সতর্ক হই, কাউকে মফিজ বলার আগে ইতিহাস জানি।

“চা খাবেন? ঢেলে দেই?” জনাব তাহেরী সাহেবের এই কথাটির সাথে আমরা কম বেশী সবাই পরিচিত, তাই না? আবার ধরুন, “ওরে বাটপার!” কথাটিও একসময় অনেকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়িয়েছে। আসলে ঘটনা অন্যকিছু। আমরা জাতি হিসাবে বাঙ্গালী। আর এই বাঙ্গালী জাতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পরচর্চা করা। একজন একটি কথা বলেছেন, সেটার মর্মার্থ অনুধাবন না করেই তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করাটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য!

বলুন তো! সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে এটা কি মানুষের কাছে কাম্য? আদৌ নয়!!

এ প্রসঙ্গে আজকে আলোচনা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য। আশা করি কেউ বিষয়টি অন্যভাবে নিবেন না।

আমরা কাউকে পঁচানোর জন্য বা কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি শব্দ খুব বেশি ব্যবহার করি। শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আর বহুল ব্যবহৃত (নেগেটিভ অর্থে) সেই শব্দটি হচ্ছে “মফিজ”!

কাউকে মফিজ বলে ছোট করার আগে আসুন জেনে নেই কে এই মফিজ। কিভাবে এই নাম বা শব্দটি এত ব্যাপক হারে উচ্চারিত হলো। আর কেনই বা এটি নেগেটিভ সেন্সে ব্যবহৃত হচ্ছে?

“মফিজ” গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত কিন্তু একজন অত্যন্ত সৎ লোক ছিলেন। যিনি পেশায় ছিলেন একজন ড্রাইভার। এক সময় তিনি তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় এবং বাবার দেয়া সামান্য জমি বিক্রি করে ঢাকা রুটের একটা পুরাতন বাস ক্রয় করে ঢাকা- গাইবান্ধা রুটে চালু করলেন।

গরীব দরদী মফিজ সাহেব দিন মজুর লোকদের স্বল্প ভাড়ায় বা বিনা ভাড়ায় ঢাকায় আনা নেয়া করতেন। এক সময় বয়সের ভারে মফিজ সাহেব নিজে গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়ে অন্য ড্রাইভার দিয়ে বাস চালনো শুরু করলেন।

কিন্তু দিনমজুর শ্রেনীর লোকেরা ভাড়া সাশ্রয়ের জন্য তাঁর কাছে ধর্না দেয়া শুরু করলো। তাদের উপকারের জন্য মফিজ সাহেব সাদা কাগজে “মফিজ” (যেটা তার স্বাক্ষর হিসাবে পরিগণিত হতো) লিখে সুপারভাইজারকে দিতে বলতেন এবং বাসের ছাদে নামমাত্র ভাড়ায় ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা করে দেয়ার ব্যবস্হা করতেন।

মফিজ সাহেবের নিয়মানুযায়ী বাসের সুপারভাইজারগন “মফিজ” স্বাক্ষরযুক্ত কাগজ যার কাছে পেতেন তার কাছ থেকেই কম ভাড়া আদায় নিতেন।

দেখা যেত প্রতিটি গাড়িতেই অনেক লোক স্লিপ নিয়ে ছাদে উঠে যেতেন। তাই বাসের ছাদে উচ্চস্বরে সুপার ভাইজার বলতেন কয়জন মফিজ আছো ছাদে? অর্থাৎ কয়টা “মফিজ” স্বাক্ষরযুক্ত স্লিপ আছে?

আর এ ভাবে গরীবের উপকারী বন্ধু “মফিজ” শব্দটি চালু হয়। আর আজ আমরা ঠাট্রা করে অনেকে ‘মফিজ’ শব্দটি উচ্চারণ করি। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলুন তো ‘মফিজ’ হওয়ার যোগ্যতা কি আপনার আমার আছে?

সকলের কাছে অনুরোধ, নিজে “মফিজ” হতে চেষ্টা করুন, অন্যকে “মফিজ” বানাতে নয়!

বঙ্কিমচন্দ্রের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে আছে তো?

“তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?”

কাউকে অধম প্রমান করার আগে আসুন নিজে উত্তম হতে চেষ্টা করি। সকলের কুশল কামনায় শেষ করছি। আল্লাহ্‌ হাফিজ।

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন