লেখকের হতাশা কি কাগজের শূন্য পৃষ্ঠায়?

না লিখতে, না লিখতে এমন হয়ে গেছে যে- এখন লিখতে বসলেও আর লিখতে পারিনা। মনের ভাবনা চিন্তাগুলো নিয়ে যখন ঘন্টার পর ঘন্টা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে খাতার শূন্য পৃষ্ঠার দিকে চেয়ে থাকি, লিখতে গিয়েও কিছুই লেখা হয়ে উঠে না, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় লাগে নিজের অস্তিত্বকে। নিজের অব্যক্ত ভাবকে কলমে, কাগজে ফুটিয়ে তুলতে না পারার যে যন্ত্রণা তা বোধহয় কবিদের থেকে ভালো আর কেউ বোঝে না!

এইতো ঘন্টা চারেক আগে, একটা নোট আর কলম নিয়ে উঠোনের লিচু গাছের নিচে, কাঠের পাঠানো যে বেঞ্জ আছে… সেখানে এসে বসেছিলাম লেখার দুনিয়ায় নিজেকে হারাবো বলে। মনের মধ্যে চলছিল হাজার গল্পের মেলা। অপেক্ষা শুধু কবির ছোঁয়া। যেই কলম ধরে লিখতে গেলাম- ওমা! একি! কিছুই যে কলমের ডগায় আসছে না। এর চেয়ে হতাশাজনক আর কি হতে পারে কবিদের জীবনে?

হতাশা আর ভাবনাগুলো যখন অগোছালো হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে মনে পড়ল গতকাল বিকেলের একটা ঘটনা। তা, গতকাল বিকেলে ভাবছিলাম আমার লেখা শুরু করার জন্যে দেখি… কিছু অনুপ্রেরণামূলক উক্তি খুঁজে পাই কিনা। গেলাম অনুসন্ধান করার জনপ্রিয় মাধ্যম গুগলে।

সার্চবারে গিয়ে লিখলাম – Motivational quote for writers. বরাবরের মতই সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনে এসে হাজির হলো অনেকগুলো উক্তি। তার থেকে একটা উক্তি চোখের সামনে এসে পড়ল-
“Start writing no matter what.
The water doesn’t flow until
the faucet is turned on.”
– Louis L’ Amour

লেখালেখির ইচ্ছে আমার কবে তৈরি হয়েছিল যদি বলি, তবে ফিরে দেখতে হবে আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগে। তখন আমি সবে উচ্চমাধ্যমিকের এক নবীন শিক্ষার্থী। ক্লাস সিক্স এ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সুবাধে মায়ের কাছ থেকে বাবার একটা ডায়েরি পেয়েছিলাম…যেটির উপর আমার নজর ছিল সেই ক্লাস থ্রি থেকে!

যাহোক- নতুন স্কুল, নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু ; সবমিলিয়েই সপ্নের মত দিনগুলো ছিল। আর সঙ্গে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জগৎ যার সাথে আমার পিছনে কাটানো দশ বছরের ছিল একদম আকাশ-পাতাল তফাৎ। সেই থেকে আমার দৈনন্দিন জীবনে কি হচ্ছে সব লিখে রাখতাম আমার ডায়েরির পাতায়।

<

এই লেখালেখির ইচ্ছে, আমার একদিনে তৈরি হইনি। এর পিছনে হাত ছিল আমার বড় দুই ভাইয়ের… যারা আমার জন্যে খুব ছোটবেলা থেকেই নিজের অল্প পরিমাণ হাত খরচ জমিয়ে হরেক রকম গল্পের বই এনে দিত। ছোট ভাইয়ার দেওয়া আমার প্রথম গল্প বইয়ের নাম ছিল- গ্রীম ভাইদের রূপকথা।

তখন আমি সবে বাংলা রিডিং পড়া শিখেছি। আমি সব শব্দের অর্থও বুজতে পারতাম না। কিন্তু গল্প পড়ার যে জোঁক তৈরি হয়েছিল সেই থেকে… তা মায়ের শত পিটুনির পরেও আর যাইনি আমার। এবং সেই গল্প পড়তে পড়তেই গল্প তৈরি করার ইচ্ছেও কখন যেন মনের মধ্যে গেঁথে গেল বুঝতেই পারিনি।

যাইহোক, গতকালকের উক্তিগুলো মনে বেশ প্রভাব ফেলেছে। আর সেই উক্তি গুলোই আমাকে আজ কিছু লিখতে সাহায্য করছে। After all we all need to start from somewhere.

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন