আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই? আজকের এই গল্পটিতে মধ্যেবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা এক সাধারণ মেয়ের কথা বলা হয়েছে। তার অনেক স্বপ্ন কিন্তু তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে তার পরিবার মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্ত তবুও মেয়েটি তার ইচ্ছাশক্তি আর আত্নবিশ্বাস দিয়ে বার বার চেষ্টা করে যায়।
গল্পের শুরুতে একটি ট্রেনের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী গান গাইতে গাইতে অনেক মজা করছিলো। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে ছিলো যার নাম ইনসিয়া। সেও একপর্যায় গিটার বাজিয়ে নিজের মনে গান গাইতে শুরু করে। সবাই তখন গান থামিয়ে মুগ্ধ হয়ে ইনসিয়ার গান শুনতে শুরু করে। মেয়েটার কন্ঠ অনেক সুন্দর। তখনি একটি ছেলে এখানে আসে। এই ছেলেটি ইনসিয়ার বন্ধু চইতান। ইনসিয়া থাকে দেখে বলে মেয়েদের মধ্যে কি করছিস? যা এখান থেকে। চইতান তাকে একটা পেপার দিয়ে বলে এন্টার স্কুলে একটা গানের প্রতিযোগিতা চলছে।
প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হতে পারলে একটা ল্যাপটপ পুরস্কার দেওয়া হবে। ইনসিয়া সেই বিজ্ঞাপনের পেপারটি হাতে নিয়ে অনেক খুশি হয়। এরপর যখন ট্রেন থামে স্টেশনে ইনসিয়ার মা তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। ইনসিয়ার মা বলে তর কথা অনেক মনে পড়েছে। কেমন আছিস? ইনসিয়া বলে তোমার চোখে কি হয়েছে? ইনসিয়ার মা বলে কিছু না এমনি ব্যাথা পেয়েছি। ইনসিয়া ভালো করে বুঝতে পারে এখানে তার বাবা আঘাত করেছে।ইনসিয়ার বাবা একজন কঠিন মানুষ প্রচন্ড রাগী। ইনসিয়ার মা আর ইনসিয়া এই পৃথিবীতে একটি জিনিস এ ভয় পায় আর সেটা হচ্ছে ইনসিয়ার বাবা। ইনসিয়ার পরিবারে তার বাবা মা ছাড়াও আছে তার ছোট ভাই সিয়াম এবং তার দাদি । আর ইনসিয়ার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হচ্ছে তার মা। যার কাছে সে সব কথা শেয়ার করতে পারে। বাবাকে ইনসিয়া অনেক ভয় পায়।
ইনসিয়া খুব সাধারণ একটি মেয়ে। তার গান গাওয়ার অনেক শখ। তার স্বপ্ন একজন গায়িকা হওয়ার। কিন্তু তার মতো পরিবার থেকে উঠে এসে গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন আকাশের চাঁদ ধরার সমান। মা ও মেয়ে প্রতিদিন টিবিতে একটি গানের অনুষ্ঠান দেখে। এ অনুষ্ঠান টি পরিচালনা করে শক্তি কুমার নামের এক জন ভদ্রলোক। ইনসিয়া নিজের কল্পনায় শক্তি কুমারের পাশে নিজেকে দেখতে পায়। কিন্তু এটা ভেবে তার দুঃখ হয় তার এই স্বপ্ন সারাজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে। এরপর ইনসিয়া তার মাকে বলে মা এন্টার স্কুলে একটা গানের প্রতিযোগিতা হবে। সেখানে ফাস্ট হতে পারলে একটা ল্যাপটপ পুরস্কার দেওয়া হবে। ইনসিয়ার মায়ের নাম হচ্ছে নাজমা। তিনি বলেন তুই গানের প্রতিযোগিতায় গেলে তর বাবা অনেক রেগে যাবেন। ইনসিয়া বলে কিন্তু আমার একটা ল্যাপটপ এর অনেক শখ।
নাজমা বলেন না থাক ইনসিয়া তর বাবা তর গিটার টাই সহ্য করতে পারে না। তুই গান গাইতে গিয়েছিস শুনলে একদম মেরে ফেলবে। ইনসিয়া এই কথা শুনে অনেক মন খারাপ করে। তখন নাজমা বলেন একটা বুদ্ধি আছে তর বাবা যখন খেতে বসেন তখন তার মন ভালো থাকে তখন বলে দেখিস। ইনসিয়া এবার অনেক খুশি হয়ে যায়। এরপর ইনসিয়ার বাবা যখন বাসায় এসে খেতে বসেন ইনসিয়া তার সামনে গিয়ে বলার চেষ্টা করে। কিন্তু ইনসিয়ার বাবা বলেন খাবারে লবন দেয় নি। নাজমা এসে বলে দুঃখিত। ইনসিয়ার বাবা বলেন ১৭ ঘন্টা তোমাদের জন্য পরিশ্রম করি আর তুমি বাড়িতে ঠিকমত রান্নাটাও করতে পার না? ইনসিয়ার বাবা না খেয়েই উঠে যায়। হাত ধুতে গিয়ে তিনি বলেন নাজমা আমার ব্যাগ গুছিয়েছো আমাকে কাল সকালে যেতে হবে। নাজমা এসে বলেন ব্যাগ এখনো গুছানো হয় নি।
ইনসিয়ার বাবা বলেন এখনো ব্যাগ গুছাও নি? নাজমা বলে দুঃখিত। ইনসিয়ার বাবা এবার রেগে গিয়ে তার হাত থেকে প্লেট ফেলে দিয়ে বলে আরেকবার দুঃখিত বললে তোমাকে উঠে ফেলে দিবো। রান্নায় করো লবন হয় না সাধারণ কাজ করতে দিলে তুমি করো না। কি করতে পারো তুমি? ইনসিয়ার বাবা চলে যায়। ইনসিয়া তার মাকে বলে তোমাকে কতো বার বলেছি বাবাকে ডিবোর্স দিয়ে দাও এখনো দিচ্ছো না কেনো? নাজমা বলেন আমিও তোকে কতবার বলেছি তর বাবা ছাড়া আমাদের আর কে আছে? কে দেখবে আমাদের? পরের দিন ভোরে ইনসিয়ার বাবা এক সপ্তাহের জন্য কাজ করতে বাইরে যান। ইনসিয়া রেডি হয়ে স্কুলে চলে যায়। স্কুলে চইতান তার কাছে এসে বলে চকলেট খাবি?ইনসিয়া চকোলেট নেয়। এরপর ইনসিয়া বাড়িতে ফিরে একটা গিফট বক্স দেখতে পায়। বক্স খুলে সে দেখতে পায় এখানে একটা ল্যাপটপ। তার মা তাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে। ইনসিয়া তার মাকে জিজ্ঞেস করে এতো টাকা কোথায় পেলে? নাজমা বলেন পেয়েছি কোথাও থেকে।
ইনসিয়া বলে তুমি ধার করেছো তাই না। আমি এটা নেবো না। ফেরত দিয়ে আসবো। নাজমা বলেন পাগল হয়েছিস আমি তর খুশির জন্য সবকিছু করতে পারি। ইনসিয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে। নতুন ল্যাপটপ পেয়ে ইনসিয়া অনেক খুশি হয়। সে তার মায়ের সঙ্গে ইন্টারনেটে অনেক কিছু দেখে তারা অনেক মজা করে আর রাতের বেলা ভয়ের ছবি দেখে অনেক ভয় পায়। খুব সুখেই কাটছিলো তাদের দিনকাল। একদিন রাতে সে ইউটিউবে একটা গানের ভিডিও দেখে সেখানে সবাই অনেক সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করেছে। এটা দেখে তার নিজের ও ইউটিউবে গান গাওয়ার ইচ্ছা হয়।
তার স্বপ্ন একজন গায়িকা হবার। সে স্বপ্ন এবার পূরণ হবে তাই সে মাজরাতে ল্যাপটপের ক্যামেরা অন করে গান গাইতে শুরু করে। কিন্তু তখনি তার মনে ভয় জেগে ওঠে তার বাবা যদি কোনদিন তার গানের ভিডিও দেখে ফেলে তখন কি হবে? এরপর সে তার মা কে বলে আমিও ইউটিউবে গান গাইতে চাই কিন্তু বাবা দেখে ফেললে কি হবে? নাজমা বলেন তাহলে স্বপ্ন দেখে লাভ নাই। এরপর মাজমা চলে যান। আর ইনসিয়া মন খারাপ করে থাকে। কিছুক্ষণ পর ইনসিয়ার মা এসে বলেন একটা আইডিয়া আছে। ইনসিয়া বলেন কি আইডিয়া? নাজমা থাকে একটা বোরকা এনে দেন।
ইনসিয়া প্রথমে বোরকা পড়ে গান গাইতে রাজি না হলেও পরে থাকে এটাই করতে হয়। সে বোরকা পড়ে একটা গান গেয়ে সেটার ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করে। চ্যানেলের নাম সিক্রেট সুপারস্টার। ইনসিয়া একটু পরে চ্যাক করে তার ভিডিও তে লাইক কমেন্ট এসেছে কি না? কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায় তার ভিডিও তে কোনো ভিউজ ই আসছে না। দ্বিতীয় পর্বের লিংক