হোম কোয়ারেন্টাইন এ আছেন | বসে না থেকে দাবা খেলুন | কিভাবে দাবা খেলতে হয় পর্ব – ০২

আসসালামু আলাইকুম। যে যেখানে আছেন, যেই অবস্থায় আছেন। আশা করছি ভালোই আছেন। সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে আজকের আলোচনা শুরু করছি।
আজকে আলোচনার ২য় পর্ব। ১ম পর্বে দাবা খেলার প্রয়োজনীয়তা এবং গুটির সংখ্যা এবং নাম বর্ণনা করা হয়েছিলো। আজকে প্রতিটি গুটির ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। এবং কোন গুটি কিভাবে চালতে হয় তা বর্ণনা করা হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক দাবা খেলার সকল নিয়ম নীতি।

দাবা খেলায় মোট ৬ প্রকারের গুটি থাকে। উভয় দলে একই রকম এবং একই সংখ্যক (১৬টি করে) গুটি থাকে। উপরের চিত্র টি তে আপনাদের প্রতিটি গুটির পরিচয় দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নিচে প্রতিটি গুটির গুনাগুন এবং চাল দেওয়ার নিয়ম আলোচনা করা হলোঃ
রাজাঃ ♔ আন্তর্জাতিক ভাবে এই গুটির নাম king দাবা খেলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ গুটি এটি। একজন খেলোয়াড়ের ১ টি রাজা থাকে। কোন খেলোয়াড় এর যদি সবগুলো গুটি জীবিত থাকে কিন্তু রাজা আটকে যায়। অর্থাৎ রাজার কোন নিরাপদ ঘর না থাকে তবে সেই খেলোয়াড়ের পরাজয় নিশ্চিত। তাই খেলা চালিয়ে যেতে হলে রাজা নিরাপদে রাখা জরুরি। রাজা চাল দেওয়ার সময় চারিদিকে এক ঘর যেতে পারে। অর্থাৎ রাজা যেই ঘরে থাকবে তার আশেপাশের যে কোন এক ঘরে যেতে পারবে। তবে যেই সকল ঘরে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের গুটি দারা দখল করা থাকে সেই সকল ঘরে রাজার চাল দেওয়া যায় না।
রানীঃ ♕ আন্তর্জাতিক ভাবে এই গুটির নাম queen অনেকেই এই গুটিকে মন্ত্রী/মিনিস্টার বলে থাকেন। একজন খেলোয়াড়ের ১ টি রানী থাকে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ই এই গুটিকে মন্ত্রী বলে ডাকে তাই চিত্রে এই গুটির নাম মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে। রানী কে দাবা খেলার সবচেয়ে ক্ষমতাসীন গুটি ধরা হয়। এই গুটিটি চাল দেওয়ার সময় চারিদিকে সমান ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। একটি রানী ইচ্ছে করলে আট ঘর পর্যন্ত ছুটে যেতে পারে। অর্থাৎ সোজা এবং কোনাকুনি সবদিকেই যত দুর ফাকা ঘর পাবে ততদুর যেতে পারে। এককথায় রানী হচ্ছে দাবা খেলার সুপার পাওয়ার।
কিস্তি/নৌকাঃ ♖ আন্তর্জাতিক ভাবে এই গুটির নাম rook অনেকেই এই গুটিকে কিস্তি/নৌকা/বোট বলে থাকেন। এই গুটি টিও রানীর মতোই ইচ্ছে করলে এক লাফে ৮ ঘর পর্যন্ত যেতে পারে। তবে রানীর মতো সব দিকে যেতে পারে না। নৌকা শুধুমাত্র সোজাসুজি ঘরে যেতে পারে কোনাকুনি ভাবে যেতে পারে না। এটি ক্ষমতার দিক থেকে দাবার ২য় স্তরের গুটি। একজন খেলোয়াড়ের ২ টি নৌকা থাকে।
হাতীঃ ♗ আন্তর্জাতিক ভাবে এই গুটির নাম bishop বাংলাদেশের মানুষ এটিকে হাতী নামেই চিনে। একজন খেলোয়াড়ের ২ টা করে হাতী থাকে। একটি থাকে সাদা ঘরে। অপরটি কালো ঘরে থাকে। হাতী সবসময় কোনাকুনি ভাবে চলতে পারে। অর্থাৎ সাদা ঘরের হাতী সবসময় কোনাকুনি ভাবে সাদা ঘর গুলোতে যেতে পারবে। অপর দিকে কালো হাতী সবসময় কোনাকুনি ভাবে কালো ঘরে যেতে পারবে। সাদা ঘরের হাতী কখনোই কালো ঘরে যাতে পারে না এবং কালো ঘরের হাতী কখনোই সাদা ঘরে আসতে পারে না।
ঘোড়াঃ ♘ আন্তর্জাতিক ভাবে এই গুটির নাম Knight বাংলাদেশে এই গুটিকে সবাই ঘোড়া নামেই চিনে। প্রত্যেক টি খেলোয়াড়ের ২ টি করে ঘোড়া থাকে। দাবা খেলায় ঘোড়া একমাত্র গুটি যে অন্য গুটির উপর দিয়ে যেতে পারে। আর এই বিশেষ গুনের কারনে ঘোড়া কে দাবার সবচেয়ে ভয়ংকর গুটি বলা হয়। কোন ভালো মানের দাবাড়ু যদি দুই ঘোড়া একসাথে আক্রমণ শুরু করে। তবে যে কোন খেলোয়াড়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অনেকেই দুই ঘোড়াকে রানীর সাথে তুলনা করে থাকেন। সবাই বলে যে ঘোড়ার আড়াই ঘর চাল দিতে হয়। আর এখানেই অনেকেই ঘোড়ার চাল বুঝতে পারেন না। কারণ দাবার কোন হাফ ঘর নাই। আসলে ঘোড়ার চাল তিন ঘর দিতে হয়। তবে এখানে কিছু নিয়ম আছে। ঘোড়া কখনও কোনাকুনি যেতে পারে না। সোজাসুজি ঘরগুলোতে যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে সোজাসুজি তিন ঘর দেওয়া যাবে না। একবার বাক নিতে হবে। ইচ্ছে করলে দুই ঘর সোজা দিয়ে বাক নিয়ে এক ঘর যেতে পারে, আবার একঘর সোজা দিয়েও দুইঘর বাক নিতে পারে। আর এজন্যই তিন ঘর না বলে আড়াই ঘর বলা হয়। তবে অন্য গুটির মতো এক,দুই ঘর যেতে পারে না। অবশ্যই আড়াই ঘরই দিতে হবে। কম দেওয়া যাবে না। আর লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোন ভাবেই কোনাকুনি ঘরে যেতে পারবে না।
সৈন্যঃ ♙ আন্তর্জাতিক ভাবে এই গুটির নাম pawn প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ৮ টি করে সৈন্য থাকে। অনেকেই সৈন্যকে বড়ে নামে ডেকে থাকে। সৈন্যের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই গুটি সব সময় সামনের দিকে চাল দিতে হয়। ইচ্ছে করলেও পিছনে ফিরে আসতে পারে না। এটি প্রথম সারিতে থাকা অবস্থায় এক ঘর অথবা দুই ঘর সোজাসুজি যেতে পারে। কিন্তু একবার চাল দিয়ে দিলে অর্থাৎ প্রথম সারি অতিক্রম করার পরে এক ঘরের বেশি যেতে পারে না। সৈন্য যাওয়ার সময় সোজা যায় কিন্তু সোজা সামনের ঘরের গুটি খেতে/কাটতে পারে ন। এক ঘর সামনের কোনাকুনি ঘরের গুটি কাটতে পারে।

আজকের পর্বে দাবা খেলার প্রতিটি গুটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী পর্বে দাবা খেলার কিছু বিশেষ চাল এবং কিছু কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আশা করছি সবাই সেই পর্ব টি দেখবেন। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর হ্যা অবশ্যই ঘরে থাকবেন।

Related Posts

42 Comments

      1. ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এটি আগের পোস্ট এর লিংকঃ https://grathor.com/%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%ae-%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%86%e0%a6%9b%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ac/

    1. হা হা হা। হয়তো আপনি দাবা খেলা বোঝেন না। তাই আপনার ভালো লাগে না। দাবা খেলা এমনই। যে বোঝে তার মজা লাগে আর যে বোঝে না তার কাছে বিরক্ত লাগে। যাই হোক এটা নির্ভর করে যার যার মনের রুচির উপর। কারন সবার মন তো আর এক রকম না।
      ধন্যবাদ

মন্তব্য করুন