Meta Platform এর যাবতীয় তথ্য। জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুকের কাহিনী

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটি ভিন্ন ধরনের টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। তো আজকে আমি আপনাদের সাথে মেটা/ফেইসবুক সম্পর্কে যতকিছু আছে তা সব কথা বলব।

কোম্পানিটি কিভাবে শুরু হয়?

মেটা (আগে ফেইসবুক) হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিরগুলোর মধ্যে একটি। এই কোম্পানিটির শুরু হওয়ার পিছনে অনেক কাহিনি আছে। ২০০৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র যার নাম মার্ক জাকারবার্গ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য FaceMash নামক একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন।
পরবর্তীতে জানুয়ারি ২০০৪ সালে, মার্ক জাকারবার্গ Facebook নামক একটি ওয়েবসাইটের জন্য কোডিং আরম্ভ করেন। 

পরবর্তীতে জাকারবার্গ হার্ভার্ডের আরেকজন ছাত্র Eduardo Saverin এর সাথে কথা বলে এবং তারা দুইজন এই ওয়েবসাইটে ১০০০ ডলার করে ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখান থেকেই শুরু হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যাত্রা। ধীরে ধীরে তারা আর্থিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে থাকে এবং আরো অন্যান্য ওয়েবসাইট তৈরি/কিনতে থাকে।
২০১১ সালের ৯ই আগস্ট ফেসবুক মেসেঞ্জার নামক একটি ওয়েবসাইট/আ্যপ তৈরি করে।
এরপর ২০১২ সালে ফেইসবুক ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইন্সটাগ্রামকে কিনে নেয়।
তারপর ২০১৪ সালের ১৯ই ফেব্রুয়ারিতে তারা ওয়াটসআ্যপকে ১৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ক্রয় করে নেয়।

কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা এবং কতজন employee কাজ করে?

বর্তমানে ফেইসবুক একটি ইন্ট্যারন্যাশনাল কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে তারা ১৩৭টির মতো দেশে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, বাংলাদেশও তার মধ্যে একটি। এবং তাদের মোট ১.৩ বিলিয়নেরও বেশি মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে।
বর্তমানে ফেইসবুকে মোট ৬০০০০ এর মতো চাকুরীজীবী রয়েছে। ফেইসবুকে চাকরি পাওয়া কিছুটা সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই। ধারণা করা হয় তাদের চাকুরীজীবীদের মধ্যে প্রায় ৩০০০ এর বেশিজন মিলিয়নিয়ার (কোটিপতি) অর্থাৎ ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি তাদের কাছে আছে।
বর্তমানে মেটা/ফেইসবুক কোম্পানির মূল কয়েক জন ব্যক্তি রয়েছে যারা কোম্পানিটিকে পরিচালনা করেন। 

এদের মধ্যে রয়েছেঃ
মার্ক জাকারবার্গ মেটাতে সিইও ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কোম্পানির শুরু হতে অর্থাৎ ২০০৪ সাল থেকেই এই দায়িত্ব পালন করে আসছে।
শেরিল স্যান্ডবার্গ মেটা প্লাটফর্মস এ সিওও এর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ড্যাভিড ওহেনার মেটা প্লাটফর্ম এ সিএফও এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ১লা জুন থেকে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

মাইক স্ক্রোফার মেটা প্লাটফর্ম এ সিটিও এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ক্রিস কক্স মেটা প্লাটফর্ম এ সিপিও এর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এ কোম্পানিতে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন।

<

কোম্পানিটির কি কি প্রোডাক্ট রয়েছে এবং সেগুলো কেমন জনপ্রিয়?

ফেইসবুক মূলত সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দিকে ফোকাস করলেও এদের অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে। এক মাধ্যম থেকে জানা গিয়েছে তারা ফেসবুকের নাম মেটা প্লাটফর্ম করেছে কারণ তারা নাকি “Metaverse” নামক কিছু তৈরি করতে চায়।

তাদের বর্তমানে প্রায় এক শতকের কাছাকাছি বিভিন্ন প্রোডাক্ট রয়েছে। তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আছে যা আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি। যেমনঃ ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, ওয়াটসআ্যপ, ইন্সটাগ্রাম, ইন্সটাগ্রাম রিলস, ওকুলুস। এগুলো ছাড়াও আরো আছে মোমেন্টস, ইন্টারনেট.অরগস, ফ্রেন্ডফিড ইত্যাদি।

কোম্পানিটি আনুমানিক কত টাকা উপার্জন করে?

মেটা প্লাটফর্মের মূল ইনকাম হচ্ছে আ্যডের মাধ্যমে। আ্যডের মাধ্যমে তারা কয়েক বিলিয়ন ডলার ইনকাম করে। মেটার বাৎসরিক ইনকাম প্রতি বছরই বাড়ছে।
নিচে আমি মেটা প্লাটফর্মের ২০১৮,২০১৯ ও ২০২০ সালের মোট ইনকাম, লাভ ও র‍্যাংকিং তুলে ধরব।
২০১৮ সালে তাদের বাৎসরিক ইনকাম ছিল ৫৫.৮ বিলিয়ন ডলার।
২০১৯ সালে তাদের বাৎসরিক ইনকাম ছিল ৭০.৬ বিলিয়ন ডলার।
২০২০ সালে তাদের বাৎসরিক ইনকাম বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫.৯ বিলিয়ন ডলার।

২০১৮ সালে তাদের লাভ হয় ২৪.৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে তাদের লাভ হয় ২৩.৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তাদের বাৎসরিক ইনকাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় এবং তার এ বছর ৩২.৬ বিলিয়ন ডলার ইনকাম করেন।

Fortune এর জরিপ হতে,
২০১৮ সালে মেটা প্লাটফর্ম /ফেইসবুক এর র‍্যাংক ছিল ৫৭ তম।
২০১৯ সালে তাদের র‍্যাংকিং ছিল ৪৬ তম।
২০২০ সালে তাদের র‍্যাংকিং হয় ৩৪ তম।

আমরা যদি মাইক্রোসফট বা অন্যান্য বড় কোম্পানির কথা বলি, তারা অনেক আগে থেকেই ব্যবসায় আছে এবং এর জন্য এদের ইনকাম, লাভ বা র‍্যাংকিং ভালো। কিন্তু ফেইসবুক মাত্র ১৮ বছর আগে  ২০০৪ সালে তৈরি করা হয় এবং অনেক কম সময়ের মধ্যে এটি একটি টেক জায়েন্টে রূপান্তরিত হয়।

যে ফেইসবুক ২০০৪ সালে বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ ও আনন্দের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেই ফেইসবুক আজ একটি মাল্টি-বিলিয়ন ইন্ট্যারন্যাশনাল কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। যে ফেইসবুকের ২০১০ সালে বাৎসরিক ইনকাম ছিল ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার সেই ফেইসবুকের ২০২০ সালে বাৎসরিক ইনকাম হয় ৮৫.৯ বিলিয়ন ডলার। যে মেটার ২০১২ সালে র‍্যাংকিং ছিল ৪৮২ তম সেই মেটার এখন র‍্যাংকিং ৩৪ তম।
আমার মনে হয় জাকারবার্গ নিজেও চিন্তা করতে পারেনি যে ফেইসবুক একদিন এই জায়গায় এসে পৌঁছাবে। চেষ্টা থাকলে এবং বুদ্ধি দিয়ে কাজ করলে সবই যে সম্ভব ফেইসবুক তার একটি প্রমাণ।

তো আজকের জন্য এতটুকুই। পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আবার কয়েকদিন পর আপনাদের সামনে হাজির হব নতুন কোনো টপিক নিয়ে। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সেই কামনা নিয়ে আজকের জন্য বিদায় জানাচ্ছি। Widedetails এর সঙ্গেই থাকুন।

Related Posts