আজকে নতুন পর্ব । আজকের আলোচনার বিষয় হিংসাত্মক পৃথিবী এবং তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমাদের সহমর্মিতা।আজকের পৃথিবীতে আই পর এন্ড আই চোখের বদলে চোখ উপড়ে নেওয়ার হিংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছে।কোন একটা দিন আসবে যেদিন আমরা একে অন্যের চোখের বদলে চোখ প্রতিহিংসাবশত উপড়াতে শুরু করি তাহলে গোটা বিশ্বটাই একদিন অন্ধ হয়ে যাবে। আর এই শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত হতে পারছি না বলে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সেই সহানুভূতির শিক্ষা দিতে পারছি না। আমরা পারছি না মানুষকে আনন্দ শিক্ষা দিতে ,ভালোবাসার শিক্ষা দিতে। আসলে মানুষের মনের মধ্যে আনন্দ তাই বড় কথা। মানুষের মধ্যে কেন এত পরিমান হিংসা বাড়ছে?
তার কারণ আমাদের মনের মধ্যে আনন্দ কমছে, ভালোবাসা পরিমাণটা কমে যাচ্ছে। আর আনন্দ কমছে বলে আমরা এতটাই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছি যা আমরা অনেক সময় খুন খারাপের এর মধ্য দিয়ে সেই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমরা একে অন্যের গায়ে হাত তুলছি।অর্থাৎ আমরা আনন্দ তাই পেতে ভুলে গেছি। ভুলে গেছি জীবনের কিছু ছোট ছোট ঘটনার মধ্যেও বিরাট বড় বড় আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব।
তো বন্ধুরা, আসুন আজকে ক্ষুদ্র লেখাতে আমরা আলোচনা করি জীবনের সমস্ত ছোট ছোট আনন্দের অনুভূতিকে নিয়ে।দেখুন ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই একমুখী হয়ে ছুটছি। ধনীরা চাইছে আরো ধনী হতে ভবিষ্যতের জন্য। আর মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার চাইছে আরো সচ্ছল হতে।আর আমরা পারছিনা বলে আমরা দুশ্চিন্তা আর হতাশার মাঝে দিন কাটাচ্ছি। জীবনটাকে অর্থহীন করে তুলছি। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে জীবনের বড় বড় অর্থমূল্য অংকের প্রাপ্তিগুলো শুধুমাত্র প্রাপ্তি নয়। ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া গুলোই জীবনের অনেক বড় আনন্দের কারন হয়ে দাঁড়ায়।একটি কবিতা আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের,
“বহু দিন ধরে,বহু দেশ ঘুরে, বহু ব্যয় করে, বহু ক্রোশ দূরে,
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু,
দেখা হয় নাই শুধু চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।
এখানে কিন্তু কবিগুরু আসল কথাটি বলে দিয়েছেন। যে আমরা এভারেস্টের সৌন্দর্য দেখতে গেলে ভাবি এখানেই বুঝি একমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। কিন্তু আপনার বাড়ির পাশে জানালা খুলে সকাল বেলা, যে লাল একটি গোলাপ ফুল ঝিকঝিক করে ফুটে রয়েছে, সকালবেলায় মৃদু বাতাসে যে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে,সে সৌন্দর্য আপনি কখনো অনুভব করতে পারেন নি।
চেষ্টা করুন এসব ছোট ছোট চেনা জানা জগৎ থেকে আনন্দকে খুঁজে পেতে।আমরা বড় বড় দামি গাড়ি, দামি বাড়ি অনেক অনেক টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে আমাদের এই ছোট ছোট আনন্দ গুলো আমরা প্রায়ই ভুলে গেছি।আমরা অনেক দামি গাড়ি, বাড়ি, টাকা,ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এগুলো আমাদের জীবনের একমাত্র মূখ্য বলে ভেবে নিয়েছি। এগুলো জীবনের মূখ্য হলেও লক্ষ্য কিন্তু একদম আলাদা। সেটা হচ্ছে ভালো থাকা। কারণ জীবন হচ্ছে আনন্দ উৎসব এর আরেক নাম। ভালো থাকার আরেক নাম জীবন।
আরো বাস্তব সত্য হচ্ছে ভালো থাকাটাই জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম একটি কাজ। কিন্তু খুব সহজেই সেটা সম্ভব কিভাবে ?
ধরুন,প্রথমত আপনি প্রকৃতির সাথে দিন কাটালেন।ছোটবেলায় আমাদের মোবাইল ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না, সারাক্ষণ ফেসবুকে বসে অযথা সময় কাটানোর ব্যবস্থা ছিল না, খেলার আঙ্গিনায় বলতে মোবাইলের স্ক্রিন ছিলোনা, কম্পিউটারের গেম ছিল না।
আসুন না, না হয় বাচ্চাদের মত আমরাও আরো একবার বৃষ্টিতে ভিজি, টাই কোট খুলে পেন্টা গুটিয়ে কোন একটা কাঁদা মাঠে ধুম করে অফিসের সব বন্ধু-বান্ধব কিংবা ছেলেবেলায় স্কুল বন্ধুদের সাথে একবার খেলতে নেমে পড়ি।না হয় একটু পাঁয়ে আঘাত পাবে, না হয় একটু শরীরটা ব্যথা হবে।কিংবা ছোটবেলার মতো আর একবার বেরিয়ে পড়ুন না প্রজাপতি ধরতে,কিংবা ঘাসফড়িং কে কচু পাতার রস খাওয়াতে!দামি দামি ডিএসএলআর নাই বা থাক অন্তত হাতে মোবাইলটা তো আছে। সাথে একটা সুন্দর ক্যামেরা তো আছে, এই মুহূর্তে প্রায় সবার ফোনে। সেই ক্যামেরাটাকে সঙ্গী করে ফটোগ্রাফি হারিয়ে ফেলার চর্চাটা না হয় আরেকবার শুরু করলে, কাজের চাপে, সংসারের ব্যস্ততায় বাগান বানানোর যে শখ ছিলো সেটাই ভুলেই গেছিলে সেটাকে আরেকবার জাগিয়ে তুলি। আর কাউকে না হোক অন্তত নিজেকে নিজেই তাক লাগিয়ে দিন না!
নিজের হাতে লাগানো একটা গাছে প্রথম ফুল আসা বা প্রথম ফল আসার যে আনন্দ সেটা একটা বিশ্বকাপ ট্রফি অর্জন করার আনন্দের চাইতে অনেকাংশেই কমে নয়।গুন গুন করে গান গেয়ে উঠুন না, আপনার জন্য সকালবেলায় মর্নিং ওয়ার্ক করতে করতে কারণ প্রকৃতি এমন একটা বিষয়, প্রকৃতি এমন একটা জিনিস যে আপনার মধ্যে আপনাকে হারিয়ে ফেলতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। এমন একটা বিষয় যার সাথে যদি আপনি মিশতে পারেন সে আপনাকে আগামী দিন থেকে নিজেই নিজেকে মিশিয়ে নেবেন আপনার মধ্যে।
দ্বিতীয়তঃ বলব যে অবশ্যই পরিবারের সাথে সময় কাটান। আমরা ভুলে গেছি যে আমরা শুধুমাত্র শুক্রবারের জন্য বাঁচি না আমরা প্রত্যেকটা দিনের জন্য প্রতিটা দিন বাঁচি।শুক্রবার দিনটা বা ছুটির দিনটা অন্যান্য দিনের মতোই কাটান না। একটু পরে ঘুম থেকে উঠুন গল্প করুন পরিবারের সাথে, সময় দিন পরিবারকে, সারাদিন কাজের ব্যস্ততার মধ্যে ভুলে গেছেন যে আপনার জীবনটা অফিসেই লাল সুতোই গিত্তু বাধা কিংবা বিরাট বড় বড় মোটা ফাইলের তলায় চাপা পড়ে যাওয়ার জন্য নয়।আপনি হয়তো ভুলে গেছেন বিনোদন মানে শুধু অফিস পার্টিতে হুইস্কি খাবার নয়।বিনোদন হতে পারে বুড়ো বয়সে সেই ছোট বাচ্চাদের সাথে আড্ডা দিতে, লুকোচুরি খেলতে কিংবা পরিবারের সমস্ত লোকজনের সাথে খুব ছোট ছোট স্থানে যেখানে হেঁটে হেঁটে আড্ডা দেয়া যায় এমন কোন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে। ভাববেন আপনার একটু খোঁজ খবর নেওয়া যেমন তাদেরকে আনন্দ দেবে তেমনি পাল্টা যে আনন্দ আপনি পাবেন সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।সেটার দাম কোটি টাকার চেয়েও বেশি। তাই সময় কাটান পরিবারের সাথে।
আর নিজেকে নিজেই প্রাধান্য দিন। আপনি ভুলে গেছেন আপনি সবার জন্য বেঁচেছেন এখন আপনার জন্য কটা দিন বাঁচেন, অল্প কিছু মুহূর্তের জন্য বাঁচেন। হয়তো আপনি খুব ভালো গান করতেন কাজের জন্য কিংবা পরিবারের ব্যস্ততায় খুব শখ করে কেনা হারমোনিয়াম এখন ধূলোয় ভর্তি। একদিন আসুন না ধুলো ঝেড়ে সবাই মিলে সেই পুরনো গানের একটা চর্চা করি সবাইকে একটুখানি চমকে দিন, তাক লাগিয়ে দিন। হয়তো দেখবেন আপনার সেই পুরনো গাওয়া সুন্দর গলার কন্ঠটা আজও খারাপ হয়নি, শুধু আপনি জানতেন না এতদিন পরেও আপনার গলার কন্ঠটা আগের মতন রয়ে গেছে। শুধুই আপনি জানতেন না যে এতদিন গান না গেয়ে ও গানের সমস্ত রিলিক্স আপনি এখনো ভুলে যান নি। তখন যে আনন্দ আপনি পাবেন সেই আনন্দটা হয়তো জীবনে কোনদিন পাননি।
হয়তো আপনি খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন ছবি আঁকার প্রচুর শখ ছিলো আপনার। কিন্তু মাধ্যমিক স্কুলের জীববিজ্ঞান ক্লাসে সেটা শেষ হয়ে গেছে। আবার হঠাৎ করে দুম করে কাউকে না জানিয়ে ক্যানভাসে একে ফেলুন না আপনার কোন প্রিয় পুরুষ বা প্রিয় কোনো নারীর ছবি। কেউ জানুক বা না জানুক কিন্তু আপনি তো জানেন,এর আনন্দ শুধু আমার একার।
কিংবা ধরুন আপনি খুব ভালো রান্না করতে পারেন। সারাদিন এত কাজে ব্যস্ত থাকেন যে রান্না ঘরের কাছে যেতেই সময় পান না। একদিন ছুটির দিনে সময় পেলে নিজের হাতে পরিবারের কে রান্না করে খাওয়ান একটা দিনের জন্য, অন্তত একটা দিন আপনার জন্য রাখুননা যেখানে ১টি ঘন্টা কিংবা ২টা ঘন্টা একটা বদ্ধ ঘরে কাটাবেন আপনার মুখোমুখি বসে ভাল মন্দ, সুখ দুঃখ, হাসি কান্না।
আর ভেতরে অন্তর থেকে যে কোন দুঃখ সেগুলো সবার সাথে ভাগ করতে যাবেন না কারণ ওগুলো এক একটা হিডেন ট্রেজার। সেগুলো গুপ্তধন এর মত। সেগুলো একা একা উপভোগ করুন। দুঃখ বিলাসও একজাতীয় আনন্দ।
আপনারা সবাই আনন্দে থাকুন, ভালো থাকুন। আপনারা আনন্দ থাকলে আমি আনন্দে থাকবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না কেউ মনের দুঃখ নিয়ে আমার এই লেখা পড়ুক। আগামীকাল হয়তো আবার ফিরে আসবো এমন নতুন এপিসোড নিয়ে। যাতে আমাদের দর্শকদের ভাল লাগে আমাদের দর্শক বন্ধুরা অনুপ্রেরণা পায়। লাইক ,কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন যদি আমার এই কথা গুলো ভালো লেগে থাকে। সবাইকে দেখতে বলুন। কিভাবে আমরা একসাথে একটা আনন্দ পৃথিবী একটা আনন্দ বাজার তৈরি করতে পারি সেই চেষ্টাতেই Life guide-জীবনচর্চার ক্ষুদ্র প্রয়াস। সবাইকে শুভকামনা।