সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় ৪টি গানই ছিলো যার দখলে তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহ।

কিংবদন্তি  বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর নেই। তবে রয়ে গেছে তার মধুঝরা কণ্ঠের কালজয়ী গানগুলো।  যার নাম হয়তো অনেকের অজানা কিন্তু তার গান শুনেনি এমন লোক নেই বাংলাদেশে ।

তিনি কিংবদন্তি  বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ ।  জন্ম – ২ জানুয়ারি ১৯৫৩, তার পিতার নাম এম ফজলুল হক ও মাতার নাম আসিয়া হক। শাহনাজের ভাই  আনোয়ার পারভেজ সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং আরেক ভাই  জাফর ইকবাল ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ও গায়ক। তিনি গান শিখেছেন গজল সম্রাট  মেহেদী হাসানের কাছে। তিনি দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়াও আধুনিক গান, গজল ও চলচ্চিত্রের অসংখ্য চিরায়তধারার গান গেয়েছেন তার উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো:

একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় / প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ / এক নদী রক্ত পেরিয়ে / আমার দেশের মাটির গন্ধে / একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল / আমায় যদি প্রশ্ন করে / কে যেন সোনার কাঠি / মানিক সে তো মানিক নয় / যদি চোখের দৃষ্টি / সাগরের তীর থেকে / খোলা জানালা / পারি না ভুলে যেতে / ফুলের কানে ভ্রমর এসে / আমি তো আমার গল্প বলেছি / আরও কিছু দাও না / একটি কুসুম তুলে নিয়েছি / ক্ষণিকের ভালো লাগা মনেতে দোলা দিয়ে / এই জীবনের মঞ্চে মোরা কেউবা কাঁদি কেউবা হাসি ।

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে নেপথ্য কন্ঠ দিয়েছেন । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল

গুনাই (১৯৬৬), ডাক বাবু (১৯৬৬), বেহুলা (১৯৬৬), নবাব সিরাজউদ্দৌলা(১৯৬৬), সাইফুল মুল্‌ক্‌ বদিউজ্জামাল (১৯৬৭), নয়নতারা (১৯৬৭), আনোয়ারা(১৯৬৭), রাখাল বন্ধু (১৯৬৮), সাত ভাই চম্পা(১৯৬৮), বাঁশরী (১৯৬৮), সুয়োরানী দুয়োরানী (১৯৬৮), পীচ ঢালা পথ(১৯৬৮), এতটুকু আশা (১৯৬৮), পরশমণি (১৯৬৮), মুক্তি (১৯৬৯)ভানুমতি (১৯৬৯), পাতালপুরীর রাজকন্যা (১৯৬৯), আলিঙ্গন (১৯৬৯), নীল আকাশের নীচে (১৯৬৯), বিজলী (১৯৭০), মধুমিলন (১৯৭০), আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী (১৯৭০), কত যে মিনতি (১৯৭০), রং বদলায় (১৯৭০), বিনিময় (১৯৭০), অধিকার (১৯৭০), স্মৃতিটুকু থাক (১৯৭১), জয় বাংলা (১৯৭২), গান গেয়ে পরিচয় (১৯৭২), বাহরাম বাদশাহ (১৯৭২), অশ্রু দিয়ে লিখা (১৯৭২), প্রতিশোধ (১৯৭২), ঘুড্ডি(১৯৮০), ছুটির ফাঁদে(১৯৯০) ইত্যাদি ।

১৯৬৩ সালে ১০ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ নামক চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে প্রথম টেলিভিশনে তার গাওয়া গান প্রচারিত হয়। তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতা  প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচী টিভিসহ উর্দু ছবিতেও গান করেছেন। দীর্ঘ ৫০ বছর গান গেয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ।  বিবিসির এক জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া গানই চারটি।

এগুলো হলো ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়’ ও ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’। ১৯৯২ সালে তিনি  একুশে পদক এবং ১৯৯০ সালে ছুটির ফাঁদে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার ।শাহনাজ রহমত উল্লাহর স্বামী, এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।  ২৩ মার্চ ২০১৯ রাত ১ টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে  বারিধারার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরন  করেন ।

Related Posts