আসসালামুয়ালাইকুম, পাঠকবৃন্দ। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। grathor.com এর পক্ষ থেকে সবার জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজকে কোন অনলাইন আর্নিং কিংবা ইন্টারনেট অফার নিয়ে কথা বলবো না। আজ আপনাদের সাথে একটি প্রেম কাহিনী শেয়ার করব যেটা একদম বাস্তব একটি ঘটনা। আশাকরি আপনাদের সবার ভালো লাগবে এবং মন ছুয়ে যাবে কারণ এটা কোন অপরিপূর্ণ ভালোবাসার কাহিনী নয়। আসলে প্রত্যেকটি ভালোবাসা প্রত্যেকটি প্রেমকাহিনী এরকম হওয়া উচিত যাতে সবাই সাকসেসফুল হতে পারে।
ঘটনাটা শুরু ২০০৫ সালের শেষের দিকে। গল্পের নায়িকার নাম হচ্ছে প্রিয়াঙ্কা এবং নায়কের নাম হচ্ছে সূর্য। প্রিয়াঙ্কা ও সূর্য দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয়। প্রিয়াঙ্কার চাচাতো বোনের মামাতো ভাই হচ্ছে সূর্য।
কোন এক ঈদে সূর্য প্রিয়াঙ্কা দের বাসায় আসে। সেখান থেকে তাদের পরিচয়। তখন কেউ কাউকে ওরকম ভাবে চিনত না এটাই ছিল তাদের ফার্স্ট দেখা। সূর্য ঢাকাতে বিজনেস করতো, তাই তেমন একটা গ্রামে আসা হতোনা। কিন্তু যে বার গ্রামে এসে সূর্য প্রিয়াঙ্কাকে দেখে, তখন থেকে সূর্যের গ্রামে আসার আগ্রহ বেড়ে যায়। কেনো যানি সবসময় প্রিয়াংকার কথা মাথায় ঘুরতে থাকে। প্রিয়াংকা তখন ক্লাস সেভেন এর স্টুডেন্ট ছিল। প্রেম ভালোবাসা কি জিনিস সেটা ও তখনো বুঝত না তবে সূর্যকে দেখার পর প্রিয়াংকার খুব ভালো লাগছে। আর, ভালো লাগবেই না কেনো?? সূর্য ছিলো অনেক স্মার্ট এবং সুদর্শন। প্রথম দেখাতে যেকোনো মেয়ের ভালো লাগবে। প্রিয়াংকার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল। সূর্যও এখন প্রায় প্রতিমাসেই গ্রামে আসতো এবং প্রিয়াংকা দের বাসায় যেত। তারা দুজন একই গ্রামের হওয়া তে তেমন সমস্যা হতো না। তার উপর আবার সূর্য প্রিয়াংকাদের আত্নীয় হতো। তাই কেউ কিছু মনে করতো না। ওদের দুজনের বাসার দুরত্ব ছিলো ১৫-২০ মিনিটের রাস্তা, তাও পায়ে হেটে।
২০০৬ সালে সূর্য প্রিয়াংকা কে প্রেম প্রস্তাব দেয় এবং প্রিয়াংকাও অতো কিছু না ভেবে সম্পর্কে যায়। ২০০৬ ও ২০০৭ ওদের প্রেম ভালোই চলে। কিন্তুু ২০০৮ সালে ওদের সম্পর্ক টা সবার প্রকাশে চলে আসে এবং দুজনের উপরই অনেক চাপ পড়ে। দুই ফ্যামিলির কেউই এ সম্পর্ক মানতে রাজি নয়। এদিকে প্রিয়াংকা তখন ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট ছিল। সামনে তার ssc পরিক্ষা। সব মিলিয়ে ওরা অনেক হতাশার ভিতর চলে যায়। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না। আবার কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারবে না।
তখন ওরা দুজনে সিদ্ধান্ত নিলো, কিছু দিন ওরা চুপচাপ থাকবে। যাতে ব্যাপারটা ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সবাই যেনো ভেবে নেয় ওদের সম্পর্কের ইতি হয়ে গেছে। যেই কথা সেই কাজ।
সূর্যও গ্রামে আসেনা এবং প্রিয়াংকাও স্বাভাবিক ভাবে ওর পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কথা বলতো। বাট অনেক সতর্কতার সাথে। মাঝে মাঝে সূর্য লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য গ্রামে আসতো প্রিয়াংকার সাথে দেখা করার জন্য এবং দেখা করে চলে যেত। এক্ষেত্রে প্রিয়াংকার কাজিন (খালাতো বোন) শান্তা অনেক হেল্প করতো।
২০০৯ প্রিয়াংকা ssc পরিক্ষা দেয় এবং ভালো ফলাফলের মাধ্যমেই উত্তির্ন হয়। কলেজে ভর্তি হয়ে ওরা চুটিয়ে প্রেম করে। তখন সূর্য ঢাকা থেকে কলেজে চলে আসত এবং কয়েক ঘন্টা থেকে আবার চলে যেত। তখনও প্রিয়াংকার কাজিন এবং বন্ধুরা সাহায্য করতো।
কিন্তু একদিন ওরা ফেমিলির কাছে আবার ধরা পরে যায়। আবারও নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। কিন্তু তখন ওরা চুপ করে থাকে নি। দুজনেই লড়াই করছে ফেমিলির বিরুদ্ধে। কারন এতোদিনে ওরা বুঝে গেছিল, কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচবে না এবং একে অন্যের পরিপূরক।
অনেক যুদ্ধের পর অবশেষে ওরাই সফল হয় এবং দুই পরিবার ওদের মানতে বাধ্য হয়। ২০১০ সালেই ওদের এনগেজমেন্ট হয় এবং ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর (১১/১১/১১) আনুষ্ঠানিক ভাবে ওদের বিয়ে হয়। দির্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় প্রেম করার পর ওরা সংসার জিবনে পা রাখে। এখন (২০২০) ওরা অনেক ভালো আছে। ওদের ছয় বছরের একটা ছেলেও আছে।
শেষ কথা,,,,
শুধু ভালোবাসলেই হয় না। ভালোবাসার মানুষ কে আগলে রাখতেও হয়। এটা তখনই পুরোপুরি সম্ভব হয়, যখন দুজনের প্রতি দুজনের বিশ্বাস, ভরসা,সম্মান এবং দুজন দুজনকে পাওয়ার আগ্রহ অটুট থাকে।
আজ এ পর্যন্তই, আবারও চলে আসবো আপনাদের মাঝে নতুন কোনো টপিক নিয়ে। ততোখন সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং ভালো রাখবেন আপনার পরিবেশ কে। মনে রাখবেন করোনা ভাইরাসে আতঙ্ক নয়, সতর্কতাই হচ্ছে বড় সমাধান। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ। 💕