হৈমন্তি খুবই বিরক্ত আজকে!
বিরক্তের সংজ্ঞাটা তার কাছে এরকম যে – নিজেই কোন ব্যাপার নিয়ে ভাববে এবং যখন সেটার কোন কূল-কিনারা খুজে পাবেনা সে তখন সে নিজের উপর আরো রেগে যাবে। মানে বিরক্ত হওয়া তার কাছে অনেকটা নিজের সাথে যুদ্ধ, কারো উপর সে এই রাগ ঢালতে রাজি নয়।
সাদিককে হৈমন্তি গতকাল ফোনে বলেছে আজকে ছাদে আসার জন্য। এর আগে যতবারই ছাদে দেখা করার কথা ছিল ততবারই শেষ পরিণতি ছিল আগের ঝগড়ার মীমাংসা।তবে আজ হয়েছে তার বিপরীত।
সাদিক খুবই ঠান্ডা মেজাজের ছেলে। অথচ সকালে সাদিকই তাকে ফোন দিয়ে আর যাতে হৈমন্তি তার সাথে যোগাযোগ না করে
সেটা বলে ফোন কেটে দেয়।
কি করেছে এমন হৈমন্তি! উত্তর অজানা, এ নিয়েই সে বিরক্ত।
ছাদে আসার আগে প্রত্যেকটা বার সাদিক দেরি করে, এ আর নতুন কি? এখন আর দেরি করা, বাহানা দিয়ে না আসা এসব ছোট খাটো ভুল হৈমন্তির মাথায় আসতেছে না। শুধু সে এটাই ভাবতেছে যে, যাকে সে ৪ বছর ধরে দেখে আসছে তার এই নতুন ব্যবহার কেন?? হয়ত সামনাসামনি কথা বললে বোঝা যাবে।
হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো!
– “হ্যালো! তুমি আসতেছো না কেন? আমি কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
সবসময়ই তো দেরি করো, তুমি কি কখনোই সুধরাবা না? মানুষের সহ্যের তো সীমা থাকে একটা নাকি? আর তুমি আমার সাথে সেদিন কি ব্যবহার করলা বলোতো??”
– “শোনো! সকল মানুষই সহ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সহ্যের বাইরে যখনই মানুষ যায় হয় সে ধীরে ধীরে মহামানবের দিকে যেতে নেয়, নয়ত বানরের পথে হাটা শুরু করে৷ আমি বানর কিংবা মহামানব কোনটাই হতে চাইনা, তবে একই সাথে সহ্যের মধ্যে থাকাটাও অনেক ধৈর্য্যের ব্যাপার”
– “কিসব বলছো তুমি সাদিক? মাথাটা গেছে তোমার? “
-“সেটা তোমার জানার দরকার নেই। তুমি বরং
চিলেকোঠার পাশে যাও হাটতে হাটতে।
– এখানে কেন? আচ্ছা যাচ্ছি!
– ওখানে একটা ইটের নিচে একটা কাগজ আছে। কাগজটা পড়। পড়ার পর হয়তো কেন? কিভাবে? কি? এসব আর জিজ্ঞাসা করতে হবে না আমাকে। ভাল থেকো!
– ভাজ করা কাগজটা খুললো হৈমন্তি
সেখানে লেখা-
” তোমাতে যাহা ছিল জমা মোর
পারিলে কহিতাম ফিরাইয়া দাও
কিইবা করিবা উহা রাখিয়া
নিছক কেন মায়া বাড়াও?
জানিয়া রাখিও যত না তুমি
তোমাতে নিজেকে খুজিয়া বেড়াও
তত বেশি জানে এই অন্ধ বধির
কেন তুমি এত অসীমে হারাও! “
( ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল, কাগজটা উড়ে চলে যাচ্ছে, চোখের পাতা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে হৈমন্তির। শুধু একটা কথাই বের হলো মুখ দিয়ে)
– আমার আর অসীমের ব্যাপারটা তাহলে ও শুরু থেকেই……..