সংস্কৃতি মানুষের জীবনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিবাহ প্রথা সেই সংস্কৃতিরই একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ যা ধর্ম দ্বারাও স্বীকৃত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম বৈচিত্র্যময় বিশ্বাস, রীতি-নীতি, আচার প্রথার উপর নির্ভর করে বিবাহ প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের চিন্তা ভাবনা ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রনেও এসব প্রথা গড়ে ওঠে। ঠি তেমনি আয়তনের ও জনসংখ্যার দিক থেকে ২য় বৃহতম আফ্রিকা মহাদেশের অনেক অঞ্চলে কিছু বৈচিত্র্যময় বিবাহ প্রথার প্রচলন দেখা যায়।
ঘানাঃ
আফ্রিকার মহাদেশের ঘানা তে বিয়ের জন্য প্রথমে মেয়ের বাড়ির দরজায় গিয়ে নক করে অপেক্ষা করতে হয়। যদি, নকটি গৃহীত হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কিছু উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়। এরপর ছেলে নিজে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়। তারপর উভয় পক্ষের পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিয়ের বিভিন্ন বিষয় ও শর্তাদি নির্নয় করেন। তাদের আলোচনা পর্ব শেষ হলে, মেয়েকে সেখানে ডাকা হয় এবং তারপর মেয়ের বাবা তিনবার তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, এ বিয়েতে মেয়ের সম্মতি আছে কি না। মেয়ে সম্মতি প্রদান করলে তবেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। এখানে বিয়েতে কোন ধরনের যৌতুকের প্রচলন নেই।
কঙ্গোঃ
ইউরুবা জনগোষ্ঠীতে বিয়ের প্রচলিত রীতির মধ্যে অন্যতম রীতি হলো, চার স্বাদের খাবার পরখ করা। বিয়ের সময় বিবাহে আবদ্ধ যুগলকে চার ধরনের খাবার খেতে দেয়া হয়। যথাঃঝাল স্বাদের জন্য কেইনি ( caynne), টক স্বাদের জন্য লেবু, তিক্ত স্বাদের জন্য ভিনেগার এবং মিষ্টি স্বাদের জন্য মধু। এর তাৎপর্য হলো, তারা মনে করে, এতে করে তাদের উপলব্ধি করানো, বিবাহিত জীবনে যে কোন সমস্যা- সম্ভাবনায়, রোগে- শোকে, বিপদে আপদে, অভাব অনটনে, সুখে দুঃখে সব সময় তারা একে অপরের পাশে থাকবে।
মরক্কোঃ
মরক্কোতে বিয়ের আয়োজনে একটি ‘হেনা’ দিন থাকে। এই দিনে ঐতিহ্য অনুযায়ী, বিবাহযোগ্য মেয়েকে সবুজ রঙ্গের পোশাক পরিধান করগে হয় এবং নিকাচারা( Nekacha) মেয়ের হাতে এবং পায়ের পাতায় ট্যাটু এঁকে দেয়। এই রীতি তাদের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। বিয়ের রাতে খাবারের পর, বর এবং তার পরিবার মেয়েকে বিভিন্ন বিয়ের উপহার দিয়ে থাকে। সেখানে চিনি সুখী জীবনের প্রতীক, দুধ বিশুদ্ধতার প্রতীক এবং কাপতান দেয় যা মেয়েকে পরিধান করতে হয়। খাবারের মেন্যুতে তিনটি আইটেম থাকে যথা প্যাসটিলা (Pastila), মাংস এবং মিষ্টান্ন।
সেনেগালঃ
সেনেগালে বিয়ের সময় একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মেয়েকে গোসল করিয়ে পবিত্র করা হয়। এরপর তাকে ‘ গ্রিস গ্রিস’ নামক একটি হার পরানো হয় অশুভ আত্মা থেকে মুক্ত রাখার জন্য। সাতদিন ধরে এ বিবাহ অনুষ্ঠান চলতে থাকে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো, ‘ওয়ালিমা’। এদিন একটি ষাড়ঁ জবাই কে তার মাংস সবার মাঝে বন্টন করা হয় কিন্তু সদ্য বিবাহিত দম্পতি তা খেতে পারে না।
মাদাগাস্কারঃ
মাদাগাস্কারের বিয়ের রীতি অনুযায়ী, বিয়েতে আগত সবাইকে ‘ফান্ডাসব্যানানা’ নামক মাটির পাত্রে মাংস খেতে দেয়া হয় যা দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করে করা হয়। বর ও কনেকে অবশ্যই কালো শিং এর গুড়া মিশ্রিত মাংস খেতে হয়। এছাড়াও, তাদের ঠান্ডা পানিতে গুটিয়ে থাকতে হয় অশুভ আত্না থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য।
বেনিনঃ
বেনিনের ফুলানি জাতিতে বিয়ে করার আগে ছেলেকে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে মেয়ে পক্ষের লোকেরা তাকে বেড়ধক মারার ঐতিহ্য প্রচলিত রয়েছে। অনেক মারধোর করার পরও যদি ছেলেটি টিকে থাকতে পারে তাহলেই মেয়ের সাথে তারা বিয়ের আয়োজন করে। তাদের বিশ্বাস, সেই আসল পুরুষ, যে এত রকম মারধোর সহ্য করে টিকে থাকতে পারে। এরকম নির্যাতনের কারণে, অনেকে মারাও যায়।
মালিঃ
মালিতে এক অদ্ভুত নিয়ম প্রচলিত যা সভ্য সমাজে আইন বহির্ভুত। সেখানে কোন ছেলে কোন মেয়েকে যদি অপহরণ করে তবে, সেই ছেলের সাথেই অপহরনকৃত মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত মতামত বিবেচনায় আনা হয় না।
ইরিত্রিয়াঃ
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়ায় দুই বিবাহ করা আইনসিদ্ধ ব্যবস্থা। এর পেছনে অবশ্য কাহিনী রয়েছে। ১৯৫৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যুদ্ধে প্রচুর পুরুষ মারা যায়। তাই, জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখতে এ আইন করা হয়।
সর্বোপরি, আফ্রিকা বৈচিত্র্যে মহাদেশ, যার বিভিন্ন অঞ্চল বিভিন্ন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।