা সময় অসময়ে টিভি দেখার বায়না ধরে আপনার শিশুটি। আপনার শিশুর এই শিশুতোষ মনোভাবে হুট করেই আপনি আপনার মেজাজ হারিয়ে ফেলবেন না। অনেকেই আবার বাচ্চার সামান্য ভুলে গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন যা ঠিক নয়। বাচ্চার পড়াশোনা শুরু করার প্রাথমিক ধাপটা খেলার ছল ও আনন্দদায়ক করার দায়িত্বটা অবশ্যই পিতামাতার।

চাই একটা উপযুক্ত পরিবেশঃ

<

আমাদের দেশে এখন তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সেই শিশুর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয়। এই বয়সে শিশুর লেখাপড়া শেখার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর অনুকরণ প্রিয়। তারা তাদের আশপাশের অনেক কিছু দেখে শিখে। আর শিশুর এই শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা শিশুকে পড়তে বসার কথা বলে নিজে টিভি দেখতে বসে যাই যা মোটেও ঠিক নয়। এতে শিশুর পড়াশোনায় অনীহার সৃষ্টি করে। শিশুর বই পড়ার সময়টা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। শিশুর পাশে থেকে তাকে বোঝাতে হবে যে পড়ালেখার সময়টায় আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সম্ভব হলে শিশুর জন্য আলাদা একটি পড়ার রুমের ব্যবস্থা করুন। আপনি ইচ্ছে করলে শিশু যে রুমে ঘুমায়, সেই রুমের কোনায় একটি পড়ার টেবিল দিয়ে দিন।

কৌশলে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলুন। কারন এটা তাদের খেলাধুলা করার বয়স। এই বয়সে পড়তে বসালে বিরক্ত হওয়ারই কথা। কাজেই শিশুর পড়াশোনা শুরুর অনেকদিন আগে থেকেই তাকে পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। শিশুকে বিভিন্ন মজার ছড়া শোনাতে হবে। তাকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুর মাঝে যদি গল্প শোনার ঝোঁক থাকে। তাকে পাশে নিয়ে মজার মজার গল্প পড়ে শোনান। এভাবে শিশুকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের আগে তৈরি করে নিতে হবে।

শিশুর মধ্যে বাল্যকাল থেকে ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে হবে। যেসব ছাত্র লেখাপড়ায় ভালো, নিয়মিত ক্লাস করে, মেধাবী, আচার-আচরণ ভালো, খেলাধুলা করে, লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহিত্য-উন্নয়নমূলক চর্চা করে এমন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাচ্চাকে মিশতে উদ্বুদ্ধ করবেন।

আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন