সাদিয়ার একটি বিড়াল ছিলো

সাদিয়া তার ছোট্ট বিড়ালটিকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসতো।
দেখা যেত দিনের বেশির ভাগ সময় বিড়ালটির সাথে সাদিয়ে খেলা করতো।সাদিয়ার বয়স মাত্র নয় বছর। দুপুরে খাওয়ার সময় বিড়ালটিকে তার পাশেই রাখতো সাদিয়া।নিজে খাওয়ার সাথে সাথে বিড়ালটিকেও মাছ খাওয়াতো,দুধভাত খাওয়াতো।যেন তার মুখে হাসি লেগেই থাকতো,ছোট বাবুটির সাথে বিড়ালটাও খুব ভালোভাবে মিশে গেছিলো।সাদিয়া বিড়ালটিকে প্রতিদিন গোসল করাতো,আর বিড়ালটিও ঘুরে ঘুরে সঠিক সময় চলে আসতো গোসলের জন্য।তারা অনেক খুশি ছিলো।
সাদিয়া তার বাবার একমাত্র মেয়ে।তো যাইহোক, এভাবেই দেখতে দেখতে ৬ মাস হয়ে গেলো।বলে রাখা ভালো সাদিয়ার পরিবার খুব দরিদ্র ছিলো যার কারনে তারা একটা বাসায় ভাড়া থাকতো।তো এভাবে চলতে থাকলো, একসময় বাসা ওয়ালা আন্টি এসে সাদিয়ার মাকে জানালো যে আপনাদের বিড়াল আমাদের বাসার মাছ চুরি করে খায়,আমাদের বাসায় রুম নোংরা করে,ইদুর খেয়ে বমি করে রাখে নানান অভিযোগ দিয়ে বললো যে বিড়ালটিকে বাসায় রাখা যাবেনা।এরপর সাদিয়া এটা শুনে কান্না শুরু করে দিলো,এই সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চার চোখে জল কিভাবে দেখতো তার বাবা মা।অনেক রিকুয়েষ্ট করার পরও বাসাওয়ালা মানলো না।
বললো এমনি তো ২ মাসের ভাড়া পাওয়া যাবে,বাসা ভাড়া ঠিক সময় দেন না তারপর আবার বিড়াল রাখার এত শখ?তাহলে নিজে বাসা করে বিড়াল পোষেন।এই কথায় সাদিয়ার বাবা খুব আঘাত পেলো।তারপর সাদিয়ার বাবা ঠিক করলো রাতের অন্ধকারে বিড়ালটিকে অনেক দূর নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসবে।সাদিয়াকে জানাবেও না।যেমন ভাবা তেমন কাজ,ঘড়ি কাটায় কাটায় রাত ১২.০০ টা।একটা ছোট বস্তা নিয়ে বিড়ালটিকে ভরে নিলো,ঠিক সেই সময় বিড়ালটি ম্যাও ম্যাও করতে লাগলো সে কি ডাক,গম্ভির ডাক,কান্নার ডাক,সাধারণভাবে ম্যাও ম্যাও করছিলোনা বিড়ালটি,মোটা কন্ঠে,গভীর থেকে যেন বলতে চাচ্ছিলো আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?আমাকে নিয়ে যেও না,আমাকে থাকতে দাও।সাদিয়ার বাবাও বিড়ালটিকে অনেক ভালোবাসতো।
বিড়ালটির আর্তনাদে সাদিয়ার বাবার চোখ থেকে ঝর ঝর করে পানি ঝরতে লাগলো,সাদিয়ার মা বলে উঠলো,ওগো থাক না,আরেকবার বাসা ওয়ালাকে বলে দেখিনা? কিন্তু তারা ভালো করেই জানতো এরপর এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে অপমানের সাথে সাথে বাসাটাও ছাড়তে হবে।সব কিছু বিবেচণা করে সাদিয়ার বাবা সাইকেল করে বিড়ালটিকে নিয়ে রওনা হলেন।আর চোখ মুছতে মুছতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এক জংগলের সামনে এসে দাড়ালেন।এবং বিড়ালটিকে ছেড়ে দিলেন।কিন্তু বিড়ালটি এক পা নড়লো না।সেই করুণ সুরে কান্নার মত করে ম্যাও ম্যাও করতে লাগলো এক সময় সাদিয়ার বাবার পা ঘেসা দিতে লাগলো।সাদিয়ার বাবা কষ্টে ফেটে পড়লো বসে পড়লো বিড়ালটির পাশে আর আদর করে কান্নায় বলতে লাগলো,আমি পারলাম নারে,আমি পারলাম না তোকে রাখতে।বলে উঠে সাইকেলে করে জোরে প্যাডেল করে চলে আসতে লাগলো আর বিড়ালের গম্ভির ডাক তখনো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো।
কান্না করতে করতে বাসায় ফিরে আসলো।কিন্তু সাদিয়ার বাবা সেই রাতে ঘুমাতে পারলোনা।সকালে ঘুম থেকে সাদিয়া উঠেই দেখলো বিড়ালটি তার পাশে নেই যা আগে কখনো এমন হয়নি।সাদিয়া বলতে লাগলো আম্মু আমার বিড়াল কই?তুমি কি দেখেছো?এই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবে ভাবতেই তার মায়ের চোখে জল চলে আসলো।বললো তুমি আসো খেয়ে নেও বিড়াল বাইরে কোথাও গেছে চলে আসবে।এই কথা বলে সাদিয়াকে শান্ত করলো।এভাবে দুপুরেও বিড়ালটি ফিরলোনা।সাদিয়া কান্না শুরু করে দিলো আম্মু আম্মু আমার বিড়াল এনে দাও না,ও আম্মু আমি তোমার সব কথা শুনবো,আম্মু তুমি যা বলবে তাই করবো আমার বিড়াল এনে দাও আম্মু।
তার মা সাদিয়ার কান্না সহ্য করতে পারছিলোনা।তাকে বুকে টেনে নিয়ে বললো তোমার বিড়াল চলে আসবে বাবা কাদেনা।দুপুরে সাদিয়া কিচ্ছু খেলো না কোনভাবেই,দরজা বন্ধ করে শুধু কান্না করতে লাগলো,এভাবে সে শুধু তার বিড়ালের স্মৃতি গুলো মনে করে কাদছিলো।তারপর এভাবে সাদিয়া ৩ দিন পর্যন্ত ভালো মতো খেলো কিছু।পরে এই অবস্থা দেখে সাদিয়ার বাবা বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবলো।এই বাসায় থাকা চলে না।পরের দিনেই সাদিয়ার বাবা বিড়ালটি কে খুজতে বের হলো।
কিন্তু কোথাও খুজে পেলো না জংগলের আসে পাশে সব জাগায় খুজে ক্লান শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে এলো।সাদিয়ার মুখের হাসিটা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে ঠিক মত খায় না।ঘুমোই না,টিভিও দেখে না।মাঝে মাঝে কান্না করে,বিড়ালের খাবার দেয়া বাটি টা নিয়ে বসে থাকে।ছোট্ট মেয়েটির এই কষ্ট কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলোনা তার মা। তার মা গিয়ে সাদিয়ার বাবা কে বললো দেখো যেভাবে হোক বিড়াটা খুজে আনো।আমি আর নিতে পারছি।প্লিজ নিয়ে এসো প্লিজ।সাদিয়ার বাবা প্রচন্ড কষ্ট পেলো,আর ভাবতে লাগলো সে জীবনে কি করলাম? আমার মেয়েটাতো কোটি টাকার কিছু চাই নি।এই ছোট্ট জিনিসটাও তাকে দিতে পারলাম না ভেবে নিজেকে দোষারোপ করলে লাগলো নিজেকে ঘৃণা করতে লাগলো।আর বাসা ছেড়ে দেয়ার মাত্র ২ দিন বাকি।তারপর নতুন বাসায় চলে যাবে তারা।
সময় ঘনিয়ে আসলো।কিন্তু বিড়ালটি ফিরলো না।পরের দিন সকালে সাদিয়া উঠনে বসে সেই শীতল ভেজা চোখ নিয়ে। ঠিক তখনি একটা আওয়াজ আসলো ম্যাওওও!! কি অবাক দুর্দান্ত ব্যাপার বিড়াল টি ফিরে এসেছে,কিভাবে এসেছে কেউ জানেনা কিন্তু এসেছে সাদিয়া চিতকার করে উঠলো মা মা মা আমার বিড়াল উল্লাসে আনন্দে কেদে উঠলো।বিড়ালটিকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে বলতে লাগলো কোথাই ছিলা তুমি আমাকে ছেড়ে কেনো গেছিলা তুমি?জানোনা তোমাকে ছাড়া আমার কত কষ্ট হয়।
এভাবে তার মা এই দৃশ্য দেখে তার মা পর্যন্ত কেদে ফেললো।দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে ফোন করলো।তার বাবা অফিস ছেড়ে একবারে ছুটে বাসায় চলে আসলো।এবং তারপর তার মেয়েকে জড়িয়ে বললো মা তোমার বিড়াল আর কোনদিন তোমায় ছেড়ে যাবে না মা, কোনদিন তোমায় ছেড়ে যাবেনা।
ভালোবাসা শুধু দুটি মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না,অনেক সময় নিজের অজান্তে আমরা ছোট ছোট প্রানীকে এত ভালোবেসে ফেলি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

Related Posts

17 Comments

মন্তব্য করুন