আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন ভাই/বোনেরা? আল্লাহর রহমতে আমিও ভালো আছি বরাবরের মতো। গত পোস্টে আমি বলেছিলাম, কিভাবে কবুতরের ব্যবসা সফলভাবে শুরু করবেন। আশা করি কয়কজনের মনে ব্যবসাটা করার উদ্দীপনা জেগেছে। আর যাদের এই ব্যবসায় ইচ্ছা নেই, তারা দয়া করে পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকুন। ইনশাআল্লাহ! সেখানে আমি আপনাদের দেখাবো, কিভাবে কবুতরের এই ব্যবসাতেই লাখপতি হওয়া যায়।
সম্প্রতি আমার এক বন্ধুর সহায়তায় তার এলাকার কবুতর খামারীদের সাথে কথা হয়। তারা বলে যে, মার্কেটের ক্রেতা শ্রেণির লোকদের মধ্যে প্রায় চার ধরণের পাবলিক পাওয়া যায়। এক প্রকারের লোক বাজারে আসে কবুতর দেখতে ও মূল্যায়ন করতে, অথচ তারা কবুতর নিবেনা। আরেক প্রকারের লোক আসে কমদামী রানিং কবুতর নিতে। ঘরে পালনের জন্যে। আরেক দল আসে ফ্যান্সি কবুতরের নেশায়। তারা সাধারণত কবুতরের সুস্থতা আর সৌন্দর্য দেখেই কবুতর নিয়ে যায়। কবুতর নিয়ে বেশি খোঁটাখুঁটি করেনা। আর সবশেষে আসে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাবলিক; তারা কবুতরকে জবাই করে জাস্ট ভেতরটা দেখতে পারেনা, আর বাদ বাকি সব চেক করে তারপর কবুতর নিবে কিনা সিদ্ধান্ত নেয়। তারা খুবই মর্মান্তিক। দেখা গেল যে, সারাবেলা কবুতরের খেল দেখলো অথচ কেনার বেলায় মূল্যায়নটাও করলোনা। আরেক ধরণের পাবলিক আছে, তারা আসে শুধু কবুতরের বাচ্চা কিনতে; কবুতর কিনতে না।
এই গেল মার্কেটের অবস্থা। এখন কথা হচ্ছে, ভালো ব্যবসায়ি হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো মার্কেটে দৌড়াতে জানা। যে যত ভালোভাবে মার্কেট ও মার্কেটের অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝে নিতে পেরেছে, সে তত বেশি অভিজ্ঞ। তার ব্যবসা তত বেশি সফল। কেননা সে তার ব্যবসাক্ষেত্রে বাজার ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপগুলো নিতে পারে।
এখানেও একটা প্রশ্ন আছে সবার। সেটা হচ্ছে, আমাদের মধ্যে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক আছি, যারা এরকম মার্কেটে বন্দরে দৌড়াদৌড়িতে পারদর্শী নই এবং লোকলজ্জার কারণে ঠিকমতো কিছুই করতে পারিনা। তাঁদের বলছি, প্রিয় ভাই/বোনেরা.. মনে করুন আপনারা যদি না খেয়ে মারা গেলেন, তাহলে পরেরদিন আপনার বিদেহী আত্মা দেখবে যে একদল পাবলিক আপনাদের মরদেহের ছবি তুলে পত্র-পত্রিকায় হেডলাইন দিচ্ছে, “না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে দেশের লোক।” দেখুন একবার, তারা আপনার মরদেহের ছবি দিয়ে রিপোর্ট বানিয়ে পত্রিকা পরিচালকদের কাছ থেকে টাকা নিবে, অথচ বেঁচে থাকতে আপনার খবর কেউ নেয়নি। অতএব, পাবলিকের লজ্জা করলে আপনি জীবনে কিছু করতে পারবেননা। আর সফলতা তো বহুদূর। তাই লজ্জাগুলো ঢেকে দিয়ে আসুন জেনে নিই কিভাবে কবুতর বাজারজাত করবো…
★ কবুতর বাজারজাত করার ক্ষেত্রে লক্ষ্মণীয় বিষয়:
মানুষের মতো কবুতরও মনকষ্টে ভুগে। তাই, কবুতরকে বেশিদিন একা করে রাখবেননা। কবুতরের চোখের সামনে তার বাচ্চা জবাই করবেননা। এমনকি বাসা/খোপ থেকে বাচ্চা বেরও করবেননা। প্রথমত, বাসায় মা কবুতর না থাকায় অবস্থায় বাচ্চাগুলো বের করে হাতে নিয়ে একটু দূরে সরে আসুন। বাচ্চাগুলোর পা পরিষ্কার করে দিন। তারপর পিঁজরায় ঢুকিয়ে নিন।
দ্বিতীয়ত, বড় কবুতর বাজারজাত করার ক্ষেত্রে কবুতরকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগের রাতে তাদেরকে পিঁজরায় ঢুকিয়ে নিন। বড় কবুতর ধরার একটা বিশেষ নিয়ম হলো, কবুতরের পা গুলো প্রথমে সাঁতাড়ুদের পায়ের মতো করে নিতে হবে এবং পাখাগুলোপায়ের সাথে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর কবুতরের পেটের উপর হাতের তালু বসিয়ে চাকুর মতো করে কবুতরকে ধরতে হবে। তাহলে সহজেই তারা হাত ফসকে চলে যেতে পারবেনা।
১. সাধারণ কবুতর বিক্রির ক্ষেত্রে:
কবুতরের বাজারে সাধারণত হকার মার্কেটের মতো না যে হাঁকাহাঁকি করে লোক ডাকতে হয়। আপনি আপনার কবুতর পিঁজরার ভিতরে রেখে স্থির থাকতে পারেন। তবে হ্যাঁ, বাজারে কবুতর বিক্রি করতে যাওয়ার সময় অবশ্যই পিঁজরার ভিতরে কবুতরের জন্য কিছু খাবার ও পানির ব্যবস্থা রাখবেন। যাতে আপনি লংটাইম বাজারে থাকলেও কবুতরের কষ্ট না হয়। এক্ষেত্রে বাজারে যাওয়ার পূর্বে আপনি ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল কেটে কৌটার মতো অংশটা পিঁজরার ভিতরে ঢুকিয়ে সুতা দিয়ে টাইট করে বেঁধে দিতে পারেন। তাহলে সেখানে পানি রাখতে সুবিধা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনি আগ্রহী কাস্টমারদেরকে কবুতরের বিক্রয়মূল্যের ৫০% বেশি ধরে দিবেন। এরপর তারা মূল্যায়ন করতে করতে যথাযথ দামে উঠলে আপনি কবুতরগুলো তাদের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন।
২. বাচ্চাসহ কবুতরের জোড়া বিক্রির ক্ষেত্রে:
অনেকে বাচ্চাসহ কবুতর বিক্রি করতে বাজারে যান, তাঁদের জন্য উপরের টিপস গুলা যথেষ্ট। তবে একটা জিনিস করলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। যদি আপনি কবুতরগুলোকে পিঁজরার ভিতরে রেখে বাচ্চাগুলোকে পিঁজরার উপরে রাখেন ও মাঝে মাঝে সেগুলোকে ধরে নাড়া দিতে থাকেন, তাহলে খুব দ্রুত লাকি কাস্টমার পেয়ে যেতে পারেন। তারা আসে বাচ্চাসহ কবুতর কিনতে, এতে করে আপনার সময়ও বাঁচবে ভালো অংকের টাকাও হাতে আসবে। খেয়াল রাখবেন, বাচ্চাসহ কবুতর বিক্রির ক্ষেত্রে দাম কিন্তু ডাবল ধরতে হবে। এরপর তারা ধীরে ধীরে মূল্যায়ন করবে। বাচ্চাসহ কবুতর কিনতে আসা লোকেরা যেমনই হোক, তাদের পছন্দ হলে সে কবুতর বেশি দাম দিয়ে হলেও নিয়ে যায়।
৩. শুধু কবুতরের বাচ্চা বিক্রির ক্ষেত্রে :
এক্ষেত্রেও ১নং এর রুল্সগুলো অনুসরণ করলে চলবে। তবে এক্ষেত্রে বাজারে আনা যেসব বাচ্চাগুলো উড়তে শিখেনি, সেগুলোকে পিঁজরার বাহিরে উপরের দিকে প্রদর্শন দেওয়াটাই উত্তম। আর যদি উড়তে জানে, সেগুলো পিঁজরার ভেতরে থাকুক। কবুতরের বাচ্চা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত ফিক্সড দাম ধরে দেওয়া হয় স্থানীয় বাজারগুলোতে। আপনও চাইলে ফিক্সড দাম দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন। ফিক্সড রেট অনেকে দামাদামী করে। সাধারণত ২৫০ টাকার নিচে কোন কবুতরের বাচ্চা বিক্রয় হয়না। তবে বাচ্চার স্বাস্থ্য নিতান্তই খারাপ হলে দাম হয়তো কমতে পারে। তাই কবুতর পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই অবশ্যই কবুতরের খাদ্য তালিকায় চনা/বুটের ডাল নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বাচ্চাও বড়সড় আর রিষ্টপিষ্ট হবে।
সবশেষে একটা কথা বলতে চাই আপনাদের উদ্দেশ্যে। ক্লাস এইটের কর্মমুখী শিক্ষা বইটিতে আমরা বারবার পড়েছিলাম, “বৈধতার তালিকায় আছে, এরকম কোন কাজই ছোট নয়।” কথাটি শতভাগ সত্য। অতএব, এই কথাটা যেন আমার আপনার সবার জীবনে প্রতিফলিত হয়। বাজারে দাঁড়িয়ে কবুতর বিক্রি করবেন, কবুতর কিনবেন, এটাই কবুতর পালকদের জীবনে আনন্দের দ্বিতীয় একটা অংশ। লজ্জার কিছুই নেই। আপনিও জয়েন করুন কবুতর জগতের বিরাট এই ফ্যান্টাসিতে। ধন্যবাদ সবাইকে পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য। কমেনট বক্সে আপনার মতামত, অভিমত ও যেকোন প্রশ্ন থাকলে মুক্তমনে করতে পারেন…