আজকের সমাজে নারীরা অহরহই ইভটিজিং এবং ধর্ষণের শীকার হচ্ছে। এর প্রতিকারে অনেকেই শুধুমাত্র পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর পরামর্শ দেয়। নারীদেরকে তারা কোন পরামর্শ দেয়না। তারা বলে বেড়ান নারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কিন্তু আমি মনেকরি এটা তাদের একটা প্রতারণামূলক চিন্তাধারা ও স্ববিরোধী বক্তব্য। এটা প্রমাণ করতে একজন নারীবাদী সুশিল ব্যক্তির সাথে একজন মুসলিম সাংবাদিকের একটি কাল্পনিক স্বাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো:-
সাংবাদিক: ভাই কেমন আছেন।
নারীবাদী: আমি ভালো আছি, আপনি?
সাংবাদিক: আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। ভাই আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই, অনুমোতি পাবো কী?
নারীবাদী: অবশ্যই, আপনার প্রশ্নগুলো এখনই করতে পারেন।
সাংবাদিক: আচ্ছা, বর্তমানে যে নারী ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিকারে আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
নারীবাদী: ধন্যবাদ আপনার প্র্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী, ইভটিজিং, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো উচিত। পুরুষদের বুঝা উচিত নারীরাও মানুষ, তাদেরও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আর এজন্য চাই সঠিক শিক্ষা ও পারিবরিক সচেতনতা তবেই ধর্ষণ ও ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধগুলো নির্মূল করা সম্ভব। (কথগুলো বলতে বলতে চেহারায় কৃত্তিম একটা ভাব ফুটিয়ে তুললো। মনে মনে ভাবছে নিজেকে মস্তবড় একজন পন্ডিত প্রমাণের এই তো সুযোগ!)
সাংবাদিক: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আচ্ছা, সমাজের আলেমরা যে বলে এজন্য নারীরাও দায়ী, তারা পর্দা করে না বলেই ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
নারীবাদী: আমি মনে করি এটা তাদের ধর্মীয় গুড়ামী। নারীদেরকে জোড় করে হিজাব পড়ালে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে। একজন নারীর নিজের মতো করে চলার অধিকার আছে। তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা মোটেই উচিত হবে না।
সাংবাদিক: তাহলে আপনি কি মনে করেন, এ ব্যপারে নারীর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত নয়? শুধু পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোই যথেষ্ট?
নারীবাদী: হ্যা, পুরুষরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেই তো ইভটিজিং ও ধর্ষণ বন্ধ হবে। যদি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টায় তবে নারীরা পর্দা করলেও তো লাভ হবে না। তাই নয় কি? (মনে মনে ভাবছে, এবার একটা মুক্ষম যু্ক্তি দাড় করানো গেলো, দেখি এবার কে এই যুক্তি খন্ডন করতে পারে)
সাংবাদিক: ধন্যবাদ ভাই, আপনার কথাটি খুবই যুক্তিসংগত বলে মনে হয়েছে। এখন আপনাকে আরেকটি অপ্রাসংঙ্গিক প্রশ্ন করতে চাই। অনুমোতি হবে কি?
নারীবাদী: হ্যা, হ্যা, কেন নয়। আপনার প্রশ্নটি নিঃস্বঙ্কুচে বলতে পারেন। (ভাবখানা এমন যে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়জ্ঞানী হয়ে গেছে)
সাংবাদিক: (মনে মনে ভাবছে, দাঁড়া দেখাচ্ছি এখন তোর পন্ডিতির বাহাদুড়ি) আচ্ছা ভাই, এই ঘরটি কি আপনার?
নারীবাদী: হ্যা, ঘরটি আমারই বটে। (সে মনে মনে ভাবছে সাংবাদিক মনেহয় সেই প্রসঙ্গ পাল্টে এখন ফিনিশিং লাইনে চলে যাবে)
সাংবাদিক: তো আপনি ঘর থেকে বের হলে কি ঘরটি খোলা রেখে চলে যান নাকি তালাবদ্ধ করে রাখেন?
নারীবাদী: হা হা হা.. কী সব প্রশ্ন করছেন? কোন সুস্থ্য মানুষ কি নিজের ঘর খোলা রেখে বাইরে যাবে। ঘর খোলা রাখলে তো চোরে সবকিছুই নিয়ে যাবে। আমার তো মতি নষ্ট হয় নাই যে, আমি ঘর খোলা রেখেই বাইরে যাবো।
সাংবাদিক: আচ্ছা ঘরটি যদি আপনারই হয় তবে, এর সমস্ত কিছুর অধিকার তো আপনারই। আপনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘর ব্যবহার করবেন। মাঝে মাঝে ঘর খোলা রেখে বাইরে যাবেন। সর্বদা ঘর তালাবদ্ধ রাখলে যেমন বাড়তি পরিশ্রম হয় তেমনি বাড়তি টাকা খরচ করে তালাও ক্রয় করতে হয়। তাছাড়া চোরদের দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে তো তালা মেরেও লাভ নেই। বাস্তবেও দেখা যায় অনেক সময় চোরেরা তালা ভেঙ্গে জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। তাহলে চোরদের দৃষ্টিভঙ্গি চেঞ্জ করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ঘর তালামেরে রাখা তো তেমন লাভজনক হবে না। তাই নয় কি?
নারীবাদী: (এইবার নারীবাদীর কান দিয়ে ধোয়া বের হওয়া শুরু হয়েছে। মুখ শুকিযে কাঠ হয়ে গেছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে) না, ইয়ে মানে, আসলে নিজের জিনিসের নিরাপত্তা তো নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে..।