‘লোগো’–যেকোন প্রতিষ্ঠানকে খুব সহজে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এর ভূমিকা অনেক। চারপাশে একটু নজর দিলেই আমরা দেখতে পাই লোগোর ছড়াছড়ি। সব লোগো আমাদের মনে দাগ না কাটলেও কয়েকটির সাথে আমাদের পরিচিতি বেশি। এমনই কিছু লোগো ও তাদের অর্থ নিয়ে আজ হাজির হয়েছি।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সকলেই গুগলের সঙ্গে পরিচিত। বর্তমানে গুগলকে ইন্টারনেট এর রাজা বললেও কম হয়।গুগলের প্রথম লোগো তৈরি করেন সের্গেই ব্রিন আর এর জন্য তিনি সাহায্য নেন ফ্রি গ্রাফিকস সফটওয়্যার জিআইএমপি’র। সাতবার পরিবর্তন হয় গুগলের লোগোটি। সবশেষ গুগল তার লোগো পরিবর্তন করেছে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর। বর্তমানে লোগোর ডিজাইন করার জন্য গুগলের একটি বিশেষ টিম রয়েছে, এই টিমের সদস্যদের ডাকা হয় ডুডলার নামে। খুবই সাধারণ চারটি ভিন্ন ধরনের রঙ দিয়েই অক্ষরগুলোকে সাজানো হয়েছে। রঙের এই অবিন্যস্থ অবস্থা দিয়ে গুগল বোঝাতে চায় তার অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের মতো বাঁধা ধরা নিয়মে আবদ্ধ থাকতে চায় না।
Apple
প্রকৃতপক্ষে অ্যাপলের সর্বপ্রথম লোগোটি ছিল স্যার আইজ্যাক নিউটন একটি আপেল গাছের নিচে বসে আছেন। সেই বিখ্যাত আপেল থেকেই অ্যাপল এর লোগো। কিন্তু এরপর apple কোম্পানি একাধিকবার নিজেদের লোগো পরিবর্তন করেছে। সর্বশেষ লোগো তৈরি করার পেছনের গল্প শেয়ার করেছেন লোগোটির ডিজাইনার রব ইয়ানভফ। তিনি বলেন, “আমি এক ব্যাগ ভর্তি আপেল কিনেছি এবং আপেলগুলো একটি বাটিতে রেখেছি এবং একসপ্তাহ ধরে তাদের এঁকেছি, তারপর তার মাঝে থেকে সহজ কিছু বের করে আনার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তেমন কিছু তৈরি করতে পারিনি। নিরীক্ষার অংশ হিসেবেই, আপেলে একটি কামড় (বাইট) বসাই এবং সম্পূর্ণ কাকতালীয়ভাবে আমি অনুভব করি, কামড় (bite) কম্পিউটারের ‘বাইট’ (byte) এর মতোই শোনাচ্ছে।
Unilever
বিশ্বের বৃহত্তম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার। খাদ্য, পানীয়, প্রসাধনী থেকে শুরু করে চার শতাধিক ব্র্যান্ডের পণ্য আছে এই ব্রিটিশডাচ কোম্পানিটির। গৃহস্থালীর পণ্যউৎপাদনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এটি। এই লোগো দেখেননি এরকম মানুষ আমাদের দেশে কেনো পৃথিবীতেই কম আছেন। আপাত দৃষ্টিতেতো একটি U দেখা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর মধ্যে রহস্যটা কোথায়? আমাদের কাছে এলোমেলো লাগলেও এরভেতরে থাকা ২৫টি আইকনের নকশা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সাজানো হয়েছে।এগুলো ইউনিলিভারের ২৫ ধরনের পণ্য এবং তাদের কোম্পানি ভ্যালুকে তুলে ধরে।আসলে ইউনিলিভার এমন একটি কোম্পানি যা খাবার-দাবাড় থেকে শুরু করে সাবান সবধরনের সেবা ও পণ্যই প্রস্তুত করে থাকে।আর এই সব পন্যই তাদের লোগোর মধ্যে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে। যেমন- হার্ট দিয়ে love, care and health, পাখি দিয়ে ফ্রিডম ও শার্ট দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন কাপড় বোঝানো হয়েছে।
LG
দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ইলেকট্রনিক সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এল জি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিলো ১৯৪৭ সালে। এলজি’র লোগোটি একজন ব্যক্তির মুখের একটি স্টাইলাইজড চিত্র। এখানে এল (L) দিয়ে বোঝানো হয়েছে নাক এবং জি (G) দিয়ে বোঝানো হয়েছে মুখমন্ডলের প্রতিকৃতি। কোম্পানির মতে, লোগোটি ‘এলজি’র গ্রাহকদের সঙ্গে সাধারণ মানব সম্পর্ক বজায় রাখার উচ্চাকাঙ্খাকে বহন করে। LG এর পূর্ণরূপ হল লাইফ ইজ গুড (LIFE’S GOOD)।
BMW
BMW পৃথিবীর সবচেয়ে নামকরা গাড়ির কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। প্রায়শই অনুমান করা হয় যে বিএমডব্লিউ লোগোটির কেন্দ্রীয় অংশ বিমানের ঘূর্ণায়মান ব্লেডকে নির্দেশ করে, যা কোম্পানির প্রারম্ভিক ইতিহাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু আদতে এটি কেবল বায়ার্নের পতাকার একটি অংশ কারন জার্মানির এখানেই এই কোম্পানিটি তৈরি হয়েছিল।
বিখ্যাত এই লোগোগুলোর পেছনের গল্প কি আপনি জানতেন? যদি এখন জেনে থাকেন, তাহলে এই ইতিহাস কি আপনাকে অবাক করেছে? কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আজ এই পর্যন্তই। আবার এইরকম মজার মজার তথ্য নিয়ে হাজির হবো। আল্লাহ হাফেজ।