আজকের পোস্টে আমরা লেন্স নিতে কথা বলতে যাচ্ছি। চোখে লেন্স লাগালে কি ক্ষতি হয়, লেন্স কেন পড়ে, লেন্স ব্যবহার করার নিয়ম, কারা লেন্স পড়তে পারবে, লেন্স পড়ার উপকারিতা ও লেন্স পড়ার সমস্যা ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে এ পোস্টে কথা বলা হবে।
কন্টাক্ট লেন্স কেন পড়ে?
কন্টাক্ট লেন্স পড়ার সাধারণত ওরকম বেশি একটা কারণ নেই। কন্টাক্ট লেন্স মূলত পড়া হয় সৌন্দর্য ও সৌখিনতার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে চোখের সমস্যার জন্যও চশমার বিকল্প হিসেবে এই কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়। এটিকে এক ধরণের ‘মেডিকেল ডিভাইস’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কন্টাক্ট লেন্স কালো, বাদামি, নীল, সবুজ ইত্যাদি কম বেশি প্রায় সব রংয়েরই হয়ে থাকে।
চোখে লেন্স লাগালে কি ক্ষতি হয়
হ্যাঁ। চোখে লেন্স পড়লে নানা ধরণের ক্ষতি হতে পারে। তাই এই লেন্স পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। লেন্সের ফলে যেসকল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে তা সেই লেন্সের জন্য হয় না, মূলত ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে হয়। চোখে লেন্স পড়ার ফলে মানুষজন সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হয় সেটি হচ্ছে চোখে ইনফেকশন বা সংক্রমণ। চোখের ইনফেকশনের সমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্করটি হলো কেরাটিটিস।
এটি ব্যাকটেরিয়া ও নানা ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আর এই রোগ বা যেকোনো ধরণের চোখের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হলো। বিশষজ্ঞ বা চিকিৎসকের উপদেশ বা যা বলেছে তা মেনে না চলা। যেমন বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই লেন্স পডার আগে ও লেন্স খোলার আগে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে বলে যাতে করে হাতে কোনো জীবাণু না থাকে ফলশ্রুতিতে চোখে সংক্রামক রোগ হওয়ার সুযোগ কমে যাবে।
কিন্তু এক গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে বেশিরভাগ মানুষই চোখের লেন্স পড়ার আগে ও লেন্স খোলার আগে হাত ধোয় না যার ফলে চোখে ইনফেকশন হওয়ার সুযোগ থাকে। কেউ লেন্স পড়ে ঘুমালে তার চোখের কর্ণিয়ার সংক্রমণের সুযোগ ২০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। লেন্স পড়ে ঘুমালে কর্ণিয়ায় অক্সিজেন সংকট ঘটতে পারে। এছাড়া একটি লেন্স সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে কতটুকু বা কয় দিন বা কয় ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেয়।
সেই উপদেশ না চললেও চোখে সমস্যা হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা যে অনেক মানুষই আছে যারা লেন্সের মাসিক ব্যবহার করার সীমার দুইগুণ পর্যন্ত ব্যবহার করে। যার চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং স্বল্প মেয়াদের যেসকল লেন্স থাকে মানুষজন সেসকল লেন্সের সময়সীমার দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত ব্যবহার করে। অনেক লেন্সেরই মেয়াদ থাকে। তো মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ওই লেন্স নিজেই নিজেই দূষিত হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই বুঝেশুনে সময়সীমা মেনে লেন্স ব্যবহার করবেন।
চোখের লেন্স লাগানোর উপকারিতা
কন্টাক্ট যেমন অনেক ক্ষতিকর দিক আছে ঠিক তেমনি অনেক উপকারিতাও আছে। আমি আগেও বলেছি একটি লেন্স হলো মূলত এক ধরণের মেডিকেল ডিভাইস তো স্বাভাবিক যে এটির চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
লেন্সকে চশমার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। যাদের চোখের পাওয়ার কম তারা পাওয়ার সমৃদ্ধ চশমা না পড়ে পাওয়ার ওয়ালা লেন্স পড়তে পারেন।
প্লাস, মাইনাস উভয় ধরণেরই লেন্স পাওয়া যায়। অনেকে জন্ম থেকেই আলোর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল হয় অর্থাৎ তিনি কোনো আলো বা আলোর উৎসের দিকে তাকাতে পারে না বা তাকালেও কষ্ট হয় কিংবা চোখে ব্যথা করে। তারা চোখে লেন্স পড়তে পারেন। এতে চোখ সরাসরি আলোর সংস্পর্শে আসবে না এবং কোনো কষ্ট হবে না। অনেকে মণির উপরে থাকা দাগকে লুকানোর জন্য লেন্স ব্যবহার করতে পারবে।
চোখে যাদের ঘা ছিল এবং বারবার চোখ খোলা ও বন্ধের ফলে চোখের ঘা গুরুতর হচ্ছে এবং চোখে সমস্যা হচ্ছে তারা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য লেন্স পড়তে পারেন। চোখে চুন পড়ে বিভিন্ন রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও লেন্স পড়া যেতে পারে। মনে রাখবেন চিকিৎসা বা চোখের কোনো সমস্যার হাত দিয়ে বাঁচার জন্য যদি আপনি লেন্স ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই কোনো ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। কোনো সাধারণ মানুষ যাদের চোখ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কোনো ধারণা নেই এমন কোনো কারো পরামর্শে কিংবা কৌতুহল বশে ব্যবহার করা যাবে না।
চোখের লেন্স ব্যবহার করার নিয়ম
চোখের লেন্স কিনুন। লেন্স ব্যবহার বা পরিধানের আগে ও লেন্স খোলার আগে হাত ধুয়ে নিন। লেন্স লাগানোর সময় বেশি চাপ দিবেন বা আচঁড় দিবেন না। সময়সীমা মেনে লেন্স ব্যবহার করুন। সাধারণত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বেশি লেন্স পড়বেন না আর ঘুমের সময় কখনোই লেন্স পড়ে ঘুমাবেন না। লেন্স পড়া অবস্থায় চোখ বেশি ঘষবেন না। লেন্স সলিউশন বা নির্দিষ্ট তরলের মধ্যে যথাসময় ডুবিয়ে রাখবেন। এছাড়া বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে আরও কিছু নিয়ম পেলে তাও মেনে চলুন।
কারা চোখের লেন্স ব্যবহার করতে পারবে?
আপনার চোখে সমস্যা হোক কিংবা চোককে আকর্ষণীয় করে তুলতে চান না কেন, আপনি লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো ব্যক্তিই এই লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন না। যেমনঃ যাদের চোখে এলার্জি আছে, যারা ইনসুলিন গ্রহণ করে, যারা মানসিক ভারসম্যহীন, যদি আপনার লেন্স পড়লে চোখ লাল হয়ে যায় কিংবা অস্বস্তি বোধ হয় সেক্ষেত্রেও ডাক্তারকে জানাতে হবে।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।