সেই ব্যাচ নাম্বার ৫ এর ইতিহাস কথন!

৩৪ বছরের ক্রিকেট পদচারণায় বাংলাদেশ কি পেয়েছে কিংবা কি পেয়ে হারিয়েছে, আবার কখন স্বপ্ন হয়েছে ছত্রখান এসব নিয়ে রয়েছে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা। সব আলোচনা এমনকি গঠন মূলক সমালোচনার ইতিতে আজকের আলোচনার বিষয় ব্যাচ নাম্বার ৫!

ব্যাচ নাম্বার ৫! নাম নিয়ে অবশ্যই মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে এর উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্যের উত্তরে জানাবো; ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছিলো অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অংসজগ্রহন করেছিলো মোট ৫ টি অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের সেই ব্যাচের অন্যতম একনিষ্ঠ ছাত্র আজকের দিনের সাকিব, তামিম মুশফিক।

সেই বিশ্বকাপের স্কোয়াডের ব্যাচ নাম্বার ৫ থেকে বাংলাদেশ পেতে পারতো অনেক কিছুই। কিংবা বাংলাদেশ কতো টুকু পেয়েছে আজকের আলোচনার মুখ্য বিষয় সেগুলোই! সেই স্কোয়াডের ১৪ জনের ৮ জনে পা রেখেছিলেন জাতীয় দলের আঙিনায়! চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপের সেই মঞ্চে কিংবা অভিষেকের পর তাদের পারফরম্যান্স কেমন ছিলো!

▪ সাকিব আল হাসান- বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছিলেন ২০০৬ অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ কিংবা ব্যাচ নাম্বার ৫ এর একনিষ্ঠ তম এক ছাত্র! জাতীয় অভিষেকের আগে যুবা বিশ্বকাপেও নিজের বা হাতের খেল দেখিয়েছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের মধ্যে সাকিব ছিলেন ঐ যুব বিশ্বকাপের ৩য় সর্বোচ্চ রান স্কোরার! পুরো আসরে ৬ ম্যাচে ২৫ গড়ে সাকিবের ব্যাট হতে এসেছিলো ১৫০ রান। বল হাতে সাকিবের সংগ্রহে ছিলো ৬ ম্যাচে ৭ উইকেট! সেবারের বিশ্বকাপে তাক লাগানো পারফরম্যান্স এর পর সে বছরেই জিম্বাবুয়ে সিরিজে অভিষেক হয় সাকিবের। এরপর পরে গল্প তো সকলেরই জানা! অভিষেকের পর বিভিন্ন রেকর্ড অর্জনে সাকিব প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেই। হয়েছেন ৩ ফরম্যাটে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার! নিজের গায়ে লাগিয়েছেন বিশ্বসেরার তকমা। জাতীয় দলে অভিষেকের পর ৩ ফরম্যাটে সাকিবের সংগ্রহ ১১৭৫২ রান এবং ৫৬২ টি উইকেট।

▪ মুশফিকুর রহিম- মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম, জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়! নিজের পরিচয়ে পুরো বিশ্বে চিনিয়েছেন বাংলাদেশ কে! ২০০৬ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে পালের গোদা ছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেবারের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক ছিলেন দেশের হয়ে ২য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। পুরো আসরে ৬ ম্যাচে ৩৭ গড়ে মুশফিকের ব্যাটে হয়েছিলো ১৮৮ রান। এরপর সেই বছরেই জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে মুশি শুধু ব্যাট হাতে হাসিয়েছেন তা নয়, বারংবার উইকেটের পিছনে হয়ে দাড়িঁয়েছেন আনন্দ উল্লাসের কারণ কিংবা চোখের অশ্রু জলের কারণ! জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ৩ ফরম্যাটে মুশির সংগ্রহ ৪১১ ইনিংসে ১১৮৬৯ রান। সাথে রয়েছে ৪০৬ ডিসমিসাল!

▪ তামিম ইকবাল; যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, দেশ সেরা ব্যাটসম্যান কে? নিসন্দহে আপনার প্রশ্ন শোনার সাথেই সাথেই আপনার মাথায় আসবে তামিম ইকবালের নাম! ভোরের সূর্য যে সবসময় সঠিক দিনের পূর্বাভাস দেয় না তার নিরেট প্রমাণ তামিম ইকবাল! পুরো আসরে মেহরাব হোসেন, সাকিব আল হাসান কিংবা মুশফিকুর রহিমের পারফরম্যান্সের আড়ালে রাতের মেঘলা আকাশে চাদেঁর আড়াল হয়ে যাওয়ার মতোই ছিলেন তামিম ইকিবাল! পুরো আসরে ৫ টি ম্যাচ খেলে তামিমের সংগ্রহে ছিলো ৮৮ রান! কি এরপর? জাতীয় দলের সুযোগ পেয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায়৷ গায়ে লাগিয়েছেন দেশসেরা অপেনার এর তকমা। ২০০৭ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে তামিম এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলে ৩ ফরম্যাটে তামিমের সংগ্রহ ১৩৬৬৫ রান।

▪ মেহরাব হোসেন জুনিয়র- একসময় নিজের অলরাউন্ড নৈপুন্যে জাতীয় দল মাতানো মেহরাব হোসেন জুনিয়র নিজের ক্যারিয়ারের শেষ গল্প টা সাজাতে পারেননি নিজের মতো করে। শুরু টা রাজার বেশে ছিলেও শেষ টা হয়েছিলো আক্ষেপের গল্পে। কিন্তু ২০০৬ সেই বিশ্বকাপের আগে এবনং বিশ্বকাপে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার হিসেবে গণ্য করা হতো মেহরাব হোসেন জুনিয়র কে। পাকিস্তানের মাটিতে সেবারের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে মেহরাব হোসেন জুনিয়র ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। এমনকি মেহরাব ছিলেন সেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৫ উইকেট টেকারের মধ্যে ৫ম। ২০০৬ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর সম্ভাবনাময় এই অলরাউন্ডার এর সুযোগ হয়েছিলো ২৭ টি ম্যাচের। ২৭ ম্যাচের ৩১ ইনিংসে মহেরাব হোসেন জুনিয়র এর সংগ্রহ ৫৩৫ রান এবং ৮ টি উইকেট!

▪ শামসুর রহমান শুভ- ফর্মহীনতার অতল রোষানলে হারিয়ে নিজের ক্যারিয়ার বরবাদ হয়ে যাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়। তার মধ্যে অন্যতম শামসুর রহমান শুভ। অথচ জাতীয় দলে অভিষেক কিংবা অনুর্ধ্ব ১৯ এর সেই বিশ্বকাপে ছিলো সমীহ জাগানীয়া বিষ্ময়কর ব্যাটসম্যানের একজন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ শুভ যখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ঠিক তখন স্ট্যাট বলে সেবার বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে শুভর সংগ্রহ ছিলো ১৩৬ রান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে শামসুর রহমান শুভ জাতীয় দলের ৩ ফরম্যাটে সংগ্রহশালায় যুক্ত করেছেন ৬৫৭ রান। এরপর থেকেই শুভ হারিয়ে খুঁজেন নিজেকে!

▪ শোহরাওয়ার্দী শুভ- যদি বলি দেশের অন্যতম প্রতিভাবান স্পিনার ছিলেন তবে কিঞ্চিৎ ভুল হবে বৈকি কিছুটা কম বলা হয়ে যাবে। কিন্তু আক্ষেপের গল্পে চাপা পড়ে গেছে তার ক্যারিয়ারের সুখস্মৃতি। সেবারের সেই অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে শোহরাওয়ার্দী শুভ ছিলেন দেশের হয়ে ২য় সর্বোচ্চ উইকেট টেকার। আসরে তার ঝুঁলিতে ছিলো ৯ উইকেট। জাতীয় দলে ২০১০ সালে অভিষেকের পর থেকে ১৯ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে ব্যাট করে ১১৪ রান এবং বল হাতে ১৮ টি উইকেট। এরপর শুরু আক্ষেপের গল্প..

▪ রাকিবুল হাসান- জাতীয় দলে অভিষেকের পর রাকিবুল কে ভাবা হতো দেশের তরুন সম্ভাবনাময়ী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটা প্যাকেজ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কিন্তু বিধির অপার লীলায় জাতীয় দলে পঞ্চাশর্ধো ম্যাচ খেলেও পাকা করতে পারেননি নিজের জায়গা। জাতীয় দল অভিষেকেত আগেই অনুর্ধ্ব ১৯ সেই বিশ্বকাপে রাকিবের ব্যাট হাতে সংগ্রহ ছিলো ৮৬ রান। এবং ২০০৮ সালে জাতীয় দলের অভিষেকের পর থেকে ৬৯ ম্যাচে রাকিবুলের সংগ্রহ ছিলো ১৬৯৫ রান। কিন্তু এরপর? বহমান আক্ষেপের নদী..

▪ ডলার মাহমুদ- ২০০৬ সেই যুবা বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে সর্বশেষ সংযোজন ডলার মাহমুদ। জাতীয় দলে পেস বোলার হিসেবে অভিষেকের পর খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি নিজের জায়গা৷ নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ যখন হয়েছেন তখন নামের পাশে বাংলাদেশ ট্যাগে যুক্ত হয়ে ৭ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য৷ ৭ ম্যাচে ডলার মাহমুদের সংগ্রহ ছিলো ৮ উইকেট৷ জাতীয় দলে অভিষেকের আগে যুবা বিশ্বকাপে খুব একটা আহামরী পারফরম্যান্স ছিলো ডলার মাহমুদ এত। ৬ ম্যাচ খেলে তার ঝুঁলিতে ছিলো মাত্র ৪ উইকেট। কিন্তু সামর্থ্য অনুসারে পারফরম্যান্স করার একটা আফসোস ডলার মাহমুদ সব ক্রিকেট ভক্তদের এখনো পোড়ায়!

পাওয়া কিংবা পাওয়া হিসেবে ২০০৬ সালের সেই যুবা বিশ্বকাপের সেই স্কোয়াড বাংলাদেশ কে ভালো কিছু এনে দিতে না পারলেও বাংলাদেশ এনে দিয়েছে কিছু চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। তাদের নিজ গুণে এখন তারা মানেই এক টুকরা বাংলাদেশ।

শক্তির বিচারে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াড ছিলো বেশ শক্তিশালী। পারফরম্যান্সে ম্লান ছিলেও সেই স্কোয়াড থেকে বাংলদেশ পেয়ে বেশ কিছু প্রতিভা৷ স্কোয়াডের মধ্যে যারা জাতীয় দলে সুযোগ পাইনি তারাও ঘরোয়া লীগের নিয়মিত পারফর্মার! হিসেবের শেষে বাংলাদেশ সেই স্কোয়াড থেকে পেয়েছে অনেক বিশ্বসেরা খেলোয়াড়, যার সুফল এখন পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট৷ আগামীতে পেয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা!

Related Posts

17 Comments

  1. আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
    আপনার একটা সাসক্রাইব আর একটা লাইক আমার জন্য অনুপ্রেরণা
    Please support me🙂

    Youtube Channel: https://www.youtube.com/channel/UCcrbrQxUzsavUjfXMgrsM6Q

    Facebook page: https://www.facebook.com/107324621876693/posts/107963605146128/?app=fbl

মন্তব্য করুন