সময়ের সাথে মানুষের পরিবর্তন – সময়ের প্রতিচ্ছবি

এবার হয়তো তাদের ওপর আস্থা ফিরবে… বিনা বিচারে হত্যার প্রতিবাদে পুলিশবন্ধন!
হ্যাপি ইনসাইডার ডেস্কঃ বিনা বিচারে হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে মানববন্ধন করেছে পুলিশ। বিনা বিচারে হত্যা ও এর প্রতিবাদ জানানো দুটিই পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে জানিয়েছে মানব বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পুলিশেরা। ফলে অনলাইনে ইভেন্ট ডেকে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে যাওয়া তরুণেরা তাদের নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে পুলিশের মানবন্ধনকারীদের প্রশ্ন করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ বলেন, ফেসবুকে ইভেন্টের খবর পেয়েই তো আমরা আগেই এসে মানববন্ধন করেছি। গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কী গণজাগরণের অংশ নই। আমরা কী উনাদের সেই গণজাগরণের সময় ডিউটিতে বিনিদ্র সময় কাটাইনি। এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে বন্ধু।

হ্যাপি ইনসাইডারের প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করে, কিন্তু বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছেন তো আপনারাই। তাহলে আপনারা বিনা বিচারের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কেন! জনৈক পুলিশ এর উত্তরে বলেন, আজকাল মানুষ কিছুই না শিখে সাংবাদিক হয়। ছোট কালে শোনেন নাই, সর্প হইয়া দংশন করো; ওঝা হইয়া ঝাড়ো। তাছাড়া ক্রসফায়ার হয় ওপরের নির্দেশে; আমরা হুকুমের দাস। তাই আপনাদের কোন অভিযোগ থাকলে, আল্লাহর কাছে বলেন। আমরাও আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতে এই মানববন্ধন করেছি। লোকে এটাকে পুলিশবন্ধন বলছে; পুলিশ কী মানুষ নয়!

হ্যাপিইনসাইডার প্রশ্ন করে, সাধারণ মানুষের কর্মসূচি ভণ্ডুল করতেই কী এই পুলিশ বন্ধন! পুলিশের আরেক সদস্য বলেন, দেখুন শাহবাগের “প্রজন্ম চত্বর” হচ্ছে আসলে “প্রশংসা চত্বর”। সরকারের প্রশংসা করতে চাইলে আসেন, মাইক ফিট করে, মোবাইল টয়লেট ভ্যান এনে অবিরাম প্রশংসার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি। সরকারের “কেকা আপুরা” দেখবেন তখন নুডলস রাইন্ধা নিয়া; বাচ্চার মাথায় পতাকা বাইন্ধা ছবি তুলতে চলে আসবে। কিন্তু এ চত্বরে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের মতো চুপচাপ খাড়ায়ে করতে হবে।

নির্ধারিত প্রতিবাদ ইভেন্টে আসা এক তরুণ পুলিশের কাছে এসে বলেন, আপনারা সরকারের নির্দেশেই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি বন্ধ করতে এসেছেন নিশ্চয়ই।

পুলিশ জানান, সংসদে যেমন সরকারি দল নিজেই সরকারি; নিজেই বিরোধী; ক্রসফায়ারেও আমরাও নিজেরাই সরকারি; নিজেরাই বিরোধী; ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যাও আমাদের দায়িত্ব; আবার আমাদের ঘনিষ্ট ক্ষুদ্র মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে হত্যার প্রতিবাদের দায়িত্বও আমাদের। আপনাদের এইখানে কোন কাজ নাই। যান ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। সরকারের আল-গণতন্ত্র সন্ত্রাসীরা আপনার ভোট আগেই না দিয়া গেলে ভোট দিবেন। এখন যান তো অযথা সময় নষ্ট করতেছেন। আমাদের নীরব প্রতিবাদে বিঘ্ন ঘটাবেন না।

কর্মসূচি পণ্ড হওয়ায় এক তরুণ এসে বলেন, ক্রসফায়ার তো বে-আইনি; আর নামের ভুলে একজনের জায়গায় আরেকজনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ এর জবাবে বলেন, আপনারা পড়ালেখা একেবারেই করেন না দেখতেছি। ম্যাকিয়াভেলি তার দ্য প্রিন্স গ্রন্থে লিখেছেন, শাসক তার বাজে ও বে -আইনি কাজ করায় অন্য লোককে দিয়ে; সবাই অন্যলোকদের গালি দিলে, শাসক তখন গদগদ হয়ে এসে জনগণকে বলে, বাজে লোকেরা আপনাদের ক্ষতি করেছে; আমার কোন দোষ নেই ভায়া।

এইজন্য দেখবেন, সব আমলেই বিনা বিচারে হত্যার নির্দেশ দেয় শাসক; আর দোষ হয় পুলিশের। আর মহামতি স্টালিন বলেছেন, “বড় কাজ করতে গেলে ছোটখাট ভুল হইতেই পারে।” ভুল কইরা যারা ক্রসফায়ারে মরছে; হ্যাগো কথা ভুইলা যান। যান পারলে গণভবনে ইফতারির দাওয়াতপত্র ম্যানেজ করেন। আনন্দ করেন।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন