রাত আনুমানিক তিনটা হবে।হঠাৎ টুংটাং শব্দে সজলের ঘুম ভেঙ্গে গেল।পাশে শেয়া ছিল আবীর।কিন্তু এত রাতে ও গেল কোথায়।আবার কিসের যেন শব্দও হচ্ছে।সজল আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে ওঠল।বারান্দায় উকি মেরে দেখল কেউ নেই।আবীর গেল কোথায় তাহলে।হঠাৎ খেয়াল হল রান্না ঘরের বাতি জ্বলছে।সেখানে গিয়ে সজল দেখল আবীর দাড়ি,গোফ কামাচ্ছে।তাও আবার সজলের ক্রিম,ব্রাশ আর রেজার দিয়ে।সজল জিগেস করল কিরে আবীর এত রাতে কি কেউ এই সব করে।উওরে আবীর বলল, সকালে আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে।তাই সকালে সময় হবে না ভেবে এখন দাড়ি গোফ কামাচ্ছি।
আবীর খুব গরীব ফ্যামিলির ছেলে।বাবা মা নেই।নানীর কাছে বড় হয়েছে।অতি যতনে আবীরকে আগলে রেখেছে ওর নানী।কিন্ত বুড়ি কি করবে গরীব মানুষ।আবীরের জন্য টাকা পাঠাতে পারে না ঠিক মত।আবীর সামান্য একটা টিউশনি করে আর মাঝে মাঝে সজলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে।
কাল সকালে তুই কোথায় যাবি। আবীর বলল ,কাওরান বাজারে যাব।নানী আমার জন্য কিছু টাকা পাঠাইছে এক লোকের কাছে তা আনতে যাব।উনি মাছ ব্যবসায়ী।সকাল সকাল না গেলে উনি আবার চলে যাবে মাছ বিক্রি করে। ঠিক আছে কিন্তু রাতে উঠে এত গরজ করে দাড়ি গোফ কামাতে হবে কেন।নিশ্চয়ই অন্য কোন ব্যাপার আছে,বলল সজল।হা দশটায় একটা চাকুরীর ভাইবা আছে। ভাইবা নিয়েই সরাসরি নিয়োগ।দেখি চেষ্টা করে কিছু একটা হয় কিনা।
দশটা বাজার আগেই আবীর মতিঝিল ঐ অফিসের ঠিকানায় গিয়ে হাজির।চারতলায় ভাইবা হবে।সেখানে অনেকেই এসেছে। আবীর অপেক্ষা করছে কখন ওর ডাক পরে এই আশায়।কিছুখন পর আবীরের ডাক পড়ল।ভিতরে ডুকে দেখল ভাইবা নেয়ার জন্য একজন পুুরুষ ও একজন মহিলা বসা।পুরুষ লোকটি বলল আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করব উওর দিতে পারলে আপনার চাকুরি হবে।বেতন পাবেন ১২০০০ টাকা।থাকা -খাওয়া ফ্রি।
আবীর বলল, ঠিক আছে।পুরুষ লোকটি বলল,কোন প্রাণী প্রভাতে চার পায়ে,অপরাহ্নে দুই পায়ে,আর মধ্যাহ্নে তিন পায়ে হাটে।আবীর একটু চিন্তা করে উত্তর দিল,মানুষ। কিভাবে বুঝিয়ে বলুন,পুরুষ লোকটি বলল।মানুষ শিশুকালে হামাগুড়ি দিয়ে হাটে মানে চার পায়ে ।হাত দুটোকে সে হাটার কাজে ব্যবহার করে।যৌবন কালে দুই পায়ে আর বৃদ্ধ কালে লাঠিসহ তিন পায়ে হাটে।উওর শুনে আবীর কে বাহবা জানিয়ে বলল,গুড। আপনি পেরেছেন আপনার চাকুরি হয়ে গেল।তবে আপনার কাজ কি আগে শুনুন।আমাদের চেয়ারম্যান ম্যাড্যারে মেয়ে লেখালেখি করার ইচ্ছা। কিন্তু সে অন্ধ তাই আপনার কাজ হল ম্যাডামের মেয়ে যা বলবে তা লিখবেন ও পড়ে শোনাবেন।
আবীর রাজি হয়ে গেল।আর কোন উপায় নেই আবীরের কাছে।এখন যে কাজ পাবে তা ই সে করবে।আর একজনের থেকে চেয়ে চেয়ে কত দিন আর চলা যায়।তাছাড়া থাকা খাওয়ার পরও ১২০০০ টাকা কম কিসের।