লেখাপড়া করে যে, ডিপ্রেশনে ভুগে সে

আজকে আমি আমার কর্মজীবনের কিছু কথা শেয়ার করবো আপনাদের। আমি একজন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক্যাল)।

ডিপ্লোমা কমপ্লিট না করতেই এলাকার কিছু চাচা বলতো বাবা কবে চাকরি পাবা। বাড়িতে না ঘুরে বেড়াইয়া একটা চাকরির ব্যবস্থা করো। এভাবে বাবাকে আর কতদিন কষ্ট দিবা। বাবা তোমাদের লেখা পড়ার পিছনে কত টাকা ব্যয় করছে। আর তোমরা চাকরি-বাকরির কোন চেষ্টাই করো না।

অথচ আমার তখন ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট হয়নি। ইন্টার্নি শেষ করে আসার পর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক বড় ভাইদের বলেছি, এলাকার যারা চাকরি করে তাদেরকে রিকোয়েস্ট করেছি আমার চাকরির জন্য। আমার বাবা অনেকের কাছেই আমার চাকরির দেয়ার কথা বলেছে।

চার-পাঁচ মাস কেটে গেল কেউ আর আমার চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় না। চাকরীরও তেমন সার্কুলার পেতাম না। সার্কুলারে যদিও পেতাম ০৪থেকে০৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা চায়। খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম চাকরি না পেয়ে।

এদিকে এলাকার সমবয়সী ভাইয়েরা অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। তখন তাদের দেখতাম আর নিজেকে ভাবতাম আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। কারণ তারা লেখাপড়া না করেও সফল, কিছু হলেও তারা উপার্জন করতে পারছে। আর আমি একজন বেকার ছেলে।

বাবার কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই ৫০টাকা করে নিতাম। অথচ ৫০ টাকা দে আমার পকেট খরচ চলতো না। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কী করবো মাথায় কিছু ঢুকছে না।আমার বাবা বলতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাও নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা একটা ভালো একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে।

দেখতে দেখতে আরও অনেক দিন কেটে গেল। তারপরে হঠাৎ করে আমাদের এলাকার সম্পর্কে একজন চাচা হয় সে আমাকে মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এ সিমেন্ট এ পাইপ ফিটারের কাজ করতো। আমি তাকে চাকরির কথা বললে সে আমাকে হেলপার পদে চাকরির কথা বলে। ঐ কোম্পানিতে নাকি কিছু সংখ্যক হেল্পার লাগবে। আমাকে আরও বললো যে যখন ইঞ্জিনিয়ার নেয় তখন ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করবেন।

তখন আমি হেলপার পদে চাকরি নেয়ার জন্য মেঘনাতে গেলাম ওই চাকরির জন্য। ওখানে আমাকে ৮০০০ টাকা স্যালারি ধরা হয়। অনেকদিন যাবৎ চাকরি করলাম মোটামুটি ভালই কাজের দক্ষতা হয়ে গেছিলো।
আসলেই মামু, খালু ছাড়া ভাল জব পাওয়া যায় না এটা যখন কর্মজীবনে ঢুকলাম তখনই বুঝলাম ।কোন মতেই সাইড ইঞ্জিনিয়ার পদে ঢুকতে পারলাম না।
হেলপার পদে চাকরি করে চেহারার অবস্থাটাও বেহাল হয়ে গেছিলো। তখন ভাবতাম কেন যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিলাম।

কিছু বন্ধুদের কাছে কথা গুলো শেয়ার করতাম। যে সকল ক্লোজ ফ্রেন্ডগুলো জব করতেছিল তাদেরকে বলতাম আমার একটা চাকরি দেয়ার জন্য। পরবর্তীতে একটা গ্রুপ অফ কোম্পানি তে ট্রেইনি ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি হলো আমার। বেতনের কথা আর কি বলব। আগে হেলপার পদে চাকরি করে যে বেতন পেতাম ইঞ্জিনিয়ার পদে সেই একই রকমই বেতন পেতাম।

বাড়ি থেকে তো আমার পিতামাতা অনেক খুশি হলো। তারা ভাবলো তো আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি হয়েছে বেতন হয়তো ২০০০০হাজার থেকে ৩০০০০ টাকা পাবে। অন্য আরেকটি গ্রুপ কোম্পানি তে আমি অ্যাপ্লিকেশন করলাম চাকরির জন্য। ইন্টারভিউ দিতে গেলাম সেই চাকরিতে জয়েন করার জন্য। ওই কোম্পানিতে ১২ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে ১৩০০০ হাজার টাকা স্যালারি দিতে চায়। অথচ ওই কোম্পানিতে একজন সিকিউরিটির বেতনও ১২০০০ টাকা। আসলে কি বলবো । এখন লেখাপড়া করে চাকরি বাকরি যতটা কঠিন হয়ে গেছে তারপর যদিও একটা জব পাই সেলারি খুবই নিম্নমানের স্যালারি ধরে।

এখন মাঝে মাঝে ভাবি যে আসলে লেখাপড়া না করলে হয়তো ভালো হতো। ছোটখাটো যেকোনো একটা ব্যবসা করলেও মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করা কোন ব্যাপারই না।

আসলে এই পোস্টটা করা উদ্দেশ্য আমার কোন কোম্পানি কে দোষারোপ করার জন্য নয়। আমার কথা হলো নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে আমাদের নিজে কোন উদ্যোক্তা হওয়া প্রয়োজন । সেটা হোক কোন ছোট একটা ব্যবসা।

“প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তাই বলে এক্ষুনি লেখাপড়া বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হতে যাবেন না, উদ্যোক্তা হওয়ার আগে যে জিনিসগুলো প্রয়োজন সেগুলো আগে অর্জন করতে হবে তো, তাইনা? যেমন:- জ্ঞান, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সঠিক শিক্ষা, মানুষের মত মানুষ হওয়া ইত্যাদি। তোমরা লেখাপড়া করবে ঠিকই কিন্তু চাকরি করার জন্য নয়, তোমাদের উদ্দেশ্য হবে অন্যদের চাকরি দেওয়ার, মানে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া।” (গ্রাথোর)

আশা করি সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি।

Related Posts

25 Comments

মন্তব্য করুন