আমাদের আনন্দ ভ্রমন (জাফলং)
দুপুরে আমরা মিরপুর কালশী এলাকায় একত্র হলাম সবাই । আমরা সবাই কালশীর আশেপাশের বাসিন্দা তাই আমাদের স্টার্টিং পয়েন্ট হিসেবে কালশী কে বেছে নিয়েছিলাম। এরপর আমরা চার জন মিলে এয়ারপোর্ট বাস স্ট্যান্ড এ যেয়ে বাসে করে কিশোর গঞ্জ পৌছালাম। ওহ ! বলতে ভুলে গেছি , আমাদেও কিছু বন্ধু কিশোর গঞ্জে ছিল , তারাও আমাদের সফর সঙ্গি । যাই হোক কিশোর গঞ্জে পৌঁছাতে আমাদের সময় দুপুর পার হয়ে বিকাল হয়ে গেল। আমাদের জাফলং যাত্রা শুরু হওয়ার কথা এই কিশোর গঞ্জ এর হোসেনপুর থেকে।
আমাদের যাত্রা শুরু হবে রাত ৯.৩০ এ। সে কারণে আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় । আমরা এই সুযোগটা কাজে লাগালাম । পুরোনো অনেক বন্ধুদের দেখা পেলাম, যাদের কে কাজ আর যান্ত্রিক শহরের কোলাহলে প্রায় ভুলতে বসে ছিলাম। মনে হল যেন সেই ছেলে বেলায় ফিরে গেছি। কে কবে কার সাথে ঝগঢ়া করে কথা বলিনি, আধাঁর রাতে কার মামার গাছে ফল চুরি করে খেয়ে ফেলার কারণে বাড়িতে মায়ের কাছে নালিশ্ , তার সাথে সেই নরসুন্দা নদীর কুলুকুল করে বয়ে চলা, নদীর শীতল পানিতে দাপিয়ে বেড়ানো , সকল স্মৃতি চারণ করতে করতে সবাই মিলে নরসুন্দা তে একটু শরীর ভিজিয়ে ফেল্লাম। শরীর আর মনে পুরোনো কত স্মৃতি , আনন্দ আর বেদনায় মনটা সিক্ত হলো। আমরা সন্ধ্যায় নরসুন্দার তীরে একত্র হলাম সবাই চেক করে নিলাম আমাদের যাত্রার সরঞ্জাম এবং যাত্রী। আমরা ঢাকা থেকে চার জন এবং গ্রাম থেকে বাকী ৮ জন যাত্রার জন্য নির্ধারিত ছিলাম। সেই মোতাবেক একটি টয়োটা নোয়াহ গাড়ি ভাড়া করেছিলাম যার ভাড়া দশ হাজার টাকা। গাড়িটি আমরা ফিরে আসা পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবে।
রাত ৯.৪৫ আমাদের যাত্রা শুরু করে দিয়েছি। হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে চলেছে, আমাদের বিপরীত থেকে আসা বাতাস আমাদের মুখমন্ডলে তার ঝাপটা দিয়ে বিদায় নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক যেন আমাদের শৈশব্। যা কিছুক্ষন আগেও ছিল কিন্তু এখন তার চিহ্ন পর্যন্ত নাই। বাইরে তারা ভরা আকাশ , ঝিঁঝিঁ পোঁকাদের উড়াউড়ি । ঠান্ডা রাতের সাথে আমরাও মনে হয় ঠান্ডা হয়ে পুরোনো স্মৃতির পাতায় জমে গিয়েছিলাম। একজন বলে উঠল সামনে চা স্টল নামব। আমরা সবাই যেন এটাই চাইছিলাম। নামলাম বেগুনি ভাজা, ভাপা পিঠা, গরুর দুধের চা। জমিয়ে খেয়ে আমরা রওনা হয়ে গেলাম হযরত শাহ জালাল , শাহ পরান এর পবিত্র নগরী সিলেট এর উদ্দেশ্যে।
আমরা হৈচৈ শেষ করে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম চোখ খুলে দেখি চারিদিকে কুয়াশার চাদর, ভাল করে চোখ মুছে তাকালে দেখা যায় চা গাছের প্রতিটি পাতার মাথায় মুক্তোর মত শিশির কণাগুলো পবিত্রতা প্রকাশ করছে এই পবিত্র শহরের। সবাই ঘুম থেকে জেগে গেছে, একটি ছোট চা স্টলে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বিখ্যাত ৭ স্তর চা পান করলাম, হযরত শাহ জালাল এর মাজারে গেলাম , জিয়ারত করলাম। মন টা অনেক শান্ত লাগল। সিলেট শহরটার আশেপাশে একটু ঘোড়াঘুড়ি করলাম।
আবার গাড়িতে চড়ে রওয়ানা হলাম জাফলং এর উদ্দেশ্যে। এর মাঝে একবার বিরতি দিয়ে সকালের নাস্তা সারলাম চিকেন খিচুরী দিয়ে। সিলেট শহর থেকে জাফলং যেতে আমাদের সময় লাগল প্রায় ২ ঘন্টা। আমরা জাফলং এ নামলাম সকাল ১১ টায় , আমাদের আজকের ভ্রমনের প্রধান স্থান। জাফলং এ নেমে একজন প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার কনটাক্ট করলাম সারাদিনের জন্য কিছু পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে। সে আমাদের ছবিও তুলল আবার জাফলং এর সুন্দর জায়গা গুলো দেখাতে লাগল। একই সাথে পাহাড়, নদী, পাথুরে পথ , সবুজের ছড়াছড়ি , ভাবিনি বাংলাদেশ টাতে এত কিছু থাকতে পারে। জানি আমার দেশ অনেক সুন্দর কিন্তু এত অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্য মন্ডিত তা নিজে চোখে না দেখলে জানতাম না। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
আমরা ঘুড়তে ঘুড়তে বাংলাদেশের সিমানা অতিক্রম করে পাশর্^বর্তি দেশের মধ্যে প্রবেশ করে ফেলেছিলাম যা বডার গার্ড সদস্যদের বলার পর বোধগম্য হয়েছিল। আসলে এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোহে পড়ে অনেক কিছু ভুলে গেছিলাম। বুঝতে পারার পর আমরা নির্দিষ্ট এলাকা পরিত্যাগ করে ফিরে আসলাম। পাথর , পাহাড় , নদীর সাথে মিলে বর্তমান ভুলে যেতে বসেছিলাম। ক্ষুধা আমাদের বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। দুপুরের খাবার সময় প্রায় শেষ হতে চলল, ক্ষুধা না লাগলে বুঝতাম না। গোসল তো পানিতে সেরেই ফেলেছি সবাই , গেলাম খেতে ভর্তা , ভাজি , ঝাল ঝাল গরুর গোস্ত। ভরপেট খাইদাই শেষে বিল মিটিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম চায়ের দোকানে। সিলেটে বসে আছি আর খাওয়ার চা না খেলে চলে ? চায়ের দোকানে ৭ স্তরের চা পরিবেশন করা হল আমাদের। পরবর্তি গন্তব্য মার্কেট। অনেকেই বাড়ির জন্য কেনাকাটা করল, আমিও করলাম। কেনা কাটা যা করলাম তার চেয়ে ঘুড়লাম বেশি। সন্ধ্যার পর আমাদের ফেরার পালা শুরু হল। সব কিছু গুছিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম, বেশ রাত হয়ে গেল। মৌলভীবাজারে আসতেই রাতের খাবার সময় হয়ে গেছিল, সবাই নেমে হালকা খেয়ে ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর নিঝুম রাত সঙ্গে করে আবার সেই কিশোর গঞ্জ এ ফেরা। বাকী রাতটা কিশোর গঞ্জে কাটিয়ে কাক ডাকা ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা। আবার ব্যাস্ততায় ঘেরা জীবনে ফিরে চলা । পেছনে পড়ে রইল সবকিছু সাথে নিয়ে চলেছি কিছু অসম্ভব ভালোলাগা অনুভুতি আর মুহূর্তগুলো।
কক্সবাজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে রয়েছে সবচেয়ে সুন্দর একটি জায়গা,যে যায়গায় প্রতিটি বছর শীতকালীন থেকে শুরু করে গ্রীষ্মকালে ও টুরিস্টে ভরপুর থাকে।অর্থ্যাৎ সারাবছর...