সাইবার ক্রাইম ও এর আক্রমণ

আসসালামুয়ালাইকুম,
আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব তা হলো সাইবার ক্রাইম ও এর আক্রমণ।সাইবার ক্রাইম আজকাল চুরির মতো একটি সাধারণ অপরাধে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ক্রমশ বেড়েই চলছে। এবং এর সাথে সাইবারক্রাইম ও বেড়ে চলছে বহুল রূপে।
সাইবার ক্রাইম বলতে সাধারণত ইন্টারনেট কে কেন্দ্র করে যে সকল কম্পিউটার ক্রাইম হয়ে থাকে তাকে সাইবারক্রাইম বলে।
সাইবারক্রাইম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল:

হ্যাকিং:
সাধারণত অনুমতি ছাড়া কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে কম্পিউটার ব্যবহার করা বা কম্পিউটারের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজের করে নেওয়া কে হ্যাকিং বলে।
যে হ্যাকিং করে তাকে হ্যাকার বলে। হ্যাকিং বৈধ-অবৈধ দুই প্রকারের হয়ে থাকে।
অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিরাপত্তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য হ্যাকার নিয়োগ করে। এই নিয়োগপ্রাপ্ত হ্যাকারদের কাজকে বৈধ হ্যাকিং বলে। এরা সিস্টেম নিরাপত্তা চেক করে কিন্তু সিস্টেমের কোনো ক্ষতি করে না এজন্য এদের হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বলা হয়।
অবৈধভাবে যারা হ্যাকিং করে তাদের ক্র্যাকার বলা হয়। তারা অন্যের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডেটা চুরি বা নষ্ট করে থাকে। এদেরকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার বলা হয়।

হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার ও ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের মাঝামাঝি তে এক ধরনের হ্যাকার রয়েছে যারা নেটওয়ার্কের দুর্বলতাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানায় বা দুর্বল দিকগুলো ঠিক করার মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সুরক্ষার জন্য কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। এদেরকে গ্রে হ্যাট হ্যাকার বলা হয়।
সাইবার ক্রাইম এর মধ্যে হ্যাকিং অপরাধী সবচেয়ে বেশি বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন কোর্ট এভাবে নেটওয়ার্কে প্রবেশেকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

স্প্যামিং:
ইমেইল একাউন্টে প্রায়ই আমাদেরকে কিছু কিছু অচেনা ও অপ্রয়োজনীয় ইমেইল বিরক্ত করে থাকে। এই ধরনের ইমেইল কে সাধারণত স্প্যাম ইমেল বলে। আর কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তি যখন একটি ইমেইল একাউন্টে শত শত বা লক্ষ্য লক্ষ্য ইমেইল প্রেরণ এর মাধ্যমে মেমোরি দখল করে তখন তাকে স্প্যামিং বলে।
সাধারণত কোন ওয়েব সার্ভারকে ব্যস্ত রাখা অথবা এর মেমোরি বা স্টোরেজ অপ্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দ্বারা পূর্ণ করে এর পারফর্মেন্স এর ক্ষতি করার জন্য স্প্যামিং করা হয়।

সাইবার চুরি:
অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তথ্য চুরির সাথে সাথে অনেক সময় টাকাও চুরি হয়। এ ক্ষেত্রে অপরাধীরা কোন নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকে এবং ইউজার কর্তৃপক্ষ দ্বারা তথ্য ডেটাবেজের কপি তৈরি করে। পরে ওই তথ্যগুলোর মাধ্যমে কারো একাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা নিজ একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়।

সাইবার সন্ত্রাস:
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি কে জোর করে কোন কিছু করতে বাধ্য করা কে সাইবার সন্ত্রাস বলে। কাউকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা, হুমকি দেওয়া, আতঙ্ক সৃষ্টি করা, কারো ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা বা সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ ছড়ানো এসবকিছুই সাইবার সন্ত্রাস এর অন্তর্ভুক্ত।
সাধারণত শিশু ও কিশোর কিশোরী তরুণ ও যুবক যুবতীরা বেশি ভাগ এর শিকার হয়ে থাকে।

<

ফিশিং:
এটা অনেকটা টোপ দিয়ে মাছ শিকারের মতোই। বিভিন্ন ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে একটি নকল ওয়েবসাইটে নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন পিন নাম্বার, এক্সেস কোড, ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করে।

প্লেজিয়ারিজম:
অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া কে প্লেজিয়ারিজম বলে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা হুবহু নকল বা আংশিক পরিবর্তন করে প্রকাশ করাকে প্লেজিয়ারিজম বলে।
প্লেজিয়ারিজম একটি বেআইনি কাজ তাই কাজেই এর প্রতিরোধ করা উচিত। অনলাইনের মাধ্যমে প্লেজিয়ারিজম কে সাইবার প্লেজিয়ারিজম বলে।

সাইবার ক্রাইম এখন আমাদের পুরো পৃথিবীতে বহুলরূপে ছড়িয়ে গেছে। কাজেই সাইবার ক্রাইম কে দমন করতে আইন আরো কঠোর করতে হবে।

তো আজ এই পর্যন্তই, কথা হবে পরের পোস্টে।
আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

18 Comments

মন্তব্য করুন