স্কুল জীবনের স্মৃতি

স্কুল জীবনের স্মৃতি : এই সেদিন স্কুলে এসেছিলাম মাত্র। এক বছরের কঠিন সংগ্রাম করার মধ্যে দিয়ে দিন রাত অবিরাম পরিশ্রমের মধ্যেই সেই স্বপ্নের স্কুলে অধ্যয়ন করার স্বপ্ন বুনতে লাগলাম। অবশেষে এক প্রকাণ্ড রকমের ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম। স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা ব্যাকুলতা, ভয়, চিন্তা সব মিলিয়ে একাকার অবস্থা।

সেই এক ঘন্টার ভর্তিযুদ্ধ আমার কাছে এক মস্ত বড় রণক্ষেত্র। পরদিন পরীক্ষার ফলাফলের পর প্রচণ্ড ব্যাকুলতা আর চিন্তার কথা শুনলাম- আমি চান্স পেয়েছি। সেদিনের বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, আনন্দ বয়ে গিয়েছে আমার আর আমার পরিবারের মাঝে। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা মাত্র ২৪০ জনের মতো সেই যুদ্ধে টিকেছিলাম। মনে হয়েছিল আমরা সেই বিজয়ী সৈনিক, যারা একটি দুর্গ জয় করলাম। অবশেষে প্রাণের স্কুলে অধ্যয়নের সুযোগ পেলাম।

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। নামটি শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি ভালোবাসার নাম, এটি একটি প্রেরণার নাম। এই তো সেদিনের কথা কোনো এক সুপ্রভাতে বাবা- মার হাত ধরে আমাদের পদচারণে মুখরিত হয়েছিল স্বনামধন্য এই স্কুল প্রাঙ্গণ। সেদিন ক্লাসে আসতেই ভয় লাগছিল, সব ছিল অজানা। কিন্তু আজ আমার এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি বালু কণা খুব চেনা, যেন এক স্বর্গ এই বিদ্যালয়টি আমাদের কাছে।

সত্যি! দিনগুলো সব এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতে পারিনি। আজ স্কুল জীবনের শেষ লাইনটাতে চলে এসেছি। বিদায়বেলায় ফেলে যাচ্ছি অসংখ্য স্মৃতি বিদ্যালয়ের সাথে। শেষ বেলায় এসে ভীষণ মনে পড়ছে স্কুল জীবনের দুষ্টু মিষ্টি দিনগুলোর স্মৃতি। সকালে ঘুমের সাথে যুদ্ধ করে স্কুলে যাওয়া, টিফিন টাইমে স্কুল পলায়ন করে ঘুরতে যাওয়া, বিজ্ঞান ভবনের সিঁড়িগুলোতে দেওয়া আড্ডা, কখনো লেট হলে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা, সমাবেশ ফাঁকা দিয়ে ঘুরতে যাওয়া দিনগুলো অস্থির ছিল।

রাব্বি, দীপন, মিনুলদের সাথে পরীক্ষা দেওয়ার মজাগুলো আর পাওয়া যাবে না। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে গাওয়া গানগুলো আর গাওয়া হবে না; ফারহান, সাম্য সাকিব, অরণ্যদের সাথে ক্লাসে আড্ডা দেওয়া হবে না। সবকিছুই স্মৃতি হয়ে থাকবে। ক্লাসগুলো ছিল স্যারদের ভালোবাসা মাখানো। রাজা স্যারের ক্লাসের গল্পগুলো অনেক মজার ছিল। জগদীশ স্যারের ক্লাসে আমাদের দুষ্টুমিগুলো ভুলা যাবে না। আজিজ স্যারের ক্লাসের মজাগুলো আর পাওয়া হবে না। মুনির স্যার ছিল অনেক কাছের একজন মানুষ।

এই স্মৃতিগুলো হয়তো লিখে শেষ করা যাবে না, লিখলে উপন্যাসই হয়ে যাবে। স্কুল জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্কুল শব্দটির অর্থটি বুঝতে পেরেছি। কিভাবে যান আটটি বছর চলে গেল। প্রকৃতির নিয়মে আমরা প্রাক্তন হয়ে যাব, কিন্তু মনের ভিতর থেকে যাবে ২১ এর জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা, আর অটুট বন্ধুত্ব।

স্কুলের ক্যাম্পাস, শ্রেণীকক্ষ আর প্রতিটি ক্লাসরুমের মাঝে সুদীর্ঘ আট বছরের মধুর স্মৃতিগুলো অম্লান হয়ে আছে। আটটি বছর যেন আমার স্কুল জীবনের আটটি অধ্যায়। শ্রদ্ধেয় স্যারদের অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসা এবং বন্ধুদের সঙ্গে সেই মধুর স্মৃতিময় সময়গুলো আমার স্মৃতির মণিকোঠায় এখনো জ্বল জ্বল করছে।

এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট, কাঠ, পাথরকে ভালোবেসে ফেলেছি মনের অন্তর থেকে। স্কুল জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে নতুন স্বপ্ন উঁকি দেওয়া শুরু করেছে আমার মনে। একই সাথে স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে এসেছে। তাও মন চায় না এই স্কুল ছাড়তে, এখনো সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে মন চায়। কিন্তু তা তো সম্ভব না। এটিই কঠিন বাস্তবতা।

গাছে নতুন পাতা আসতে হলে, পুরনো পাতাকে নিজের জায়গা ছেড়ে গাছ থেকে ঝরে পড়তেই হবে। তেমনি নবীনদের জন্য জায়গা করে দিয়ে আমাদেরকেও বিদায় নিতে হবে।

তবে সুদীর্ঘ আট বছরের স্কুল জীবনে যা অর্জন করতে পেরেছি, তা পেয়ে আমি ধন্য। স্কুল জীবনের অধ্যায় শেষ করে আবার যেন নতুন কোনো অধ্যায় শুরু করতে পারি এবং জীবনে সার্থক কিছু করার মাধ্যমে দেশ ও জাতি এবং আমার প্রাণের বিদ্যালয়ের নাম যেন উজ্জ্বল করতে পারি, মহান স্রষ্টার কাছে সেই কামনাই রইল।

পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

13 Comments

মন্তব্য করুন