সুখকে যে যেভাবে মানে ও ভাবে।

সুখ একটি নিতান্তই একটি আপেক্ষিক বিষয় বলে আমার ধারনা। এর বিপরীত হলো অসুখ। যে মনের দিক থেকে সুখী নয়, সে কখনো সুস্থও নয়। অসুখ দুই রকম হতে পারে। একটি শারীরিক আরেকটি মানসিক। শারীরিক অসুস্থতায় মানুষের জীবনে সুখ থাকে না। ওষুধের মাধ্যমে অসুস্থতা সারানো যায়। মানসিক অসুস্থতার শিকার হলে, জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। মানসিক রোগ সবচেয়ে জটিল রোগের একটি।

নতুন কাপড় কেনা বা লটারির টাকা পাওয়া, আকস্মিক কিছু প্রাপ্তি জীবনে সাময়িক সুখ আনতে পারে। কিন্তু এই পন্থাগুলো জীবনের সব দুঃখ দূর করে আনন্দ ও সুখ বয়ে আনবে, এমনটি কল্পনা করা ভুল।

কাজকর্ম, টাকাপয়সা ও সুখশান্তি নিয়ে পৃথিবীতে জানা অজানা অনেক গল্প আছে। আমরা হয়তো তার কিছু জানি আবার কিছু জানি না। ওয়ারেন বাফেটকে হয়তো আমরা অনেকেই জানি তিনি কোনো সময় ব্যক্তিগত বিমানে চড়েন না। অথচ তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মালিকানার একটি জেট বিমান কোম্পানির মালিক। তিনি এখনো তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি পুরাতন বাড়িতে বাস করেন। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি ও অনুপ্রেরণা দায়ক। ওয়ারেন বাফেট মনে করেন ধনদৌলত নয়, মনের সুখই আসল সুখ।

পৃথিবীতে বাস করে পার্থিব অর্জন সুখশান্তি নিয়ে আসে না এ কথাটি ঠিক নয়। পৃথিবীর সব সুখের মূল হলো অর্থ। অর্থ সব সময় সুখ দিতে পারে না এটা সত্যি। কিন্তু কেউ যখন অন্য সবার চেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করেন তখন তিনি নিজেকে সুখী মনে করেন। আবার বলা যায়। টাকা দীর্ঘ সময় সুখ এনে দিতে পারে না। তবে সাময়িকভাবে মানুষকে তৃপ্ত করে।

ছোটসময় থেকেই বইপুস্তকে পড়ছি, অর্থই সব অনর্থের মূল। এই অর্থই মানুষকে ব্যস্ত রাখে। অর্থ মানুষের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। আর তখনি হানাহানি ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়। আবার, স্বাস্থ্যই সব সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনো সুখই উপলব্ধি করা যায় না। আমার মতে, শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারীরাই এই জগতে সুখ ও শান্তির জন্য যা প্রয়োজন তা অনায়াসে অর্জন করতে পারে।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা চাইলে তার জন্য প্রয়োজন হবে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন। স্বল্পতে সন্তুষ্টি, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, রাতে ঘুমানো, আনন্দ নিয়ে কাজ করা, আবেগপ্রবণতা পরিত্যাগ করা, বিশুদ্ধ পানি পান করা, ব্যায়াম করা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অর্থবহ করে গড়ে তোলা ইত্যাদি।

<

কারও জীবনে, আরও কিছু বাড়তি গুণাবলী অর্জন করলে মানুষ অধিকতর সুখী হতে পারে। নিয়মিত প্রার্থনা, ভালো বই-পুস্তক পড়া, গরিব মানুষকে দান ইত্যাদি সুখে থাকার আরও কিছু কারন হতে পারে। এতে মনের আত্মতৃপ্তিও বৃদ্ধি পাবে। সংগীত মানুষের আনন্দ ও সুখের আরেকটি উৎস হতে পারে।

নেই নেই, পকেট খালি এসব, এখন কি হবে এসব বলে আক্ষেপ না করে যা আছে তার জন্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। বেশি করে হাসুন। আশেপাশের সবাইকে নিয়ে হাসিখুশিতে থাকুন। অবশ্যই আপনি সুখী ও সুস্থ থাকবেন।

Related Posts