মানুষ মহান আল্লাহতালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই মানুষকে খুবই অল্প সময়ের জন্য আল্লাহতালা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যখন আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে তখন এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। এই পৃথিবীতে মানুষ যতদিন থাকবে ততদিনে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে রিজিক দিয়ে যাবেন। রিজিক মানে শুধু খাদ্য সামগ্রী কে বোঝায় না বরং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ কে বোঝায়।
কোন ব্যক্তির যতদিন না মৃত্যু আসবে ততদিন পর্যন্ত আল্লাহতালা তার জন্য রিযিক বরাদ্দ রেখেছেন। আজ মানুষ রিজিকের জন্য কতই না চিন্তা ভাবনা করে, কতই না পেরেশানী গ্রস্থ হয়। কিন্তু মানুষ চিন্তা করে না যে রিজিক বান্দার জন্য পূর্ব নির্ধারিত। স্বয়ং মহান আল্লাহ সকল মুমিন কে বৈধ উপায়ে রিজিক তালাস করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই রিজিক উপার্জনের জন্যই মানুষ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজেকে নিযুক্ত করে।এ জন্য অনেক সময় সে স্বীয় কর্মকে ধর্মের মতো প্রতিপালন করে। এই অভ্যাস অবশ্যই ভালো, তবে রিজিক উপার্জনের জন্য স্বীয় ধর্মকে বলি দেওয়া যাবে না।
অনেক সময় লোভের বশবর্তী হয়ে, নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ পন্থায় আমরা রিযিক উপার্জন করে থাকি। অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে জীবনে কখনো বরকত প্রত্যাশা করা যায় না। জীবনে বরকত পেতে হলে বৈধ পন্থায় উপার্জন করতে হবে। অনেকে বলে আমিতো অনেক ইনকাম করি, এত উপার্জন করি কিন্তু আমার জীবনে বরকত নাই।
কেন???
যাদের জীবনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাদের একটু ভেবে দেখা উচিত তার উপার্জিত অর্থের মধ্যে কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে কিনা। জীবন থেকে বরকত উঠে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো-
- অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করা।
- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনীত বিধান মালার উপর অনাস্থা প্রকাশ করা।
- পাপ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
- সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ছেড়ে দেওয়া।
- নিজের অধীনস্থ পরিবার-পরিজনের প্রতি সকল দায় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করা।
- অর্থ অপচয়কারী বিভিন্ন ধরনের বদ অভ্যাস।
- অর্থ সম্পদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়া
- অত্যধিক মাত্রায় লোভ-লালসায় লিপ্ত হওয়া
- মা বাবার হক পূর্ণ না করা
- গরিব-দুঃখী এবং আত্মীয়-স্বজনের হক পূর্ণ না কর।
- কথায় কথায় মিথ্যা বলা
- দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক মাত্রায় মহব্বত সৃষ্টি করা
উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে উপার্জিত অর্থের বরকত হারিয়ে যায়। আমাদের জেনে রাখা উচিত সন্তুষ্টচিত্তে কোন কিছু যে ব্যক্তি সহজে গ্রহণ করতে পারে তার জীবনে বরকত বেড়ে যায়। আমরা সবাই জানি যার যত আছে সে তত বেশি চাই এটি হলো আমাদের জীবনের লোভ লালসা এর বহিঃপ্রকাশ। লোভ-লালসা বশবর্তী হয়ে মানুষ যখন অর্থ উপার্জন করে তখন ওই উপার্জিত অর্থের উপর থেকে বরকত হারিয়ে যায়।
বরকত পূর্ণ জীবন আর বরকত শূন্য জীবন এক হতে পারে না। জীবনের বরকত অর্থের সাথে সম্পৃক্ত নয় অর্থাৎ নিজের জীবনকে বরকতময় করতে হলে বেশি অর্থ উপার্জন করতে হবে বিষয়টা এমন না। বরঞ্চ অল্প অর্থ উপার্জন করেও জীবনে পরিপূর্ণ বরকত হাসিল করা যায়। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সন্তুষ্টচিত্তে নিজ তকদিরে যা আছে সেটাকে মেনে নিয়ে লোভ লালসা পরিত্যাগ করা। মা বাবার খেদমত করা, আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করা ও তাদের হক পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করা,গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করা,জ্ঞানী কে সম্মান করা, অবুঝকে জ্ঞান প্রদান করা।
সর্বোপরি, আমরা যদি আমাদের জীবনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনীতো বিধানের উপর উঠাতে পারি তাহলে আমাদের জীবন থেকে বরকত শূন্যতা উঠে গিয়ে আমাদের জীবন বরকতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বরকতময় জীবন আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নাই যে সে চিন্তা করে না আমার জীবনে কোন অভাব থাকুক। এজন্য আসুন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনীত বিধানের উপর আমাদের জীবনকে উঠায় নিজেদেরকে মিতব্যয়ী হতে শেখায়। সমাজের গরিব- দুঃখী, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাহলে দেখবেন আপনার জীবন বরকতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
আল্লাহ আমাদেরকে তার সকল বিধিবিধানগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর নূরানী তরিকায় পরিচালিত করে জীবনে পরিপূর্ণ বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন।।
আমিন।।
( ইদ্রিস আলী )