২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি ভয়াবহ দিন হিসেবে চিহ্নিত। ঐ দিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের সড়কে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সমাবেশে হামলা চালানো হয়, যা মানবিকতার সকল সীমা লঙ্ঘন করেছিল।
গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ঘটনার ছবি এবং ভিডিও দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত সহিংসতা, যা তৎকালীন রাজনৈতিক উত্তেজনাকে চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
সেই সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসি, আলজাজিরা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও নানা প্রতিবেদন করে। সমাবেশের অনুমোদিত স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে জড়ো হওয়া মানুষজনের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের হাতে ছিল লগি, বৈঠা, পিস্তল, এমনকি বোমাও।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, হামলায় লগি-বৈঠার পিটুনিতে জামায়াত ও শিবিরের কয়েকজন কর্মী নিহত হয় এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন। ঘটনাস্থলে লাশের ওপর আনন্দ-উল্লাসের নজিরবিহীন দৃশ্য দেখা যায়, যা গোটা বিশ্বকে হতবাক করে।
এই ঘটনার পর জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এর নিন্দা জানায় এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে জনগণের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাদের দাবি ছিল, এই সহিংসতা মূলত তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আক্রমণ, যা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ব্যবহার করা হয়েছে।
২০০৬ সালের এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। জাতির বিশিষ্টজনেরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের এই সহিংসতার বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে না।