সঙ্গরোধে শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে?

চব্বিশ ঘন্টা চার দেয়ালের মাঝে বন্দী সময় পার করা খুব একটা সুখকর কোন অনুভূতি নয় মোটেও। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে নিজেকে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুস্থ রাখতে এটাই একমাত্র সঠিক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সমস্যা হল প্রাপ্ত বয়স্করা বর্তমান সময় ও  পরিস্থিতি বুঝতে পারলেও শিশুদের বোঝানো ও সামলে রাখা বেশ ঝক্কির বিষয় হয়ে ওঠে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। স্কুলে যেতে হবে না ভেবে প্রথম দিকে খুশি হওয়া শিশুটি তিন-চার দিন ঘরে বসে থাকার পর অস্থিরতা অনুভব করা শুরু করে। হয় ক্লাসের বই নিয়ে বসা নতুবা মোবাইল, টিভিতে সময় কাটানো। এভাবে দিনের পর দিন একটি শিশুর জন্য সময় কাটানো কঠিনই বটে।

এক্ষেত্রে শিশুর মাঝে যেন বিরক্তিবোধ কাজ না করে, সেজন্য বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। একইসাথে চেষ্টা করতে হবে যথাসম্ভব স্ক্রিন টাইম থেকে শিশুদের দূরে রাখার জন্য। কিন্তু এ সময়ে শিশুদের বিরক্তিবোধ, অস্থিরতা কমানোর জন্য কী করা যেতে পারে? প্রথমেই আসবে বই পড়ার কথা। পাঠ্যবই নয়, গল্প-কবিতার বই। অনেক শিশুই বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসে। তাদেরকে নতুন নতুন বইয়ের সাথে পরিচিত করিয়ে দিন। একবারে বইয়ের কাল্পনিক রাজ্যে ডুবে যেতে পারলে অন্য কিছুতে মনোযোগ কাজ করবে না। নিজ থেকে বই পড়তে আগ্রহ না পেলে নিজের কাছে বসিয়ে বইয়ের ছবি দেখিয়ে বই পড়ে শোনাতে হবে। এতে করে ধীরে ধীরে বইয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হবে।

এখানেও একটা কিন্তু আছে। বই একটানা কতক্ষণ পড়া যায়? একটা বই শেষ করতে বড়জোর ৩-৫ দিন প্রয়োজন হয়। এরপরে কি আবারো সেই মোবাইলের কাছে ফিরে যাওয়া? এছাড়া যে সকল শিশুর বই পড়ার প্রতি খুব একটা আগ্রহ কাজ করে না, তারা কী করবে? বই পড়া ব্যতীত শিশুদের ব্যস্ত রাখার অন্যতম চমৎকার একটি উপায় হল ঘরের কাজ। বয়স অনুযায়ী শিশুদের জন্য মানানসই কাজ নির্বাচন করতে হবে। এরপর পয়েন্টের হিসাব তৈরি করতে হবে। যেমন নিজের বিছানা পরিপাটিভাবে গোছালে ১০ পয়েন্ট। টেবিল-চেয়ার পরিষ্কার করলে ৫ পয়েন্ট। খেলনা গুছিয়ে রাখলে ৫ পয়েন্ট। এছাড়া এখন যেহেতু ঘরের বিভিন্ন স্থান বাড়তি সতর্কতার সাথে পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন, সেটাও শিশুদের শিখিয়ে দিন। দরজা-জানালার হাতল, বিভিন্ন সুইচ পরিষ্কার করার জন্যেও পয়েন্ট তৈরি করুন।

এভাবে ছোট ছোট কাজের জন্য পয়েন্ট তৈরি করে জানাতে হবে নির্দিষ্ট একটি পয়েন্ট অর্জন করতে পারলে উপহার স্বরূপ থাকবে টাকা অথবা তার পছন্দের কোন জিনিস। এতে করে খুব সহজেই শিশু দিনভর ব্যস্ত থাকবে। এছাড়া রান্নার সময় শিশুকে পাশে রাখলেও সময় কাটবে খুব ভালো। কীভাবে রুটি তৈরি করতে হয় সেটা দেখান। প্যানকেকের ব্যাটার মেশানো শিখিয়ে দিন। মটরশুঁটি ছিলতে দিন, সিদ্ধ আলু ছিলতে দিন। সিদ্ধ ডিম চটকে দিতে সাহায্য করতে বলুন। এই কাজগুলো শিশু খুব আগ্রহ নিয়েই করবে। কারণ এগুলো তাদের জন্য অন্য রকম অভিজ্ঞতা।

যাদের বারান্দায় শখের বাগান আছে তারা বাগানের পরিচর্যায় শিশুদের হাতেখড়ি দিতে পারেন এ সময়ে। গাছদের পরিচিতি। কীভাবে কোন গাছের যত্ন নিতে হয়। কতটুকু পানি কতদিন পর দেওয়া প্রয়োজন, কোন গাছে কী ধরনের ফুল ও ফল হয় এ সকল জিনিস শিশুদের আগ্রহ তৈরি করবে।

ঘরে থাকার এ সময়টাতে যতভাবে শিশুদের ব্যস্ত রাখা সম্ভব হবে, তাদের মাঝে অস্থিরতা কিংবা বিরক্তিভাব কমে আসবে।তবে এ জন্য নিজেকেই এগিয়ে এসে সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। তাদের যদি শুধু টিভি কিংবা মোবাইল গেইমের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় তবে কোন ফল পাওয়া যাবে না।

Related Posts

18 Comments

মন্তব্য করুন