যেভাবে আপনি আপনার স্কুল পড়ুয়া শিশুর উন্নতি করবেন!

শিশুদের সফলতার অনেকাংশে নির্ভর করে তার অভিভাবকদের উপর। কারণ শিশুরা পরিচালিত হয় তাদের অভিভাবকদের দ্বারা। সেক্ষেত্রে পরিচালনা সঠিক হলে তাদের সঠিক পথে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যথায়…

অভিভাবকদের সাপোর্ট শিশুদের সফলতার চাবি হিসেবে কাজ করে। কারণ, একটি শিশুর প্রথম এবং সর্বোত্তম শিক্ষক থাকেন অভিভাবক। এক্ষেত্রে, যখন অভিভাবক এবং পরিবার একটি শিশুকে স্কুলে যেতে, পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করে তখন শিশুটি স্কুল এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে এবং পড়াশোনায় ভালো করে।   স্কুল পড়ুয়া শিশুর উন্নতি করতে অভিভাবকরা যেভাবে সাহায্য করবে তার অনেক উপায় রয়েছে, তার মধ্যে কিছু এখানে তুলে ধরা হলো।

স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুলুন।

পনার শিশু ভালো পারফর্ম করতে পারবে না যখন সে মাসসিক এবং শারীরিকভাবে দুর্বল থাকবে। স্কুলে সেরাটা দেখাতে চাইলে তাকে অবশ্যই মানসিক এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী বা স্ট্রং হতে হবে। তাই, আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সে যেন স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস বা হেলথি হ্যাবিট অনুসরণ করে।

  1. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম যাতে হয় সেরকম একটা টাইম সেট করে দিন।
  2. প্রত্যেক খাবার সময়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দিন। বিশেষ করে সকালের নাশতায়।
  3. ব্যয়াম এবং হাটাহাটিতে উৎসাহিত করুন।
  4. ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, লেপটপ, ভিডিও গেমস ইত্যাদি ব্যবহার লিমিটের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।
  5. প্রকৃতির সাথে মেশানোর চেষ্টা করুন। এতে সে সতেজ থাকবে।

মানসম্মত একটি রুটিন তৈরি করে দিন।

রুটিন অনুসরণ করা পৃথিবীর অন্যতম একটি কঠিন কাজ। কিন্তু যখন সেটি মানসম্মত হবে তখন অনুসরণ করা মজাদার হবে। আপনার শিশু ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যা করে সেগুলোই রুটিনে রাখবেন। তবে ব্যতিক্রমটা হচ্ছে, উক্ত কাজগুলোর মধ্য থেকে ইতিবাচকগুলো রেখে নেতিবাচকগুলো বাদ দিয়ে দিবেন আর ইতিবাচকগুলোকে মজাদার করে তুলবেন।

যেমন ধরেন, আপনার শিশু হাটাহাটি করে ৫ মিনিটের কম কিন্তু ভিডিও গেমস খেলে টানা ঘণ্টার ঘণ্টা। এক্ষেত্রে আপনি এইটা পরিবর্তন করতে পারেন।

  1. রুটিনকে মজাদার করতে বিভিন্ন ট্রিক্স ফলো করুন।
  2. ইতিবাচক কাজগুলোর প্রতি যাতে ঝোঁক বেশি হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  3. কঠিন রুটিন বর্জন করুন।
  4. রুটিন একদম সহজ করে দিন যাতে অনুসরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

কিছুদিন পর পর রুটিন পরিবর্তন করে দিন।

একই রুটিন অনেকদিন যাবৎ অনুসরণ করার ফলে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। তাই কিছুদিন পর পর রুটিন পরিবর্তন করুন। রুটিনে নতুনত্ব নিয়ে আসুন। পড়ার সময়, খেলাধুলা করার সময়, টেলিভিশন দেখার সময় ইত্যাদি পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।

  1. নতুন রুটিনে নতুনত্ব আনুন।
  2. রুটিন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিশুদের বিভিন্ন মতামত নিন।

সবসময় নতুন কিছু শেখা্নোর চেষ্টা করুন।

আপনার শিশুকে প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তবে বই হাতে ধরিয়ে দিয়ে টেবিলে বসিয়ে রাখবেন?  নাহ! এটা ভুলেও করবেন না।

শিশু মানেই কিউরিসিটি! উদাহরণ- “তুমি তোমার হাত ইচ্ছেমতো নাড়াতে পারো? এই দেখো আমি পারি” আপনি যখন এইটা আপনার শিশুকে জিজ্ঞেস করবেন, তখন দেখবেন তার আগ্রহ হবে।

সে হাত নাড়াবে আর বলবে সে পারে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করুন, “তুমি যে নিঃশ্বাস নিচ্ছো এটা কি তুমি সবসময় নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী নাও, নাকি আপনাআপনিই হয়ে যায়?”

তারপর সে কিছুক্ষণ শ্বাস নেবে ইচ্ছে করে। তারপর সে নিঃশ্বাস আটকে রাখার চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবেনা। তাই সে বলবে, “নাহ, এটা তো নিজে নিজেই হচ্ছে’’।

তারপর আপনি আলতো করে তাকে ঐচ্ছিক পেশি আর অনৈচ্ছিক পেশির ব্যপারটা বুঝিয়ে ফেলতে পারবেন। তবে প্রথমেই ঐচ্ছিক পেশি আর অনৈচ্ছিক পেশি’ এগুলো বলার দরকার নেই। সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেবেন ইচ্ছে করে নাড়াতে পারা অংশগুলো আর অমনি অমনি নড়তে থাকা অংশগুলো।

  1. নিত্যদিনকার ঘটা স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক জিনিসগুলো আপনি সহজেই নরম গলায় তাদের বুঝিয়ে ফেলুন।
  2. তবে এগুলোর ক্ষেত্রে বইয়ের ভাষা কম ব্যবহার করবেন।
  3. বইয়ের থিওরিটা সহজ উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবেন কিন্তু থিওরি এর নাম বলার দরকার নেই। তাহলে শিশুরা সেটাকে কঠিন ভাবে নেবে।

মানুষ মাত্রই ভুল। এই কথাটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। যেইটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। স্বভাবতই শিশুরা কোনো ভুল করলে আমরা বড়রা ধমক দেয়, বকাবকি করি। কিন্তু খুব সংখ্যকই  ভুল করার কারণটুকু বের করে সুন্দরভাবে পরিচালনা করি।

ভুল করার পর ধমক দেওয়া হলে একটা শিশু তখন কী শিখে?
ধমক, রাগ…এরকম নেতিবাচক জিনিসপাতি।

ভুল করার কারণটুকু বের করে সুন্দরভাবে পরিচালনা করলে একটি শিশু কী শিখে?

একটা নতুন কিছু শিখে, ভুল করলে নতুন কিছু শেখা যায় ইত্যাদি ইতিবাচক জিনিসপাতি।

  1. ভুল করলে ধমক নয়, বরং ভুলটা বের করে পরিচালনা করুন।
  2. সেক্ষেত্রে নেতিবাচক কিছু হলে সেটা ত্যাগ করা কেন প্রয়োজন সেটা বুঝিয়ে বলুন। তবে অবশ্যই সেটা আলতো করে বলবেন, উদাহরণ দিয়ে বলবেন।

আগ্রহ দেখানোর চেষ্টা করুন।

আপনার শিশু যখন নতুন কিছু শিখছে বা শিখতে চাচ্ছে বা বোঝার চেষ্টা করছে তখন শুধু বই ধরিয়ে দিয়ে মুখস্ত করাবেন না। যেই জিনিসটা সে শিখছে বা শেখার চেষ্টা করছে আপনিও সেটাতে আগ্রহ দেখান। এতে তার আগ্রহ দ্বিগুন বেড়ে যাবে। আর আপনি যখন আগ্রহ নিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিবেন তখন সে সহজেই সেটা ক্যাচ করে ফেলবে। এটা তার পড়াশোনা বা নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে।

  1. আপনার আগ্রহই আপনার শিশুর আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে। তাই বেশি বেশি আগ্রহ দেখানোর চেষ্টা করুন।
  2. শেখার প্রতি আগ্রহ থাকার গুরুত্ব আপনার শিশুকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।

পড়াশোনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গেমসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।

পড়াশোনার চাইতে ভিডিও গেমস বেশি প্রাধান্য দেয় আপনার শিশু? পড়াশোনাটাকেই গেমসের মতো বানিয়ে দিন তাহলে! কিন্তু কীভাবে?

কোনো একটি টপিক পড়ার সময় সেই টপিক নিয়ে মজার মজার খেলা বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। সেক্ষেত্রে আপনি গুগল বা ইউটিউভের সাহায্য নিতে পারেন। বর্তমানে পড়াশোনাকে খেলার মতো বানানোর অনেক বৈজ্ঞানিক মেথড রয়েছে। একটু রিসার্চ করলেই আপনি সেগুলো পেয়ে যেতে পারেন।

  1. খেলাধুলার মাধ্যমে পড়াশোনা বা কিছু একটা শেখা খুব তাড়াতাড়ি যেমন শেখা যায় তেমনি ব্রেইন অনেক সহজে ক্যাচ করে ফেলে এবং ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক ক্ষেত্রে কম থাকে।
  2. তবে শুধু একধরণের খেলা নয়, খেলা পরিবর্তন করতে হবে নয়তোবা একঘেয়েমি চলে আসবে।

পারফর্মেন্স নয় বরং শিখার দিকে লক্ষ্য রাখুন।

আপনার শিশু রেজাল্ট নিয়ে আসার পর কোনো বিষয়ে আশানুরূপ ফলাফল না হলে তাকে বকাবকি করেন? এতগুলো প্রাইভেট/টিউটর রাখার পরেও এমন কেন হলো এগুলো নিয়ে কথা শোনান?

নাহ! এইগুলো ভুল। এইগুলো আপনার শিশুর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নষ্ট করে, মানসিকভাবে সে ভেঙে পড়ে। কারণ শিশুদের অভিমান বেশি।

তার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণটুকু খুঁজে বের করুন। কোন অংশে সে খারাপ করেছে সেইগুলো দেখুন। সেটাতে ভালো করতে, উন্নত করতে সাহায্য করুন।

গ্রেড এর চাইতে সে কতটুক পড়াশোনা করছে, কতটুক শিখছে সেগুলো লক্ষ্য রাখুন, পর্যবেক্ষণ করুন। যেখানে কমতি দেখবেন, পারছেনা দেখবেন সেখানে সাহায্য করুন।

  1. রেজাল্ট এর চাইতে পড়াশোনাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা আপনার শিশুকে বুঝিয়ে বলুন।
  2. পড়াশোনা আর শেখা ভালো চললেই রেজাল্ট বা গ্রেড ভালো হবে এটাও বুঝিয়ে বলুন।

শাস্তি নয় বরং পরিণাম দ্বারা মোটিভেট রাখুন।

“দশ মিনিটের মধ্যে তুমি যদি হোম ওয়ার্ক কমপ্লিট না কর, তাহলে তোমার ভিডিও গেমস খেলা বন্ধ”।

আমাদের দেশের কমন সিন এইটা। কিন্তু এটা যুক্তি সংগত নয়।

হোম ওয়ার্ক শেষ না করলে কী কী ক্ষতি হতে পারে সেইটা দিয়ে মোটিভেট করুন।

পরীক্ষার আগে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস হওয়ার জন্য পানিশমেন্ট দিয়ে পড়তে না বসিয়ে বরং পরীক্ষার হলে প্রশ্ন কমন না পেলে যে ভয়ংকর  সিচুয়েশনে পড়তে হবে সেইটা ফিল করানোর চেষ্টা করুন।

  1. শিশুকে আত্ম-রক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করুন।
  2. শেখার কার্যকরী গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করুন।

ধন্যবাদ এতক্ষণ আমার লিখা আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। কথা হবে পরবর্তী আর্টিকেলে। সেই অবধি ভালো থাকুন, শিশুদের যত্ন নিন। আল্লাহ হাফিজ।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন