সোমালিয়ার জলদস্যুদের জাহাজ ছিনতাই করার গল্প

সোমালিয়ান জলদস্যুদের উত্থান হয়েছিল এক অসাধারন ও প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে এই জলদস্যুতাই পরিনত হয় সোমালিয়ার অর্থনিতির মূল চালিকা শক্তিতে। আফ্রিকার সমগ্র সমুদ্র উপকূল থেকে শুরু করে আরব সাগর ও ভারত মহাসাররের বিস্তৃর্ণ জলরাশি জুড়ে গড়ে উঠেছিলো তাদের দুর্দমনীয় আধিপত্য। পণ্যবাহী জাহাজের আতংক সোমালিয়ার কুখ্যাত জলদস্যুরা বিশাল বিশাল জাহাজ ছিনতাই করেছে সামান্য স্পিড বোর্ড ব্যবহার করে। আজ আমরা জানতে চেষ্টা করবো সোমালিয়ান জলদস্যুরা সমুদ্রের মাঝখানে কি করে জাহাজ ছিন্তাই করে।

এশিয়ার দেশগুলো ইউরোপের সাথে বানিজ্য করতে চাইলে, ভারত ও আরব সাগর দিয়ে সুয়োজ খাল অতিক্রম করেই কেবল ভূমধ্য সাগরে পৌছানো সম্ভব। আর এই পথে চলা জাহাজগুলিকে সোমালিয়া উপকূল অতিক্রম করতেই হয়। আর তাই জলদস্যুদের এরিয়ে বানিজ্য জাহাজ গুলো পরিচালনা করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যারা ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য আরব সাগর ও লহিত সাগর ব্যবহার করে, তাদের জন্য এই রোডটি হয়ে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদ সংকুল জনপদ। ১৯৯১ সালের পর থেকে-এ এলাকায় জলদস্যুতা শুরু হলেও ২০০৫ সালে মূলত সোমালিয়ার জলদস্যুরা বৃহৎ আকারে সংগবদ্ধ হয়ে আক্রমন শুরু করে। এ সময় থেকেই তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে।

মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট ফোন, জিপিএস, সোলার সিস্টেম, আধুনিক স্পিড বোর্ড সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে তারা আক্রমন করত বড় বড় জাহাজে। গভীর সমুদ্রে দস্যুবৃত্তির ক্ষেত্রে তারা একটি ‘মাদার সীপ’ থেকে অভিজান পরিচালনা করত। আর বড় জাহাজ গুলির কাছে পৌছাতে তারা ছোট ছোট মটর চালিত নৌকা ব্যবহার করত। আক্রমনকারী এসব নৌকায় ভারি অস্ত্র ও স্যাটেলাইট ইকুইপমেন্ট-এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি থাকত নৌকার ইঞ্জিনের জ্বালানি। কারন কখনো কখনো টানা ২-৩ দিন পর্যন্ত তাদের টার্গেটের পিছনে ধাওয়া করতে হত। আক্রমনের সময় হিসেবে জলদস্যুরা সাধারনত রাত বা ভোরের দিকটা বেছে নিত। আক্রমনকারী স্পিড বোর্ড অতিরক্ত ছোট হওয়াই বড় জাহাজ গুলোর রাডারে সহজে ধরা পরত না। জলদস্যুরা সাধারনত জাহাজের পিছন দিক থকে আক্রমন করত। দস্যুদের নৌজান গুলো জাহাজের দিকে আসতে দেখলে নাবিক’রা গরম পানির স্প্রে করে আক্রমন ঠেকানোর চেষ্টা করত। কিন্তু তাদের ঠেকানো খুব সহজ নয়। এক মাথায় হুক লাগানো লম্বা মই বা দড়ি দিয়ে তারা দ্রুত জাহাজে উঠে পরত। জলদস্যুরা জাহাজে উঠে প্রথমে সকলকে জিম্মি করে ফেলত। আর এ কাজটি তারা এত দ্রুত করত যে জাহাজের স্ক্রু’রা কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিত। আর তারপর তারা মুক্তিপন আদায় করত ;ইউএস ডলারে’র মাধ্যমে। মুক্তিপনের অর্থ আদায় করার জন্য তা বস্তায় ভরে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তা ফেলে দেতে বলতো। যদিও মুক্তিপন আদায়ের জন্য জলদস্যুরা বন্দীদের জীবিত রাখত তবুও তাদের কাছে বন্দি অবস্থায় এ পর্যন্ত অনেক বন্দি মারা গিয়েছে। সোমালিয়ায় একবিংশ সতাব্দির সবচেয়ে কুখ্যাত জলদস্যুদের এ সদ্যুবৃত্তি কেন এবং কিভাবে শুরু হয়েছে, তা জানতে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা আপনাদেরকে পরবর্তী লেখায় জানাতে চেষ্টা করবো সোমানিয়ায় কেন এবং কিভাবে শুরু হয়েছে এ জলদস্যুবৃত্তি। ধন্যবাদ।

<

Related Posts