বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইভ টিজিং। বাংলাদেশে শিশু,যুবতী, কুমারী এমনকি বিবাহিত নারীরাও ইভ টিজিং এর শিকার হয়। ইভ টিজিং হলো এমন একটি শব্দ যা জনসম্মুখে বা আড়ালে পুরুষ কর্তৃক নারীকে উত্যক্ত করাকে বোঝায়। ইভ শব্দটি দ্বারা বাইবেলে বর্ণিত পৃথিবীর প্রথম নারীকে বুঝানো হয়। আমাদের দেশে মহামারীর মত ইভ টিজিং এর মাত্রা বেড়েই চলেছে।বাংলাদেশে ইভ টিজিং এর অত্যন্ত সমস্যা ভয়াবহ।বর্তমানের তরুন সমাজের কাছে ইভ টিজিং খুব সাধারণ একটা বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ইভ টিজিং বলতে বোঝায় নারীদের অপ্রীতিকর প্রশ্ন,বাজে অঙ্গভঙ্গি, কোনো কিছু না বলেও কৌশলে কুপ্রস্তাব দেয়া,কোথাও নারীকে একা পেয়ে অশালীন কথা বলা বা তার গায়ে হাত দেয়া যার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলে।দুর্ভাগ্য বশত এই ঘটনার গুলোর মাত্রা আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।ইভ টিজিং নারীদের জন্য একটা বিরাট বড় হুমকিস্বরূপ যা দিন দিন কমছে তো নাই বরং আরো বাড়ছে।বাংলাদেশের কোনো শহর ই নারীদের জন্য তেমন সুরক্ষিত নয়।যদিও আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত চলছি এবং উন্নতির অনেকটা নিকটে পৌঁছে গেছি কিন্তু এখনো আমরা আমাদের দেশের কর্মরত নারীদের এবং অন্যান্য সকল বয়সের মেয়েদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি নি।বাংলাদেশের বড় বড় শহর গুলোতে ইভ টিজিং খুব বড় একটা সমস্যা।আমাদের দেশে ইভ টিজিং এর অনেক কারণ রয়েছে।তাদের মধ্যে ইভ টিজিং এর অন্যতম বড় একটি কারণ হলো, প্রকৃতিগত ভাবে নারী পুরুষের একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করা।যখন একটা পুরুষ একজন নারীকে সরাসরি ভাবে দেখে তখন সে নিজের তখন তার মধ্যে এক অজানা তাড়না কাজ করে।সে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে না।কখনো কখনো পুরুষ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং এর ফলে ই ইভ টিজিং ঘটে। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, ইন্টারনেট, অন্য দেশের সংসস্কৃতি অনুসরণ ইত্যাদি কারণও ইভ টিজিং ঘটার জন্য ব্যপকভাবে দায়ী। মানুষ সরাসরি যৌন মিলন,টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা দেখে এবং সেই একই কাজ করার চেষ্টা করে যা ইভ টিজিং ঘটায়।বাজে ও অশালীন চলচ্চিত্র ও নাটক ও অনেকাংশে ইভ টিজিং কে উৎসাহিত করে। কোনো ছেলে যদি দেখে যে নাটক বা চলচ্চিত্রের নায়ক একজন ইভ টিজার তাহলে সে আরো বেশি করে সেগুলোর প্রতি আকর্ষিত হয় এবং ইভ টিজিং এর মত অশ্লীল কাজের সাথে সহজে ই যুক্ত হয়ে পড়ে। কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনেও এখন ফোন করা, মেসেজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান,গান ইত্যাদিও দেখা যায়,এর মাধ্যমে একজন নিজের আসল পরিচয় গোপন করে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির সাথে সহজে ই বন্ধুত্ব করে ফেলে এবং এই নকল বন্ধুত্বও এক সময় ইভ টিজিং ঘটায়।বাংলাদেশে ইভ টিজিং এর যোগ্য শাস্তির অভাবও ইভ টিজিং কে বেড়ে উঠতে উৎসাহিত করে।বাংলাদেশে ইভ টিজিং রোধ করার জন্য কিছু আইন আছে কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয় এবং যথাযথভাবে কার্যকর ও করা হয় না বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা,আর্থিক সমস্যা ও রাজনৈতিক কারণে।
অবৈধ ও অনিরাপদ মদ্যপান,ড্রাগ, এলকোহল ইত্যাদি গ্রহণ করাও ইভ টিজিং এর অন্যতম কারণ। যখন কেও এসব অস্বাস্থ্যকর বস্তু গ্রহণ করে তখন সে নিজের মধ্যে থাকে না।তার মাথা কাজ করে না। সে কি করছে কি দেখছে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সে নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং এমন সময় সে ইভ টিজিং সহ অন্য আরো অনেক খারাপ কাজ করে থাকে। বেকার যুবকেরা সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়ে থাকে।তাদের কোনো কাজ থাকে না আর এরাও ইভ টিজিং এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। যখন একজন পুরুষের কোনো কাজ থাকে না তখন সে সয়তান হয়ে যায় এবং বিভিন্ন আজে বাজে কাজ করে সময় কাটায়।এবং এরকম শুধু সময় কাটানোর জন্য অনেকে ইভ টিজিং করে।
বাংলাদেশের এই অন্যতম সামাজিক ব্যধি দূর করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ইভ টিজিং রোধে বাবা মায়ের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।তাদের কর্তব্য হলো তাদের সন্তানদের বাজে কাজ এবং প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। বাবা মায়ের অবশ্যই উচিত তাদের সন্তানকে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় ও শিক্ষিত করে তোলা।তাদের এটাও শিখাতে হবে যে কোন জিনিস গুলো তাদের দেখা উচিত আর কোন গুলো তাদের দেখা উচিত নয়। বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।যাতে করে তারা তাদের সাথে নিজেদের সব কিছু শেয়ার করে।তাদের সাথে কখনো রুক্ষ ভাষায় কথা বলা উচিত নয় এমনকি বকাঝকাও করা উচিত নয়। সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে তারা বাজে ও অশ্লীল কাজ থেকে অনেকটা দূরে থাকবে।ছেলেদের অবশ্যই বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সম্মান করা শেখাতে হবে। তাদের কে সকল বিষয় বন্ধুর মত করে সহজে, ভালোভাবে বোঝাতে হবে। কারণ অতিরিক্ত শাসন করার ফলে তরুণদের মন বিকৃত হয়ে যেতে পারে এবং তখন তারা ভালো খারাপ বুঝতে চায় না।পরিবারকে অবশ্যই তাদের মেয়ে সন্তানের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে।আর এই বিশ্বাসের ফলে মেয়েরা তাদের যেকোনো সমস্যার কথা তার পরিবারকে জানাতে পারবে এবং একই সাথে আত্মবিশ্বাসের সাথে ইভ টিজার দের মোকাবিলা করতে পারবে কোনো ভয় ছাড়া ই। সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হলো নারীদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলা। তাদের উচিত পুরুষদের ভয় না পেয়ে তাদের করা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রতিবাদ করা এবং তাদের প্রতিহত করা। এমনটা হলে কোনো পুরুষ আর ইভ টিজিং করার সাহস পাবে না। ইভ টিজিং অবশ্যই রোধ করা উচিত। আর এই সমস্যা রোধে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।আমাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীদের সম্মান করা শিখতে হবে এবং তাদের যোগ্য মর্যাদাও দিতে হবে।সমাজে নারী পুরুষ উভয়ে ই সমান। উভয়ের অবদান ই সমান। আমাদের সচেতনতার অভাবে অনেক নারী তাদের প্রাণ হারান। ইভ টিজিং এর কথা নারীরা কাওকে বলতে পারে না কারণ এর জন্য তাদের ই দায়ী কর হয় যেখানে তাদের কোনো দোষ ই থাকে না।আর অনেক সময় নারী তার আত্মসম্মানের ভয়ে ইভ টিজিং এর কথা কাওকে বলতে পারে না।নিজে নিজে ই কষ্ট পেতে থাকে এবং অনেক সময় কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। কিন্তু শীঘ্রই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। আমরা আর কোনো প্রাণকে বিদায় জানাতে চাই না। নারীদের ও স্বাধীনভাবে পূর্ণ অধিকার সহ পৃথিবীতে বাচার অধিকার আছে। তাদের কখনো তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত না।স্বাধীনতা তাদের জন্মগত অধিকার। পুরুষদের মতো তাদেরও বাচার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। পরিবার এবং সমাজের উচিত তাদের মানসিক বিপর্যস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা।তাদের পাশে থাকা। একই সাথে সরকারের ও দায়িত্ব নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ইভ টিজিং রোধে কঠোর আইন গড়ে তোলা ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।সর্বোপরি সকলের ই সচেতন থাকা উচিত ইভ টিজিং রোধে।
দেখে
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া যৌক্তিক কি না-
কিছুদিন আগে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে একটি দাবি এবং প্রশ্ন বার বার শোনা যাচ্ছে। প্রশ্নটি হলো 'ছাত্ররাজনীতি...