এক গ্রামে থাকতো এক ছেলে। সে ছিল এতিম। তার বাবা-মা কেউই ছিল না। তার বাব-মা কেন, তার সাত-কূলেও কেউ নেই। তাই বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় সে। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসে। সে সবার কথা শুনে। যখন যে কাজ করতে বলে তখন সে সেই কাজ করে। কাজের বিনিময়ে সে তাদের বাড়িতে গিয়ে ভাত খায়। কেউ তাকে ভিক্ষা দিতে চাইলে, সে সেই ভিক্ষা নেয় না। সে আত্মমর্যাদাশীল মানুষ। কারো কাছে সে হাত পেতে কিছু নেয় না। কাজের বিনিময়ে কিছু নেয়। সে ভিক্ষাবৃত্তিকে পছন্দ করে না। গ্রামের কেউ তাকে কোনো কাজ দিলে সে সর্বাত্মকভাবে সেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করে। সে অনেক পরিশ্রমী।
একবার গ্রামে খুব অভাব দেখা দিলো। খাবারের অভাব। ফলে তাকে কেউ আর কাজ দেয় না। কারণ, কাজ দিলে তো তাকে খাবার দিতে হবে। কিন্তু খাবার পাবে কোথায়? তারা তো নিজেরায় খাবার পায় না। অন্যদের আর কি খাবার দিবে। ফলে ছেলেটি কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার পায় নি। তার পেটে তাই অনেক খিদা।
সে ঠিক করলো গ্রামে আর থাকবে না। কারণ, গ্রামে তার জন্য কোনো খাবার নেই। তাই সে অন্যত্র চলে যাবার পরিকল্পনা করলো।
একদিন সে গ্রাম থেকে বেড়িয়ে পড়ল। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ল। একে তো অভুক্ত, তার উপর এতটা পথ তাকে হাঁটতে হয়েছে। তাই সে খুব টায়ার্ড ফীল করলো।
তবুও সে চলতেই লাগলো। চলতে চলতে এক জঙ্গল সে দেখতে পেলো। এই জঙ্গলে সে এক গাছের ছায়ায় বসে পড়ল। হঠাৎ তার উপর থেকে একটা খেজুর পড়ল। কিন্তু এটা তো খেজুর গাছ নয়। তবে কই থেকে এই খেজুরটা এলো? সে বেশী ভাবল না। খেজুর পেয়েছে তাতেই সে খুশি। কোথা থেকে এলো, তা নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই তার।
সে আপন মনে ওই খেজুরটা খেয়ে খিদা কিছুটা নিবারণ করলো। আর ওই গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ল।
সে এমন ঘুম দিলো যে, রাত হয়ে গেছে তবুও তার কোনো হুশ নেই।
হঠাৎ সে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। উঠেই দেখে চারপাশে রাত ঘনিয়ে এসেছে। সে তো জঙ্গলে। আর রাত হওয়ার কারণে, রাস্তা কোনদিকে তা তো বুঝায় যায় না। ফলে রাতে সে কোথাও যেতে পারবে না। কিন্তু, এই জঙ্গলে থাকলে যদি কোনো ভয়ানক প্রাণী তার উপর হামলা করে, তখন সে কি করবে?
তাই সে গাছের ডালে রাত কাটিয়ে দেবার কোথা চিন্তা করে। যেই ভাবনা সেই কাজ। সে গাছের ডালে বসে পড়ল। ডালে বসে দেখে এখানে খেজুর ভরা একটা থলে। এবার সে বুঝতে পারলো খেজুরটা তার কাছে কই থেকে এলো। সে অখান থেকে কিছু খেজুর খেয়ে বাকিগুলো রেখে দিলো।
ওই পথ দিয়ে এক পথিক যাচ্ছিল। সে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। আর সে খুব ক্ষুধার্ত। গাছের নিচে সে বসে পড়ল। আবছা আলোতে ছেলেটি দেখতে পেলো একটা সিংহ ওই লোকের উপর হামলা চালাবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছেলেটি তাকে তাড়াতাড়ি গাছের ডালে উঠে আসতে বলল। আর সে নিজেও তাকে টেনে তুলতে সাহায্য করলো।
লোকটি ক্ষুধার্ত ছিল বলে ছেলেটি তাকে খেজুর খেতে দিলো। আর ওখানেই ঘুমিয়ে পড়তে বলল।
সকাল হলে লোকটি তাকে ধন্যবাদ জানলো। আর তার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলো। ছেলেটি তার কষ্টের কথা তাকে খুলে বলল। লোকটি তাকে তখন তার সাথে শহরে যেতে বলল আর তার সাথেই থাকতে বলল। কারণ, লোকটি শহরে চাকরি করে আর তারও কেউই নেই।
এই কথা শুনে ছেলেটি আনন্দে কেঁদেই দিলো।
১০ বছর পর দেখা গেলো এই ছেলেটিই ওই গ্রামে সবার কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। তার কোম্পানিতে গ্রামের সবাই চাকরি করতে লাগে। সে হয়ে যায় ওই গ্রামের আয়ের মূল!