রিভিউ অফ ইয়ামাহা r15 verson 3

আজকে আমি লিখতি যাচ্ছি আমার নিজের ব্যবহার করা Yamaha R15 V3 Indian (Monster Energy) MotoGP Edition বাইকটি নিয়ে আমার ছোট অভিজ্ঞতা। আর একই সাথে তুলে ধরার ট্রাই করবো Indian R15 & Indo R15 এর মধ্যকার কিছু কথা।
আমি এই বাইকটা নিয়ে ২ টা শর্ট রাইড করেছি হাইওয়েতে। একটা ঢাকা-কুমিল্লা-ঢাকা আরেকটা ঢাকা-ভৈরব-ঢাকা। এপ্রোক্স দুইটাতে ২০০+২০০ কিমির মতো। আর বাকি ৮০০ কিমির মতো চালিয়েছি ঢাকা সিটি তে। মোট ১২০০ কিলোর মতো। তবে যেহেতু স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক আগেও কয়েকটা আল্লাহ চালানোর তৌফিক দিয়েছিলো তাই ১২০০ কিলোতে মোটামোটি যা বোঝার বুঝতে পেরেছি বাইক টি নিয়ে। এবার কথা না বাড়িয়ে চলে যাই বাইক টি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা আর একই সাথে আমি পাশাপাশি Indo R15 V3 এর কথাও উল্লেখ করলাম যাতে বুঝতে সুবিধা হয় আপনাদের যে আসলেই কোনটা আপনি নিবেন আর কেনো নিবেন 🙂
.
.
#ব্যালেন্সিং : প্রথমেই আসি বাইকের ব্যালেন্সিং নিয়ে। R15 V3 কে ব্যালেন্সিং এ মার্ক ১০/১০ না দিয়ে কোনো উপায় নেই কারন সত্যিই অসাধারন ফিল দেয়। তবে R15 V3 এর যে ইন্ডিয়ান ভার্শন টা এখন এভেইলেবল এটার হ্যান্ডেলবার টা একটু আপরাইড করাতে আমার মনে হয় Indo R15 v3 এর তুলনায় Indian R15 v3 এর ব্যালেন্সিং একটু পিছয়ে। এই দিক থেকে Indo R15 v3 কে ১০/১০ দিলেও কর্নারিং বা সব কথা ভেবে Indian R15 v3 কে আমি মার্ক দিবো ১০ এর মধ্যে ৮.৫ ।
.
#ব্রেকিং : যদি ব্রেকিং সিস্টেমের কথা বলি আমার মতে বাংলাদেশের স্পোর্টস সেগমেন্টে এটা বেস্ট ব্রেকিং সিস্টেমের বাইক। আর বাংলাদেশের রোড ব্যবস্থার সাথে আসলে IRC টায়ারের তুলনায় Indian R15 V3 তে দেওয়া MRF টায়ারের সাথে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস এর কম্বিনেশ টা আসলেই অসাধারন। এইদিক থেকে আমার রেটিং ১০/১০ Indian R15 v3 কে।
.
#মাইলেজ : আমার মনে হয় বাংলাদেশে স্পোর্টস বাইকের মধ্যে সেরা মাইলেজ দেয় এটি। ঢাকায় লো আর.পি.এম এ চালালে ৪৫ এর মতো মাইলেজ পাবেন। হাইওয়েতেও লো আরপিএম এ ৪৫+ মাইলেজ পাবেন। তবে হাই আরপিএম এ চালালে বা এভারেজ চালালে ঢাকায় মাইলেজ পাবেন ৩২/৩৫ আর হাইওয়েতে ৩৭-৪০ এর মতো।
.
#আউটলুক_ও_স্পেশাল_ফিচার: এর আউটলুক নিয়ে বলার মতো কিছু নেই সত্যিই অসাধারন সাথে স্লিপার ক্লাচ, ভিভিএ টেকনোলেজিতে বলাই যায় পিওর রেসিং ডি.এন.এ ।
.
#সিটিং_পজিশন : এজ এ স্পোর্টস বাইক যদি চিন্তা করি বাইকের সিটিং পজিশন খুব ভালো যা রেস করার জন্য পারফেক্ট বাংলাদেশের অন্য যে কোনো স্পোর্টস বাইকের তুলনায়। তবে বাংলাদেশের রোড ব্যবস্থা বা রাইডের কথা চিন্তা করলে সারাক্ষন নিচু হয়ে এরোডায়ন্যামিক শেপে বসে চালানো কষ্টকর। আর সিট থেকে হ্যান্ডেলবারের ডিসটেন্স টা অনেক বেশি হওয়ায় রাইডার চাইলেও রিলাক্স ভাবে বসতে পারবেন না এবার যেমন রাস্তাতেই বাইক চলুক।
.
#কমফোর্টনেস : আসলে স্পোর্টস বাইকে কমফোর্টনেস টা কখনই তেমন থাকে না। তবে বাংলাদেশে R15 এর কম্পিটিটর CBR এর কথা যদি চিন্তা করি সেই হিসেবে R15 তুলনামুলক লুক আর সিটিং পজিশন হাই রেসিং শেপ হওয়াতে কমফোর্ট লেভেলের ঘাটতি অনেক টাই দেখা দিয়েছে। যদি এই বাইক নিয়ে কেউ ঢাকা তে ডু টু ডে লাইফে বাইক চালানোর চিন্তা করেন বিরক্ত হয়ে পড়বেন হাত, ঘাড় কোমড়ের ব্যাথায়। আর পিছনে যদি পিলিয়ন নেন তাহলে খুব বাজে ফিল হবে। আর হাতে খুব বেশি পরিমানে পেইন হবে। আস্তে আস্তে এটা যদিও অভ্যাস হয়ে যাবে কিন্তু এটা শারিরীকভাবে ক্ষতিকর। আর স্পোর্টস বাইক হওয়াতে এটার শকাপ টাও এই টাইপের বিলড করা। তাই নরমাল রাস্তায় চালানো তে ভাংগা তে খুব বাজে ফিল করবেন। কোমড়, মাথা, হাত সব কিছুতে ব্যাথা অনুভব করবেন।
.
#হাইওয়ে_রাইডিং : হাইওয়েতে স্পিডিং করে আনন্দ পাবেন। ব্রেকিং ভালো হওয়াতে কনফিডেন্স লেভেল ভালো পাবেন। কিন্তু লং রাইডের ক্ষেত্রে সিটিং পজিশন আর শকাপের কারনে পেইন ফিল করবেন। যদি কেউ লং রাইডের কথা চিন্তা করেন তাহলে অবশ্যই কমফোর্ট লেভেল টা চিন্তা করতে হবে। কারন বাইকের টান, ব্রেকিং যতই ভালো হোক যদি লং রাইডে আপনি কমফোর্ট ফিল করেন না করেন সেই বাইক আপনার ভালো লাগবে না। তাই আমি সাজেস্ট করবো এই দিকে চিন্তা করলে CBR নিতে।
.
#হেডলাইট : হেডলাইটের লুকিং খুব সুন্দর হলেও আলো নেই বললেই চলে। রাতের বেলা আপনি ঢাকাতে চালাতে পারবেন কোনোভাবে তবে হাইওয়েতে প্রশ্নই আসে না। একহাত সামনে কি আছে তা দেখতে পাবেন না এই আলো দিয়ে।
.
#পিলিয়ন_সিট : পিলিয়ন বসার যোগ্য কোনো বাইক R15 V3 না। আসলে ফুল স্পোর্টস বাইক গুলো পিলিয়নের জন্যেও না। রাইডারের একদম সামনে ঝুকে পড়তে হয় বলে পিলিয়নকেও সঠিক ভাবে বসতে হলে একদম ঝুকে পড়তে হবে যা মা, বোন, বাবা বা নন বাইকার পিলিয়নদের জন্য বিরক্তিকর।
.
.
* বাইকের প্রাইজিং অযথাই বেশি। প্রচুর ওভার প্রাইজ আমার কাছে মনে হয়েছে। Indian R15 V3 ৪ লাখ ৮৫ হাজার আর এই এডিশন টা শুধু স্টিকার লাগানোর পর ৪ লাখ ৯৫ হাজার যেখানে স্টিকার গুলাও একদম নরমালি লাগানো মনে হয় বংশালের কোনো দোকান থেকে লাগানো।
* Indo এর তুলনায় Indian R15 v3 এর বিল্ড কোয়ালিটি আর গুনগত মান অনেকটাই কম লেগেছে। ইঞ্জিন লংজিবিটির দিক থেকেও ইন্ডিয়ান টা পিছিয়ে থাকবে।
* যদি ফ্যাশেনবল বাইকের কথা চিন্তা করেন R15 v3 আপনার জন্য পারফেক্ট। যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাবেন পাবলিক আই রেস্পন্স ১০০% পাবেন সব বাইকের তুলনায়। তবে ডে টু ডে লাইফে যদি ইউজ করেন কিছুটা বিরক্ত হবেন। আর লং রাইড বা কমফোর্টের চিন্তা করলে এই বাইক সুইটেবল হবে না আপনার জন্য।
* অনেকের কনফিউজশন থাকে যে বাংলা মটোরে পাওয়া আনঅফিসিয়াল আর অফিসিয়াল বাইকের মধ্যে তফাত কি? যেমন ধরেন R15 v3 যেটা অফিসিয়াল শোরুমে ৫ লাখ সেটা বাংলা মটোর বা অন্য যেখানে যারা ইম্পোর্ট করে তাদের কাছে ৪ লাখ ৪০। কোনো তফাত নেই শুধু ওয়ারেন্টি ছাড়া। আর এইসব বাইকে কোনো ওয়ারেন্টির দরকার হয়না আর ফ্রি সার্ভিসেরো কোনো দরকার হয়না। তাই আপনি আনঅফিসিয়াল নিতে পারেন কোনো সমস্যা নেই।
* বাংলাদেশে অন্য সব স্পোর্টস বাইকের তুলনায় R15 V3 এর পার্টসের দাম তুলনামূলক বেশি।
* বাচ্চা নিয়ে এই বাইক রাইড করা যাবে না তাই যাদের বাচ্চা আছে ইগনোর করেন। এইক্ষেত্রে CBR Thai দেখতে পারেন।
* প্লাস্টিক কোয়ালিটি Indian R15 v3 তে খুবই বাজে। টাংকি তে একদম হালকা করে একটা চাপ দিয়ে নিজেই ট্রাই করবেন। দেখবেন মনে হয় এখনি ভিতরে চলে যাবে।
* ইন্ডিয়ানে সামনের মার্ডগার্ড টা কম্পানি কার্বন ফাইবার দাবী করলেও ঐটা কার্বন ফাইবার না, শুধু কার্বন ফাইবারের স্টিকার।
* খামাকা কেউ টাকা বাড়িয়ে Monster Energy এর স্টিকার কিনবেন না আমার মতো। কম প্রাইজে এই স্টিকার টা ছাড়া কিনে এখন এই স্টিকার বাইরেই পাওয়া যায় অনেক অল্প টাকায়।
* হাইট কম হলে ভি৩ ভালো হবে না আপনার জন্য।
* গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স একটু কম তাই স্পিড ব্রেকারে ঘসা খাওয়ার একটা প্রবনতা থাকে।
.
.
পরিশেষে বলতে চাই R15 V3 ফ্যান্টাসটিক একটা ম্যাশিন। সত্যিই মন্সটার তার জায়গা থেকে। কিন্তু আমাদের চালানো আর আমাদের দেশের রোড ব্যবস্থার সাথে মিলিয়ে যদি আপনি মনে করেন এটা আপনার জন্য পারফেক্ট তাহলে নিতে পারেন। ফ্যাশেনবল বাইক হিসেবে ভালো। কিন্তু যারা ঢাকায় একটু বেশি রাইড করেন বা মটো ট্রাভেলিং করেন আমি তাদের কে R15 v3 সাজেস্ট করবো না। আর যারাই নিবেন Indo Version টা নেওয়ার ট্রাই করবেন, বেটার বিল্ড কোয়ালিটি পাবেন। ইন্ডিয়ানে না যাওয়াই বেটার। Indo ভার্শন অফিসিয়ালি দাম ছিলো ৫ লাখ ২৫। বাংলা মটোর, মগবাজারের ডাইরেক্ট ইম্পোর্ট ভিত্তিক শপ গুলো তে পেয়ে যাবেন তবে Stock Limited ইতিমধ্যেই।
.
আর উপরের সব কথা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা যা আমি আমার নিজের R15 V3 চালিয়ে মনে করেছি। কেউর সাথে ভিন্নমত হতেই পারে তবে আমি আমার জায়গা টা থেকে যত টুকু যা আমি ফেস করেছি নিজ থেকে বলার ট্রাই করেছি সব টুকু 🙂
.
ফ্যাশেনবল বাইক হিসেবে পছন্দ করেছিলাম কিন্তু চালাতে নিজের কাছে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে হাতের পেইন, ঘারের পেইন, পিলিয়ন হিসেবে যাকেই নেই তারই অভিযোগ এইসব ইস্যু নিয়ে। আর আমি আগে সিবিআর চালিয়েছি পর পর ৩ টা। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই যারা সিবিআর রাইড করেন তারা স্পোর্টস সেগমেন্টে কমফোর্টে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাই ভি৩ নিতে গেলে অনেকটা চিন্তা করে নিবেন আশা করি 🙂

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন