লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বনাম লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন। আমরা বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের সকল প্রকার দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করার জন্য প্রযুক্তির ওপর সার্বিকভাবে নির্ভরশীল। মূলত মানুষ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তার জীবনকে আরো সুখময় করে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আবিষ্কার এবং ব্যবহার করে যাচ্ছে। আগুন সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এখন অবধি মানুষ বিজ্ঞানকে তার জীবনের প্রত্যেকটি কাজকে সহজ করার জন্য ব্যবহার করছে।

আর এই বিজ্ঞানের একটি অবিস্মরনীয় আবিষ্কার হল বিদ্যুৎ। এই শক্তির ছাড়া বিজ্ঞানের বর্তমানের প্রায় সবগুলো ক্ষেত্র অকেজো। এই বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়া বর্তমান সময়ে কোন প্রকার প্রযুক্তি কে ব্যবহার করা আমাদের কাছে কল্পনার বাইরে। আর এটি এমন এক প্রকার শক্তি যাকে খুব সহজেই সঞ্চয় করে রাখা যায় এবং আদান-প্রদান করা যায়। এর অন্যতম একটি মাধ্যম হল বিদ্যুৎ কোষ বা ব্যাটারি। যার মাধ্যমে একই সাথে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়, সংরক্ষণ করা যায় এবং সঞ্চালন করা যায়।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক কোষ বা ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকি। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ব্যাটারি হল লিথিয়াম আয়ন এবং লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। আজকে আপনাদের সাথে এই দুটো ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর মধ্যে এই দুটো ব্যাটারির ব্যবহার লক্ষ্য করে থাকি। কিন্তু কেন সব ক্ষেত্রে একই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় না এই নিয়ে আমরা তেমন একটু ও মাথা ঘামাই না। আজকে আপনাদের সামনে কিছু বেসিক তথ্য তুলে ধরব এই দুটো ব্যাটারি সম্পর্কে।

লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি:

এই নামটি আমাদের কাছে অতি পরিচিত এবং অতি জনপ্রিয়। বিশেষ করে আমরা যারা মোবাইল ব্যবহার করে থাকে তাদের কাছে সব সময় এই নামটি অতি পরিচিত। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি অনেক আগে থেকেই প্রায় সকল প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ব্যাটারিটি তৈরি হয় দুই ধরনের রাসায়নিক ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করে যা তরল অবস্থায় থাকে। যেহেতু একদম রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই ব্যাটারীতে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হয় তাই এই ব্যাটারির কর্মদক্ষতা অনেকটাই বেশি হয়। এর মাধ্যমে বেশি শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হয় এবং তা জমা রাখা সম্ভব হয়। এটি একমাত্র ব্যাটারি যার মেমোরি প্রভাব বিদ্যমান। সময় বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যাটারি চার্জ করা একটু কষ্টকর হয়ে যায়। আর যেহেতু ভেতরে রাসায়নিক পদার্থ তরল অবস্থায় থাকে সেহেতু যদি ব্যাটারি তৈরিতে কোন ভুল হয় তবে উভয় ইলেক্ট্রোডে ব্যবহৃত তরল একত্রে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এ কারণে পূর্বে মোবাইল ফোন গুলোতে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় না।

লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি:

এই ব্যাটারিটি বর্তমান সময়ে বেশ প্রচলিত এবং জনপ্রিয় মানুষের কাছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে এই ব্যাটারিটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ভেতরে লিথিয়াম আয়ন এর মত কোন রাসায়নিক তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। বরং এই ব্যাটারিটা একটি শুষ্ক ব্যাটারি। ব্যাটারির উভয় ইলেকট্রোডের মধ্যে রাসায়নিক উপাদান জেলির ন্যায় থাকে। এই ব্যাটারির ওজন ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির তুলনায় অনেক কম হয়। যার ফলে ছোট ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোনের মধ্যে এই ব্যাটারি ব্যবহার করা অনেকটাই আরামদায়ক। কিন্তু লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মত এই ব্যাটারি তেমন দক্ষ নয় এবং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির মত বিদ্যুৎশক্তি ঘনীভূত করতে সক্ষম নয়। অন্যদিকে এই ব্যাটারির উৎপাদন খরচ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় অনেক বেশি।

উপরের এই সাধারণ আলোচনা থেকেই বোঝা যায় যে উভয় ব্যাটারির ক্ষেত্রেই সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারির চেয়ে খানিকটা এগিয়ে থাকবে। কারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির আয়ুষ্কাল লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারির চেয়ে অনেক গুন বেশী। বর্তমানে অবশ্য মোবাইল ফোনের মধ্যে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বেশি ব্যবহার করা হয় না। যদি ফোন কেনার সময় আপনি লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারির জায়গায় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি পান তাহলে মোটেই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ আপনি আগের চেয়ে আরো ভালো কিছু পেতে যাচ্ছেন।

আশা করি পোস্টটি আপনাদের কাজে আসবে।

ধন্যবাদ।

Related Posts

22 Comments

মন্তব্য করুন