আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বেশ ভালোই আছেন।
তবে একটু খারাপ লাগে তাদের জন্য, যাঁরা এনথ্রোপোফোবিয়ায় আক্রান্ত। এটি এক প্রকার সামাজিক ব্যাধি। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত। আপনিও কি এনথ্রোপোফোবিয়ার ভিকটিম?
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক..
ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে।
আজ আমরা এনথ্রোপোফোবিয়া বা নতুন মানুষের সঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রে ভয় অনুভব করা নিয়ে আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জানতে হলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এনথ্রোপোফোবিয়া: এনথ্রোপোফোবিয়ার অর্থ হলো নতুন মানুষের সঙ্গী হওয়ার সময় ভয় অনুভব করার মতো ভীতি। সাধারণত যেসব মানুষ নিজের পূর্ব পরিচিত ব্যতীত অন্য কোন নতুন মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষভাবে ভয় পেতে থাকে, তারা এনথ্রোপোফোবিয়ার ভিকটিম বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাঁরা সাধারণত নতুন বা অপরিচিত মানুষ দেখলে অত্যন্ত ভয় পেয়ে যায়। এমনকি তাঁদের মুখ থেকে “কেমন আছেন” বাক্যটি শুনলেও এনথ্রোপোফোবিয়ার ভিকটিমদের জান বেরিয়ে যায়। সবসময়ই তাঁদের মনে এই ভয়টাই কাজ করে যে, হয়তো এক্ষুণি আমার পাশের অচেনা লোকটি বমার জীবনে এন্ট্রি নিবে! হয়তো এক্ষুণি কোন খারাপ কিছু আমার সাথে ঘটতে যাচ্ছে! হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটির খারাবির কবলে আমাকে পড়তে হবে! হয়তো এই অপরিচিত লোকটি আমার সর্বস্ব কেড়েও নিতে পারে!
আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ছোটবেলায় আমার একমাত্র ছোট ভাই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ছিলো। প্রচুর ভয় পেত সে নতুন লোকের সাথে কথা বলতে। এমনকি আমার বন্ধুদের সামনেও সে যেত না।
একদিন আমার বাসায় কিছু লোক আসে আমার বাবার বন্ধুর পরিচয়ে। আমি তাঁদের মেহমানদারী করি। আমার ছোটভাই তাঁদের খেয়াল করেনি ও হঠাৎ করে তাঁদের সামনে চলে আসে। তাঁরাও আদর করার জন্য ডাকে আমার ছোটভাইকে।
এই দেখে সে ভয়ে ছোট খাট একটা স্ট্রোক করে ফেলে সেখানে। তাড়াতাড়ি করে আমি তাকে মাটি তেকে তুলি আর মুখে পানি ছিটাই। বলতে গেলে অনেক লম্বা কাহিনী হবে, তাই কাহিনী সংক্ষেপ করছি। একটা এলাহী কান্ড হয়ে যায় সেদিন!
এর আরও অনেক বছর পর, যখন সে ক্লাস নাইনে পড়তো। সহজেই স্কুলে যেতে চাইতোনা। ক্লাস নাইনে তার অনেক বন্ধু তার স্কুল তেকে বিদায় নিয়ে নিয়েছে। আর অনেকগুলো নতুন নতুন ছাত্র ভর্তি হয়েছে তার স্কুলে। সে নতুনদের মাঝে তখনও আমার ভাই যেতে চাইতোনা। ধীরে ধীরে তাকে বিশেষভাবে কাউন্সিলিং করি আমরা। আর ইন্টারমিডিয়েট লাইফে এসে সে ঠিক হয় কোনমতে।
এরকম আরও অনেক ঘটনার সাক্ষী আমি আমার জীবনে। আপনাদের জীবনেও এসবের কম নেই আশা করি। নিচে কমেন্ট বক্স তে আছেই, অনুরোধ করছি, জানিয়ে দিয়েন যদি আপনারও এরকম কোন বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে থাকে..
পাঠকদের জানিয়ে রাখি এই জাতীয় ফোবিয়া বা ভয়ে মানুষ নিজেদেরকে একটু আড়াল করে রাখতে পছন্দ করে। তাঁদের নিজেদের স্বভাবে একটু অলসতা ও চেহারায় প্রায়শই ভয়াল ভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষভাবে যদিও তাঁরা নিজের কাজে প্রতি মোটামুটি মনোযোগী, তাঁরা অন্যদের জন্য অনুপস্থিত ও একটু অসামাজিক টাইপের হয়। অসমাাজিক বলতে মানুষের সাথে সচরাচর মিশতে চায়না এমন। তাঁরা অমানুষ নয়, খেয়াল রাখবেন। তবে আপনি যদি কোনভাবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতে পারেন, তাহলে তাঁরা সে সঙ্গ কখনোই ভাঙবেনা এবং আপনার সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে যাবে।
তবে জেনে রাখা উচিৎ যে, এই এনথ্রোপোফোবিয়া বা নতুন মানুষের সঙ্গী হওয়ার ভয় মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ অন্যান্য আরও ফোবিয়া বা ভয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমনঃ অটোফোবিয়া বা একাকীত্বের ভয় রোগ, প্যানিক ডিসঅর্ডার, ইত্যাদী।
এই ফোবিয়ায় কমবেশি সবাই-ই আক্রান্ত। তবে জেনে রাখুন এটি বিশেষ কোন রোগ নয়। জীবনে এভাবে অস্থিরভাবে সময় যাপন করা নিয়ে অতিরিক্ত ভয় থাকলে সেটা নিবারণে কিছু ব্যবস্থা আপনাকে অবশ্যই নেওয়া উচিত। যেমনঃ
১. আত্মবিশ্বাস নিয়ে এটা মনে করবেন যে, আপনি মানুষটা মুক্ত। কেউই আপনার অনুমতি ছাড়া আপনাকে ছোঁয়ার মতো সাহস রাখতে পারেনা। আপনার অনুমতি ব্যতীত কখনোই আপনি অন্যকারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেননা।
২. নতুন মানুষ, নতুন সঙ্গ, নতুন জীবন,,, ব্যাপারটাকে সহজে নিতে শিখুন।
৩. নিয়মিত বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। ভ্রমণে বের হউন। কাজে ব্যস্ত থাকুন এবং সঙ্গীতের চর্চা করুন।
কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনিও যদি এই ফোবিয়ার ভিকটিম হয়ে থাকেন..
পরবর্তী পোস্টে আরও একটি ফোবিয়া বা ভয়রোগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে থাকবে সেই ফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপগুলোও।
Related Tags:
ফোবিয়া কি?
ফোবিয়া কাকে বলে?
Anthropophobia
এনথ্রোপোফোবিয়া
সামাজিক ব্যাধি
নতুন মানুষের সঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রে ভয়
সঙ্গী হওয়ার সময় ভয় অনুভব করা
এনথ্রোপোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
সামাজিক ব্যাধি থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ