সুন্দরবন সম্পর্কে সকল তথ্য ও আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান জেনে নিন

বাংলাদেশের দক্ষিণ- পশ্চিমে বঙ্গোপ সাগরের তীরে অবস্থিত সুন্দরবন। এ বনের নাম সুন্দরি গাছের নাম অনুসারে হয়েছে।সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।এ বনে বাস করে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়া আছে চিত্রা হরিণ, বন্যশূকর, সজারু আর পাখি। বনের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য খাল ও ছোট ছোট নদী যেখানে বাস করে কুমির, সাপ ও মাছ। এই খাল আর ছোট নদী সুন্দর বনের মাটিকে করেছে উর্বর। বাংলা দেশের অংশ ৬,০১৭ বর্গ কি.মি. আয়তনের সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ, দীর্ঘতম লবণাক্ত জলা ভূমি এবং জীব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি অতি গুরুত্ব পূর্ণ ইকো সিস্টেম। বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারধৌত গরান বনভূমি (mangrove forest)। কর্কট ক্রান্তির সামান্য দক্ষিণে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০´- ২২°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´-৮৯°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘি মার মধ্য বর্তী স্থানে এ বনের অবস্থান। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একটি উলে­খ যোগ্য কেন্দ্র হিসেবেও এটি বিবেচিত; এখান থেকে সংগৃহীত হয় নানা কাজে ব্যবহার উপযোগী বনবৃক্ষ, আহরিত হয় প্রচুর পরিমাণ মধু, মোম ও মাছ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগের অন্যান্য মৃত্তিকার তুলনায় সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমির মৃত্তিকা পৃথক ধরনের এবং এ বনভূমিতে জোয়ারভাটার কারণে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার প্রভাব সুস্পষ্ট। মাটির এ ধরনের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার উদ্ভিদকুলও বৈশিষ্ট্যময়। ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্বের একটি অন্যতম ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই বন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায়। শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। সুন্দরবনের সবচেয়ে উলে­খযোগ্য গুরুত্ব এর সংরক্ষণমূলক ভূমিকা। এ বন উপকূলভাগের ভূমিক্ষয় রোধ করে, উপকূলীয় এলাকা পুনরুদ্ধার করে এবং নদীবাহিত পলি স্তরীভূত করে। বনাঞ্চলের গাছপালার পুনরুৎপাদন হয় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অথবা বীজ বপন বা চারা রোপণের মাধ্যমে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বহুলাংশে প্রাকৃতিক পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। জামতলায় একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে, এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলানো যায়। আর ভাগ্য ভাল থাকলে এখান থেকে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পাওয়া যেতে পারে।মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছুটা অংশ এখনো অনাবিষ্কৃত বলে মনে করা হয়। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়।হীরন পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও কুমির দেখা পাওয়া যায়। এখানেও মাঝে মাঝে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলে। সুন্দরবন এলাকার মধ্যে ছোট্ট একটি চর হচ্ছে দুবলার চর। দুবলার চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।কটকা সী বিচ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা যাওয়ার বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে সোহাগ, হানিফ ও ঈগল পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা যেতে প্রায় ৮ ঘন্টা লাগে।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন