আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম এবং উষ্ণতম অঞ্চল হল অ্যান্টার্কটিকা। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এতটাই দুর্গম যে এইখানে কোন মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে না। পৃথিবীর দক্ষিণ অংশে অবস্থিত আন্টার্টিকা মহাদেশ। আজ জানবো ইতিহাস, কারা থাকে এই মহাদেশে এবং সেইসাথে জানবো বিজ্ঞানীরা কি কি নিয়ে গবেষণা করছেন অ্যান্টার্কটিকাতে।
আজ থেকে প্রায় ৫০ কোটি বছর পূর্বে আমাদের মহাদেশ গুলো সুপার গন্ডিয়ানা রূপে একসাথে ছিল। পৃথিবীর ভূগর্ভের প্লেটের গতিশীলতার কারণে মহাদেশগুলো আলাদা হয়ে যায়। পৃথিবীর দক্ষিণে অবস্থিত পঞ্চম বৃহত্তম অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের আয়তন ১ কোটি ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ৯৮% অঞ্চলই বরফে ঢাকা। এই বরফের চাদরের সর্বনিম্ন পুরুত্ব এক থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত।
আমাদের পৃথিবীতে যত বরফ রয়েছে তার ৯০% এবং বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৭০% পানি এই মহাদেশে জমে আছে। পৃথিবীর অন্য ছয়টি মহাদেশের কাছে ২০০টির মত দেশ থাকলেও আন্টার্টিকা মহাদেশের অধীনে কোনো দেশ নেই। যেহেতু অ্যান্টার্কটিকাতে স্থায়ীভাবে কোনো মানুষ বসবাস করে না সেহেতু অ্যান্টার্কটিকাতে কোনো দেশ না থাকাটাই স্বাভাবিক। শুধু চারদিকে বরফে ঢাকা দেশটিতে পেঙ্গুইন, শ্বেত ভাল্লুক, সীল, তিমিসহ বেশ কিছু প্রাণী বসবাস করে। আর আপনি একটা যেদিকেই তাকাবেন দেখবেন চারদিকে সাদা বরফে।
ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জেমস কুক ১৯৭৩ সালে প্রথম অ্যান্টার্কটিকা আবিষ্কার করেন এবং ১৮২০ সালে প্রথম তিনজন রাশিয়ান এবং একজন আমেরিকান বিজ্ঞানী প্রথম অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে পা রাখে। আজ থেকে অনেক বছর আগে যখন খনিজ তেল আবিস্কার হয়নি আবিষ্কার হয়নি তখন মানুষের ওপর নির্ভরশীল ছিল। উনবিংশ শতাব্দীতে মানুষ প্রথম তিমি ও সীল মাছ সংগ্রহের জন্য অ্যান্টার্কটিকাতে আসে।
বরফে ঢাকা এই বিশাল মহাদেশে মাত্র দুইটি ঋতু, শীত ও গ্রীষ্মকাল। এ দুটি ঋতুতে অ্যান্টার্কটিকাতে রাত ও দিন পার্থক্য। অ্যান্টার্কটিকাতে গ্রীষ্মকালে কখনো সূর্য অস্ত যায় না। এ সময় দিগন্ত বরাবর সূর্য চারদিকে ঘুরতে থাকে। আর শীতকালে টানা চার মাস সূর্যই ওঠে না, এবং শীতকালে অ্যান্টার্কটিকায় চাঁদ উঠলে তা টানা এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেখা যায়।
শীতকালে এইখানে গড় তাপমাত্রা থাকে -৮০ থেকে -৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গ্রীষ্মকালে অ্যান্টার্কটিকায় গড় তাপমাত্রা থাকে ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ হাজার বিজ্ঞানী অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণার জন্য আসেন। আর শীতকালে এক হাজারের চেয়েও কম বিজ্ঞানী এ চরম প্রতিকূল পরিবেশে গবেষণা করতে আসেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিজ্ঞানীদের সমাজ টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যান্য পেশার কিছু লোকজনও আসেন।
অ্যান্টার্কটিকার মাঝখানে অবস্থিত পর্বতমালা অ্যান্টার্কটিকাকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। অ্যান্টার্কটিকা পূর্ব ও পশ্চিম অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকের তুলনায় এর পূর্ব দিকের শীতের প্রকোপ অনেক বেশি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে এ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশটি গলতে শুরু করেছে। অ্যান্টার্কটিকার বরফ যদি এইভাবে গলতে থাকে তাহলে পৃথিবীর বড় বড় শহর যেমন লন্ডন, নিউইয়র্ক, মুম্বাই ইত্যাদি শহর গুলো ভবিষ্যতে পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।