আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বেশ ভালোই আছেন।
তবে একটু খারাপ লাগে তাদের জন্য, যাঁরা ট্রিপানোফোবিয়ার শিকার। যেকোন রোগের ইনজেকশন নিতে তাঁরা ভয়েই কাবু হয়ে যান। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত। আপনিও কি ট্রিপানোফোবিয়া ভিকটিম?
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক..
ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে।
আজ আমরা ট্রিপানোফোবিয়া বা ইনজেকশন নেওয়ার সময় প্রচুর ভয় অনুভব করা নিয়ে আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জানতে হলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ট্রিপানোফোবিয়া: ট্রিপানোফোবিয়ার অর্থ ইনজেকশন নেওয়ার সময় প্রচুর ভয় অনুভব করা মতো একটি ভীতিকর মনোভাব। সাধারণত যেসব মানুষের বিভিন্নরকম রোগ থেকে বাঁচতে প্রায়শই ইনজেকশন নিতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই ফোবিয়াটি থাকলে সেটা খুব খারাপ। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে কারণবশত কোন ইনজেকশন সহজেই দেওয়া যায়না। ইনজেকশনের সূঁচটা দেখলেই তাঁদের জান বেরিয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে গেলে বা হাসপাতালে বড় কোন চিকিৎসা করানো লাগলে তাঁদের মনে এই ভয়টাই কাজ করে যে, হয়তো এক্ষুণি আমার শরীরে ইনজেকশন গেঁথে যাবে! আমি খুবই ব্যথা পাবো! অজ্ঞান হয়ে যেতে পারি ইনজেকশন ঢুকালে! ইত্যাদী..
আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ছোটবেলায় আমার এই ফোবিয়াটি মাত্রাতিরিক্ত হারে ছিলো।
হাম রুবেলার টিকা প্রদানে প্রতিটি স্কুলে স্কুলে সরকার কর্তৃক ফ্রি তে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। সম্ভবত তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি। একদিন হটাৎ করে স্যারেরা সিদ্ধান্ত নেন যে আজকে ৪ ঘন্টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাবে।
আমরা বন্ধুরা তো বেজায় খুশি! আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হচ্ছে। বাসায় গিয়ে খুব করে ক্রিকেট খেলবো। এই সেই কতকিছু।
কিন্তু চতুর্থ ঘন্টা বাজার পর আমি যা দেখলাম, তাতে আমার কান্না চলে আসার মতো অবস্থা। আজ টিকা দিবে। প্রথমে ভেবেছিলাম পোলিও টিকার মতো কিছু একটা খাইয়ে দিবে। পরে দেখি ইনজেকশন পুশ করবে আমাদের শরীরে।
আমার অনেক বন্ধুই তড়িঘড়ি করে স্কুল পালানোর চিন্তা করছিলো। সাথে আমিও। পরে আর সম্বব হয়নি যখন হেডস্যার এসে আমাদের পথ বন্ধ করে দিলেন।
পালাক্রমে আমাকে টিকা দেওয়ার পালা যখন এলো, প্রায় কান্না করে দিয়েছিলাম। ক্লাস টেনে পড়ুয়া একটা ছেলে কান্না করছিলো। সবাই হাসতে হাসতে ক্লাসটা উজাড় করে দিচ্ছিলো।
এরকম আরও অনেক ঘটনার সাক্ষী ছিলাম আমি আমার জীবনে। আপনাদের জীবনেও এসবের কম নেই আশা করি। নিচে কমেন্ট বক্স তে আছেই, অনুরোধ করছি, জানিয়ে দিয়েন যদি আপনারও এরকম কোন বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে থাকে..
পাঠকদের জানিয়ে রাখি এই জাতীয় ফোবিয়া বা ভয়ে মানুষ নিজেদের রোগব্যাধী গোপন করে রাখতে পছন্দ করে। তাঁদের নিজেদের স্বভাবে একটু অলসতা ও রোগের চিকিৎসার প্রতি অনীহা ভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষভাবে তাঁরা একটু বাচাল টাইপের হয়। তবে আপনি যদি কোনভাবে তাদের ভয়টা ভাঙিয়ে নিতে পারেন, তাহলে ধরে নিন তাঁরা আপনার ফ্যান হয়ে যাবে।
জেনে রাখা উচিৎ যে, এই ট্রিপানোফোবিয়া বা সূঁচ এবং ইনজেকশন নেওয়ার সময়কার ভয় মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়ে যায়। তখন তারা ভাবে যে এই ইনজেকশনটাই তাদের মৃত্যু। সে সময় সাধারণত ডাক্তাররা নাজেহাল হয়ে যান।
এই ফোবিয়ায় কমবেশি সবাই-ই আক্রান্ত। তবে জেনে রাখুন এটি বিশেষ কোন রোগ নয়। টিকা বা ইনজেকশন পুশ করতে এভাবে অস্থির হওয়া নিয়ে অতিরিক্ত ভয় থাকলে সেটা নিবারণের জন্য কিছু ব্যবস্থা চাইলে আপনি নিতে পারেন। যেমনঃ
১. আত্মবিশ্বাস নিয়ে এটা মনে করবেন যে, আপনার কিছুই হচ্ছেনা। আপনি আপনার সুবিধার জন্য আপনার শরীরকে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। কখনোই আপনি ইনজেকশন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেননা।
২. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যাঁদের প্রতিদিন ইনজেকশন নিতে হয়, তাঁরা ইনজেকশন নেওয়ার ব্যাপারটাকে মানসিকভাবে একটু সহজে নিতে শিখুন।
৩. মেডিটেশন চর্চা করুন।
কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনিও যদি এই ফোবিয়ার ভিকটিম হয়ে থাকেন..
পরবর্তী পোস্টে আরও একটি ফোবিয়া বা ভয় রোগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে থাকবে সেই ফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপগুলোও।
Related Tags:
ফোবিয়া কি?
ফোবিয়া কাকে বলে?
Trypanophobia
Belonephobia
Enetophobia
ট্রিপানোফোবিয়া
ট্রাইপানোফোবিয়া
বেলনফোবিয়া
এনেটোফোবিয়া
ইনজেকশন নেওয়ার সময় প্রচুর ভয়
সূঁচ বা ইনজেকশন নেওয়ার সময় ভয়
ইনজেকশন নেওয়ার ভয় থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
ট্রিপানোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
ট্রাইপানোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
বেলনফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
এনেটোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ