বাংলাদেশে কিশােররা সাধারণত যেসব অপরাধ করে তার মধ্যে রয়েছে চুরি, পকেটমার, বিনা
টিকিটে রেলভ্রমণ; মানুষ, দোকানপাট, বাড়িঘর ও যানবাহনের উপর হামলা, ভাঙচুর,
অগ্নিসংযােগ ও অন্যান্য নাশকতামূলক কাজ এবং মেয়েদের উত্যক্ত করা প্রভৃতি। এছাড়াও কিশাের
অপরাধীরা অনেক সময় দলবেঁধে ডাকাতি এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাদা আদায়
করে থাকে। কখনাে কখনাে তারা খুন পর্যন্ত করে। যে পরিবারে এ রকম কিশাের অপরাধী আছে
তাদের পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট হয়। কখনাে কখনাে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চল সর্বত্র কিশাের
অপরাধীদের দ্বারা মেয়েদের উত্যক্ত করার ঘটনা ঘটে। তারা মেয়েদের প্রতি অশ্লীল ও অশােভন
উক্তি করে। এদের কারণে মেয়েরা নিরাপদে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় যাতায়াত করতে পারে
। বখাটে কিশােরদের অন্যায় প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তারা মেয়েদের অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন
বা তাদের উপর এসিড নিক্ষেপ করে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় অভিভাবকরাও তাদের
আক্রমণের শিকার হয়। এসব বখাটের উৎপাতে কখনাে কখনাে ছাত্রীদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
কিশাের অপরাধীরা অনেক সময় মাদকাসক্তি ও অন্যান্য খারাপ অভ্যাসের সঙ্গে জড়িত থাকে।
প্রতিরােধের উপায়।
বাংলাদেশে কিশাের অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ সমস্যার প্রতিরােধে নিম্নোক্ত
পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়ােজন :
অভিভাবক সচেতনতা ও দায়িত্ব।
কিশােরদের অপরাধ প্রবণতার ধরন, তার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে পিতামাতা ও পরিবারের
বয়ােজ্যেষ্ঠরা যদি সচেতন থাকেন তবে তারা সহজেই কিশােরদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে বা
সে পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারবেন। এজন্য পরিবারে সন্তানদের সুস্থ মানসিক বিকাশের উপযুক্ত।
পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের চলাফেরার উপর নজর রাখতে হবে। তাদের বন্ধু ও সাথিদের।
সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে সহজ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।।
আর্থ-সামাজিক কর্মসুচি।
কিশােরদের অপরাধ প্রবণতার একটি প্রধান কারণ পরিবারের দারিদ্র্য। সেজন্য অভিভাবকদের
জন্য কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি ও পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার
এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষার সুযােগ।
সকল শিশু-কিশােরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। এতে তারা একদিকে শিক্ষার
প্রভাবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে আগ্রহী হবে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ তাদেরকে
অপরাধ থেকে দূরে রাখবে।
চিত্তবিনােদন
শিশু-কিশােরদের মানসিক বিকাশের জন্য পাড়া ও মহল্লায় পাঠাগার, ব্যায়ামাগার প্রভৃতি স্থাপন করা
প্রয়ােজন। এছাড়া বিদ্যালয়, মাদরাসা ও আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠ থাকতে হবে।
উল্লিখিত কার্যক্রম ছাড়াও শিশু-কিশােরদের সব রকম খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে।
এজন্য টেলিভিশনে ও অন্যান্য মাধ্যমে তাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যমূলক এবং সুস্থ।
আনন্দদায়ক দেশি ও বিদেশি ছায়াছবি দেখানাের ব্যবস্থা করতে হবে। অশােভন ছবি প্রদর্শন এবং
প্রকাশনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। শিশু-কিশােররা যেন
খারাপ সংস্পর্শে না পড়ে সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি
অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
।
মাদকাসক্তি ধারণা ও কারণ:
মাদকাসক্ত-সঙ্গীদের সাথে মেলামেশার মধ্য দিয়েই প্রধানত মাদকাসক্তির সূত্রপাত ঘটে। মাদকের
ক্ষতিকর দিকগুলাে সম্পর্কে না জেনেই, কেবল সাময়িক উত্তেজনা লাভের জন্য ও বন্ধুদের
প্ররােচনায় কিশাের-কিশােরীরা মাদকদ্রব্য সেবন করে। পরে তা তাদের মরণনেশায় পরিণত
হয়। কিশােরমন স্বভাবতই কৌতূহলপ্রবণ। ফলে শুধুমাত্র কৌতূহলের বশেও অনেকে মাদক গ্রহণ
করা শুরু করে। পিতা বা বাড়ির অন্য বয়স্কদের পকেট থেকে বিড়ি-সিগারেট চুরি করে শিশু-কিশােররা
অনেক সময় তাদের কৌতুহল মিটায়। এই কৌতূহল থেকে একসময় তাদের ধূমপানের অভ্যাস গড়ে উঠে।
এই ধূমপান থেকেই তারা পরে অন্যান্য নেশাদ্রব্য যেমন-গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরােইন, ইয়াবা প্রভৃতিতে
আসক্ত হয়ে পড়ে। বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, প্রিয়জনের মৃত্যু, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক অশান্ধি ইত্যাদি কারণে
অনেকের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। আর এই হতাশা থেকে মুক্তি লাভের আশায় প্রথমে বন্ধুবান্ধবের।
পরামর্শে বা তাদের দেখাদেখি অনেকে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে শুরু করে। পরে এটা তাদের
নেশায় পরিণত হয়। পিতামাতার স্নেহ ও মনোেযােগ থেকে বঞ্চিত হয়ে কিংবা পারিবারিক অশান্তি
ও ঝগড়াবিবাদ থেকেও অনেক সময় শিশু-কিশােরদের মনে হতাশা জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে তারা।
মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে।
অপসংস্কৃতির প্রভাবও মাদকাসক্তির পিছনে একটি বড় কারণ হিসাবে কাজ করে। চলচ্চিত্র, টিভি।
চ্যানেল, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে আজকাল এক দেশের সংস্কৃতি সহজেই অন্য দেশের সংস্কৃতি।
ও জনজীবনকে প্রভাবিত করছে। দুই ভিন্ন সংস্কৃতির টানাপােড়নে পড়েও যুব সমাজের একটা অংশ
বিভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মাদকে আকৃষ্ট হচ্ছে।